নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

মহাসমাবেশ সফল করতে দলের নেতাকর্মীদের নানা নির্দেশনা দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন দলটির শীর্ষনেতা।

নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

প্রথম নিউজ, অনলাইন: আগামী শনিবার বিএনপি’র মহাসমাবেশ উপলক্ষ্যে রাজধানীতে টানটান উত্তেজনা। নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে দলটি। পুলিশের পক্ষ থেকে বিকল্প ভেন্যু প্রস্তাব চাওয়া হলেও বিএনপি জানিয়েছে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চায় তারা। নয়াপল্টন ঘিরেই নানা প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। মহাসমাবেশ সফল করতে দলের নেতাকর্মীদের নানা নির্দেশনা দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন দলটির শীর্ষনেতা। এ ছাড়া দলের সিনিয়র নেতারাও তৃণমূল নেতাদের প্রতিনিয়ত নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। সরকার পতনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত ধাপের কর্মসূচি নির্ধারণে গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ঘেরাও দিয়ে শেষধাপের লাগাতার কর্মসূচি শুরু হবে। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এদিকে মহাসমাবেশসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ সকাল ১১টায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ওদিকে বিএনপি’র মহাসমাবেশকে ঘিরে রাজধানীসহ জেলায় জেলায় চলছে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান। রাতভর বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গতকাল বিকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসিয়েছে র‌্যাব-পুলিশ। জেলা-উপজেলার দূরপাল্লার বাসস্টেশনগুলোতেও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনদিনে দলটির ১২ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। 

পুলিশের গ্রেপ্তার-তল্লাশির মাঝেই ঢাকায় ঢুকছেন বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা। আবাসিক হোটেল ও মেসে না থেকে পরিচিতজন, বন্ধু-বান্ধবের অফিস ও আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়িতে থাকছেন। এদিকে গ্রেপ্তার এড়াতে দলের নেতাকর্মীদের কৌশলী অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশান চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত একটি যোগদান অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়। দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানিয়েছেন, আগামী শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপি শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করবে। কিন্তু সরকার বাধা দিলে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হবে। সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করে পরবর্তী কর্মসূচি দেয়া হবে। তবে সব কর্মসূচিই দেয়া হবে গণতান্ত্রিক।         

ডিএমপির চিঠির জবাবে যা বললো বিএনপি: ২৮শে অক্টোবরের মহাসমাবেশের জন্য নয়াপল্টনের বিকল্প দুটি ভেন্যুসহ সাতটি তথ্য জানতে চেয়ে বিএনপিকে চিঠি দিয়েছিল পুলিশ। চিঠিতে সমাবেশে লোকসমাগমের সংখ্যা, সময়, বিস্তৃতি, কোন কোন স্থানে মাইক লাগানো হবে, অন্য দলের কেউ উপস্থিত থাকবেন কি না-সহ সাতটি তথ্য জানতে চাওয়া হয়। গতকালই বিএনপি’র পক্ষে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ফিরতি চিঠি দিয়ে সাত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। জবাবে বলেছেন, ২৮শে অক্টোবর নয়াপল্টনেই করতে চায় বিএনপি। বিকল্প কোনো স্থানে তাদের পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। ওইদিনের সমাবেশে এক থেকে সোয়া লাখ লোক হতে পারে। এ ছাড়া বিএনপি’র সমাবেশ ওইদিন বেলা দুইটায় শুরু হবে এবং মাগরিবের আজানের আগে শেষ হবে। সমাবেশটি পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় ও পূর্বে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বিস্তৃৃত হতে পারে। বিজয়নগর মোড় ও ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত কিছুদূর অন্তর অন্তর মাইক লাগানো হবে। শনিবারের সমাবেশে বিএনপি’র নেতারা ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন না। সমাবেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দলের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকেরা দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানায় বিএনপি। এসব  স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা হবে ৫০০। 

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, আমরা বারবার বলেছি, আমাদের সমাবেশ হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। আর সরকার সংঘাতের উস্কানি ও হুমকি দিচ্ছে। তারা বলছে লাঠি নিয়ে যাবে। তাদের সাধারণ সম্পাদক কয়েকদিন আগে বলেছেন, শাপলা চত্বরে হেফাজতের পরিণতি হবে। অর্থাৎ আঘাতের মধ্যদিয়ে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে তারা।

সকাল থেকেই আসবেন নেতাকর্মীরা: শনিবার সকালেই নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেভাবে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা পাঠানো হচ্ছে কোন স্পটে কোন সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন জানান, দক্ষিণ যুবদলের ৩৫ হাজার নেতাকর্মী রয়েছে। তারা সরকারি দল ও পুলিশের যেকোনো বাধা উপেক্ষা করে মহাসমাবেশে অংশ নেবে। যেকোনো মূল্যে মহাসমাবেশ সফল করতে নেতৃত্ব দেবে যুবদল। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েল জানান, মহাসমাবেশ ঘিরে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৪টি ওয়ার্ড থেকে ৫০ হাজার নেতাকর্মী কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। আমাদের টার্গেট প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে দুই হাজার নেতাকর্মী। তিনি বলেন, আমাদের নয়াপল্টনমুখী থাকতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মানবজমিনকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু এখন সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে। দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। 

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মানবজমিনকে বলেন, সমাবেশ করার দরকার করবো। আমরা মারামারি করবো না। অস্ত্রপাতিও যোগাড় করবো না। লগি-বৈঠা নিয়ে নামবো না। এটা তাদের (আওয়ামী লীগ) হাতেই মানায়। তিনি বলেন, আন্দোলনের কর্মসূচি ধারাবাহিক থাকবে, চূড়ান্ত সফলতা না আসা পর্যন্ত। কোনোটাই সংবিধানবিরোধী না। গণতান্ত্রিকভাবে যা আছে তাই করবো।