বায়তুল মোকাররম ঘিরে আওয়ামী লীগের ব্যাপক প্রস্তুতি
গতকাল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেখা যায় সমাবেশ উপলক্ষ্যে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সমাবেশের স্থান পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্পষ্ট বার্তা- ‘সমাবেশ বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটেই হবে। অনলি ওয়ান ভেন্যু আই ম্যানশন।’ অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ এক চিঠিতে ডিএমপিকে জানিয়েছে- সমাবেশ শুরুর একদিন আগে ভেন্যু পরিবর্তন দুরূহ। তাই বায়তুল মোকাররমে-ই হবে আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ। গতকাল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি। আওয়ামী লীগ ছাড়াও অঙ্গ সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। তাদের সরকারের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
নেতাকর্মীরা বলেন, আওয়ামী লীগের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। তবে বিএনপিসহ বিরোধীরা সমাবেশের নামে কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চালালে দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকেও দেখা গেছে। তারা সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। বিকালে সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের মরদেহ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনা হলে সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান নেতাকর্মীরা। এ সময় মরহুমের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে। অনলি ওয়ান ভেন্যু আই ম্যানশন। যেটা বলেছি সেটাই। অন্যদিকে বিএনপি’র মহাসমাবেশের ভেন্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কিছু বলতে চাই না। সেটা পুলিশ জানে। অনুমতি দেয়ার মালিক পুলিশ। অনুমতি দেয়ার মালিক যারা তারা বুঝবে আর বিএনপি বুঝবে। এখানে আমরা বলার কে? আমরাও অনুমতি চেয়ে নিয়েছি। ওবায়দুল কাদের বলেন- আমি নেগেটিভ কিছু বলতে চাই না। আমি যা বলেছি, ভালোটা বলেছি। এর আগে সকালে সেতু ভবনে তিনি বলেন, বিএনপি প্রকাশ্যে সহিংসতার হুমকি দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ শান্তি চায়। তবে শান্তি সমাবেশে আক্রমণ হলে নেতাকর্মীরা বসে থাকবেন না। জনগণের জানমাল রক্ষায় আওয়ামী লীগ বদ্ধপরিকর। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি যদি গায়ে পড়ে আমাদের ওপর আক্রমণ করতে আসে, তখন তো আমরা চুপচাপ বসে থাকবো না। আমাদের কর্মীরা কি তখন শান্ত থাকবে? আমরা বিএনপি’র সভাস্থলে হামলা করতে যাবো না। কিন্তু আমাদের সমাবেশে হামলা করলে আমরাও বসে থাকবো না। পাল্টা হামলা করবো।
তিনি বলেন, আমরা বিএনপি’র সমাবেশে হামলা করিনি, করবোও না। কারণ, আমরা সরকারে আছি। আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। নির্বাচনের আগের পরিবেশটাও শান্তি চাই। আমরা দেশ চালাচ্ছি, তাই অশান্ত পরিবেশ হতে দেবো না। এদিকে ডিএমপি’র চিঠির জবাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ আওয়ামী লীগের সমাবেশ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এতে তিনি জানান, এ মুহূর্তে সমাবেশের বিকল্প ভেন্যু প্রস্তুত করা দূরূহ। তাই বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে-ই আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। পল্টন থানা ওসি বরাবর দেয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, সমাবেশে লোকসমাগম সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে এবং সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হবে; সমাবেশে প্রায় ২ লাখ লোক হবে; সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে পল্টন মোড়, জিপিও মোড়, শিক্ষা ভবন, গোলাপ শাহ মাজার, নতুন ভবন, নবাবপুর সড়ক, মহানগর নাট্যমঞ্চ, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল সড়ক এবং স্টেডিয়াম পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, সমাবেশে বক্তব্য প্রচারের জন্য উল্লিখিত স্থানগুলোতে মাইক স্থাপন করা হবে; সমাবেশে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মী সমর্থক, নারী সংগঠন, তরুণ প্রজন্ম ও সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করবে; সমাবেশে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে। আর স্থান সম্পর্কে বলা হয়, ২৮শে অক্টোবর শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এমতাবস্থায় স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ভেন্যুতে নতুনভাবে সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ দুরূহ ব্যাপার। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ২৮শে অক্টোবর, শনিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের অনুষ্ঠানস্থল ও তার সংলগ্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের বিনীত অনুরোধ করা হয়েছে।