নয়াপল্টনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, পুরো এলাকা থমথমে
শনিবার (২৮ অক্টোবর) সরেজমিনে কাকরাইল এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, পুরো এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এগোচ্ছেন কাকরাইলের দিকে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে চলমান রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিএনপির সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনার সূত্রপাত। প্রায় ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। পরে পুলিশ পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। তবে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিএনপিকর্মীরা মাঝে মাঝেই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন। পুলিশও পাল্টা ছররা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ছে।
এদিকে রাজধানীর কাকরাইলে বিএনপি-পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে আগুন দেওয়া হয়েছে। কাকরাইল অডিট ভবনের সামনে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে বিজিবিও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ সিনিয়র কয়েকজন নেতা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন। অফিসের নিচে অবস্থান করছিলেন নেতাকর্মীরা। দুপুর আড়াইটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান নেয় কার্যালয়ের সামনে। এরপর ৩টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়।
বিকাল ৪টার দিকে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিলে তাদের সরে যেতে বলা হয়। এজন্য তাদের সময় দেওয়া হলেও তারা সরে যায়নি। এসময় পুলিশ তাদের উঠিয়ে দিতে গেলে তারা অতর্কিতে পুলিশের ওপরে হামলা করে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত পুলিশের কতজন সদস্য আহত হয়েছে এ বিষয়ে তথ্য নাই। এছাড়া কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, তাদের রাস্তা থেকে উঠিয়ে দিতে গেলে শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। তখন তো এখানে সংঘর্ষ হবেই।
এদিকে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে হঠাৎ করেই বিএনপির কার্যালয়ের উল্টো পাশ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়লে বিস্ফোরণে পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। পুরো নয়া পল্টন, ফকিরাপুলসহ আশপাশের এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কিছুক্ষণ পরপর হঠাৎ করেই বিএনপি নেতাকর্মীরা গলি থেকে বেরিয়ে এসে ককটেল নিক্ষেপ করছে। এ সময়ে পুলিশকেও পাল্টা আক্রমণ করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত এলাকায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। আর বিএনপির কর্মীরা বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়েছেন। রাজপথে বের হয়ে এসে ইটপাটকেল ছুঁড়ছেন তারা। টিয়ার শেলের ধোঁয়ায় পুরো এলাকা ছেয়ে গেছে। পুলিশ দফায় দফায় টিয়ার শেল ছুঁড়ছে। এরসময় ফকিরাপুল পানির ট্যাংকের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
সরেজমিনে থাকা একাধিক সংবাদকর্মী জানিয়েছের, বিকাল পৌনে ৪টা পর্যন্ত বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত ও একজন পুলিশ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে। সাংবাদিক ও বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুটি অ্যাম্বুলেন্স আসলে পুলিশ দাঁড়াতে না দিয়ে বের করে দেয়। এসময় গেটে আসা নেতাকর্মীদের ওপরে আবার ছররা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। কার্যালয়ের মধ্যে বেশ কয়েকজন আহত অবস্থায় আছেন বলে জানান বিএনপির কর্মীরা।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় একাধিক সাঁজোয়া যান, প্রিজন ভ্যান এবং অতিরিক্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করে পুলিশ। ফকিরাপুল, কাকরাইল এলাকাও তারা টহল দেয়। বিকাল ৪টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কতজন আহত হয়েছেন।
বুধবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে সাংবাদিকদের বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ বানচাল করতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। যতই হামলা করা হোক আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।