Ad0111

পাবনায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এমপির বিরুদ্ধে নৌকার প্রচারণার অভিযোগ

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সমাবেশ করার অভিযোগ উঠেছে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সের বিরুদ্ধে।

পাবনায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এমপির বিরুদ্ধে নৌকার প্রচারণার অভিযোগ

প্রথম নিউজ,পাবনা: পাবনার দোগাছি ইউনিয়নে নৌকার নির্বাচনী বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন সংসদ সদস্য প্রিন্স।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সমাবেশ করার অভিযোগ উঠেছে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সের বিরুদ্ধে। 

শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলতাব মাহমুদ খানের পক্ষে এক নির্বাচনী বর্ধিত সভায় অংশ নেন তিনি। এর আগে রাত ৮টার দিকে সদরের চরতারাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় নৌকাকে বিজয়ী করতে ভোট চান তিনি।

নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী, স্থানীয় নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিসহ সরকারের সুবিধাভোগী কেউই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। গত তিন ধাপের নির্বাচনে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য স্থানীয় ভোটে জড়িয়ে পড়ায় তাদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।

অথচ নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী বর্ধিতসভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলতাব মাহমুদ খান ও চরতারাপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী রবিউল হক টুটুলকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেন। এর আগে বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) সদরের সাদুল্লাপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী রইচ উদ্দিন খানের নির্বাচনী পথসভায় অংশগ্রহণ করে নৌকার পক্ষে ভোট চান তিনি।

তখন তিনি বলেন, ‘হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে দলের সবাইকে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ নৌকাকে বিজয়ী করা ছাড়া আমাদের কোনো গতি নেই। ব্যক্তি দেখে নয়, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৌকা দেখে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বিজয়ের মাসে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর নৌকাকে বিজয়ী করে জননেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকার বিজয়ের বিকল্প নেই।’

ওই নির্বাচনী বর্ধিত সভায় পাবনা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহিন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আলী মর্তুজা বিশ্বাস সনি, যুগ্ম আহ্বায়ক শিবলী সাদিক, দোগাছি ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী আলতাব মাহমুদ খান, সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনুজ্জামান শাহিন, নৌকার প্রার্থী রবিউল হক টুটুলসহ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের নৌকার বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের (সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজমত আলী বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, এমপি সাহেব বিশেষ বর্ধিত সভার নামে নির্বাচনী সভা করে গেছেন। নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। সভায় অন্তত ২ হাজার মানুষ হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী উনি এভাবে তো সভা করতে পারেন না। উনার উপস্থিতিতে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা আমাদের নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে বক্তব্যও দিয়েছেন। যাদের রাজনীতিতে নিয়ে আসছি আমরা তারা আজ আমাদের বিপক্ষে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে এসব কিছুর জবাব জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে দেবে বলে দাবি করেন তিনি।

চরতারাপুর ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সদস্য সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক বলেন, আমার ইউনিয়নে কর্মীসভার নামে নির্বাচনী জনসভা করেছেন স্থানীয় এমপি। কর্মীসভা হলে তো আমরা জানতাম। সুজানগরের বহিরাগত লোকজনকে নিয়ে এসে নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে এমপির মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা করানো হয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে আমরা শঙ্কায় রয়েছি। কয়েক দিন আগেও আমার এক সমর্থককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। তারা খুনের দায়ে অভিযুক্ত হলেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

পাবনা সদর-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

পাবনা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কায়ছার মোহাম্মাদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধিতে উল্লেখ আছে, সরকারের সুবিধাভোগী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না বা অংশ নিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ লিখিতভাবে পাইনি। আপনার কাছে জানলাম। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

পাবনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। একজন এমপি এভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সমাবেশ বা নির্বাচনী অনুষ্ঠানে ভোট চাইতে পারেন না। এ বিষয়ে আমরা এখনও লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে দেখা হবে।

প্রসঙ্গত, আগামী ২৬ ডিসেম্বর পাবনা সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ হবে। ভাড়ারা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াসিন আলমকে (৪০) গুলি করে হত্যা করায় ওই ইউনিয়নে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news