পাটের ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা

গুনে-মানে সেরা ফরিদপুরের পাট দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। তাই এখানকার কৃষকদের ভালো-মন্দ নির্ভর করে পাট আবাদের সাফল্যের ওপর।

পাটের ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা

প্রথম নিউজ, ফরিদপুর: সোনালি আঁশ খ্যাত পাটে বিখ্যাত ফরিদপুর। এ জেলার মধ্যে সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা পাট উৎপাদনে সেরা। গুনে-মানে সেরা ফরিদপুরের পাট দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। তাই এখানকার কৃষকদের ভালো-মন্দ নির্ভর করে পাট আবাদের সাফল্যের ওপর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে পাট। সংসারের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে উৎপাদিত নতুন পাট হাট-বাজারে এনে ভালো দাম না পেয়ে রীতিমতো হতাশ চাষিরা। লাভ তো দুরে থাক উৎপাদন খরচও যেন উঠছে না। ফলে ফলন ভালো হলেও ভালো দাম না পেয়ে হতাশ পাট চাষিরা। পানির অভাবে স্বাভাবিকভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় গুনগত মানও বেশ খারাপ হয়েছে। তারপর আবার কাঙ্খিত দাম না পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি নেই। পাট জাগ দিতে না পারায় সোনালী আঁশ খ্যাত পাট যেন এখন রুপালী আঁশে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সালথা, নগরকান্দা, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারীসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি হাটেই নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। এবার সময় মতো পাট জাগের পানি না পাওয়ায়, অধিকমূল্য দিয়ে ডিজেল চালিত শ্যালো পাম্প দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে জাগ দিতে হয়েছে। অনেকেই পানির অভাবে মাটি খুঁচে পাট জাগ দিয়েছেন। এতে পাট চাষীদের খরচ বেড়েছে কয়েকগুন। নতুন পাট হাটে তুলে চাহিদা মতো দাম না পেয়ে কৃষকদের মুখে হাসি নেই। তাদের অভিযোগ, বর্তমান যে দাম তাতে পাটের এই ভরা মৌসুমে উৎপাদন খরচও উঠছে না।

পাটের বাজার হিসেবে প্রসিদ্ধ ফরিদপুরের কানাইপুরে সপ্তাহে শুক্র ও মঙ্গলবার হাট বসে। তাই প্রান্তিক চাষিরা বিক্রয়ের উদ্দেশে তাদের উৎপাদিত পাট নিয়ে আসে এখানে। এই বাজারে উৎপাদনের ভরা মৌসুমে প্রতি হাটে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার মণ পাট কেনা বেচা হয়। বর্তমানে কানাইপুর হাটে পাটের দাম রয়েছে ২২০০ থেকে ২৮০০ টাকা। তবে এ দামে সন্তুষ্ট নন চাষিরা। এদিকে, পাট ক্রেতাদের ভাষ্য, এবার পাটের গুণগত মান সঠিক নেই। পানি সমস্যার কারণে পাটের রং এবার নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে ভালো দামে পাট কিনতে পারছি না আমরা।

কানাইপুর বাজারের পাট নিয়ে আসা সত্তার মাতুব্বর, কালাম মোল্লা, রুস্তুম আলি, সদানন্দ সহ বেশ কয়েক জন পাট চাষি জাগো নিউজকে বলেন, এবার পাটের আবাদ ও ফলন ভালো হলেও পানির অভাবে পাট জাগ দিতে চরম কষ্ট হয়েছে। মানে খারাপ, ভালো রং হয়নি, খরচ বেড়েছে। যে দরের আশায় পাট নিয়ে হাটে এসেছি তা মিলছে না। পাটের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, নিত্যপণের দাম বেড়েছে, কীভাবে সংসার চলবে তাই ভাবছি।

সালথা উপজেলার গুপিনাথপুর গ্রামের হরিদাস মজুমদার বলেন, গত বছর যে পাট প্রতিমণ সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা বিক্রি করেছি। রং খারাপ হওয়ায় সেই পাট এবার সর্বোচ্চ প্রতিমণ ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকা বিক্রি করছি। তাও ব্যবসায়ীরা নিতে চাচ্ছে না। খারাপ মানের পাটের প্রভাব ভাল মানের পাটেও পড়েছে এবার। ভাল মানের পাট সর্বোচ্চ ২৬০০ থেকে ৩ হাজারের উপরে বিক্রি করতে পারছি না। এতে কাঙ্খিত খরচও উঠবে না। অনেক লোকসান গুণতে হবে।

সাতৈর বাজারের পাট ব্যবসায়ী মো. আতিয়ার রহমান বলেন, গত বছর একমণ পাট ৩৫০০ থেকে ৩৮০০ টাকা পর্যন্ত পাটের দাম ছিল। তেল ও সারের দামও কম ছিল। এতে কৃষকরা মোটামুটি ভাবে চলতে পারছে। তবে এবার পাটের অবস্থায় খুবই খারাপ। পানির অভাবে কৃষকরা সঠিক সময় ঠিকমত পাট জাগ দিতে পারেনি। মাটি খুড়ে ও নোংরা-পচা পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রং কালো হয়ে গেছে। আবার তেল-সার ও দ্রব্যমূল্যের দামও বেশি। তাছাড়া রং খারাপ এসব পাট মিল মালিকরা নিতে চায় না। তারা ভাল মানের পাট নিচ্ছে। যেকারণে পাটের দাম এতো কম। এই দামে পাট বিক্রি করে কৃষকরাও তাদের খরচ উঠাতে পারবে না। আমরা ব্যবসায়ীরাও কাঙ্খিত আয় করতে পারছি না। এ অবস্থায় পাটের দাম নির্ধারণ করে দেওয়াসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পাট কেনা দাবি জানায় তারা।

ময়েনদিয়া বাজারের পাট ব্যবসায়ী ও পরমেশ্বরর্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. মান্নান বলেন, পাটের বাজার হিসেবে ময়েনদিয়া হাটের বেশ সুনাম আছে। প্রান্তিক চাষিরা তাদের উৎপাদিত পাট বিক্রির জন্য সরাসরি এই বাজারে নিয়ে আসেন। কিন্তু এবারের পানি সংকটে পাটের সোনালী রং আসেনি, এতে পাট চাষীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পাট ব্যবসায়ী ফকির বেলায়েত হোসেন বলেন, কানাইপুর বাজার পাটের জন্য একটি বড় বাজার। এখানে সরকারি ও বেসরকারি পাটকল কর্তৃপক্ষের এজেন্ট রয়েছে। তারা চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি পাট ক্রয় করে থাকে। কিন্তু এবারের পাটের ভালো রং না থাকায় চাষিরা ভালো দর পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, জেলায় এবার পাটের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে জেলায় মোট ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। দেশের প্রায় বড় বড় মিলগুলো বন্ধ থাকার কারণেও পাটের দাম তেমন উঠছে না। একই সঙ্গে এবার পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে একই পানিতে বারবার পাট পচানোর কারণে পাটের আঁশের গুণগত মান খারাপ হয়েছে। যে কারণে পাটের দামও কমেছে। এতে কৃষকরাও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom