পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস: ছোট ভুলে বড় ভোগান্তি, টাকা দিলেই সমাধান

 পাসপোর্ট ডেলিভারি নিতে ৩-৪ ঘণ্টা, ছোট ভুলেও আবেদন ফেরত, দালালকে টাকা দিলেই জমা

পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস: ছোট ভুলে বড় ভোগান্তি, টাকা দিলেই সমাধান

প্রথম নিউজ, চট্টগ্রাম: উপরি না দিলে ছোট ভুলের জন্যও বড় ভোগান্তি পোহাতে হয় চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দালালদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পাসপোর্ট অফিসটি। অফিসটিতে প্রতিদিন গড়ে ৪-৫’শ আবেদন জমা পড়ে। সরবরাহও হয় সমসংখ্যক পাসপোর্ট। এই হাজারখানেক সেবাগ্রহীতার কাছ থেকেই টাকা নিতে নানান কৌশলে ওত পেতে থাকেন দালাল চক্রের সদস্যরা।

অভিযোগ রয়েছে, সাধারণভাবে পাসপোর্ট ডেলিভারি নিতে তিন থেকে চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আবার টাকা দিলে মিনিটেই হাজির হয়ে যায় পাসপোর্ট। ছোটখাট ভুলের জন্যও ফেরত দেওয়া হয় আবেদন। কিন্তু দালালদের টাকা দিলেই পরক্ষণে তা জমা হয়ে যায়।

ভোগান্তির এ চিত্র নিত্যদিনের। তবে তা মানতে রাজি নন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটির উপ-পরিচালক তারিক সালমান। তিনি  বলেন, যারা পাসপোর্ট সংশোধন করার জন্য আবেদন করেন, তাদের আবেদন অনলাইনে ফরোয়ার্ড করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনো আবেদনকারীর কাছ থেকে কাজের বিনিময়ে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। কোনো অভিযোগ থাকলে ভুক্তভোগীকে তিনি তার দপ্তরে পাঠানোর পরামর্শ দেন।

তবে সরেজমিনে পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে সেবা গ্রহীতাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের। পাসপোর্ট ডেলিভারি নেওয়ার এবং আবেদন জমা দেওয়ার দীর্ঘলাইন। নগরীর চন্দনপুরা এলাকার মো. শামীম বলেন, আমি ২২ আগস্ট পাসপোর্ট জমা দিয়েছি। আমার পাসপোর্টে নামের একটি বানান ভুল ছিল। আগেরবার পাসপোর্ট করার সময় এনআইডি জমা দেওয়া হলেও পাসপোর্ট অফিস থেকেই সেই ভুল করে দেওয়া হয়েছিল। এখন ভুলটি সংশোধন করতে আমাকে হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর আমার নতুন পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল। আমার যেহেতু পুরোনো পাসপোর্ট আছে, পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয়নি। এরপরও আমার পাসপোর্ট মিলছে না আড়াই মাস ধরে।

প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে থেকে পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকার নুরুজ্জামান। দুপুর সোয়া একটায় তিনি পাসপোর্ট অফিস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। সেসময় তিনি বলেন, সকাল ১০টায় এসেছি। এইমাত্র পাসপোর্ট হাতে পেলাম। এই সোয়া তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসে ঢোকার সময় একটি সিরিয়াল নম্বর দিলে কোথাও বসে থাকতে পারতাম। তাতে কেউ সিরিয়ালের বাইরে পাসপোর্ট নিতে পারতো না। কিন্তু সে ব্যবস্থাও নাই।

আবদুর রহিম নামের আরেক সেবাপ্রার্থী বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় পাসপোর্ট অফিসে এসেছি। সাড়ে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্ট পেয়েছি। সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত একই স্থানে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

শামীম নামের এক ভুক্তভোগী শোনান পাশের বৃদ্ধ আরেক নারীর ভোগান্তির কথা। তিনি বলেন, এক বৃদ্ধ নারী টিপ সই দিয়ে পাসপোর্টের আবেদন নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কাউন্টার থেকে তাকে ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। পরে অফিসের বাইরে এক দালালকে দুই হাজার টাকা দিয়ে পাঠানো হলে নির্ভুল হয়ে যায় আবেদনটি। পরে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তোলার জন্য লাইনে দাঁড় করানো হয়।

পাসপোর্ট অফিসটিতে একদিকে সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি বেড়েছে, অন্যদিকে সাংবাদিক প্রবেশেও রয়েছে কড়াকড়ি। অফিসের প্রবেশপথে চেয়ারে বসে বিভিন্ন জনের পাসপোর্টের তদবির করছিলেন আরিফ নামের এক ব্যক্তি। তিনি বিষয়টি ভিডিও করতে দেখে সামনে এসে প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে চান। প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দিয়ে ওই যুবকের পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে ‘পাসপোর্ট অফিসের ক্যাজুয়াল কর্মচারী’ বলে পরিচয় দেন।

তিনি বলেন, আমি পাসপোর্ট অফিসের ক্যাজুয়াল কর্মচারী। আমার কোনো আইডি কার্ড নেই। এখানে সাংবাদিক প্রবেশ করতে হলে আগে ডিডি (উপ-পরিচালক) স্যারের অনুমতি নিতে হবে। এটি ডিডি স্যার আমাদের বলে দিয়েছেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom