নিষিদ্ধ জালে হুমকিতে চর বিজয়ের জীববৈচিত্র্য

প্রশাসন মাঝেমধ্যে অবৈধ জাল ও অসাধু জেলেদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও তা খুব বেশি কাজে আসছে না।

নিষিদ্ধ জালে হুমকিতে চর বিজয়ের জীববৈচিত্র্য

প্রথম নিউজ, পটুয়াখালী: বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা চর বিজয়ে অবৈধ জাল দিয়ে শিকার করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তার সঙ্গে বিভিন্ন জলজ প্রাণীও এই জালে আটকা পড়ে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে দ্বীপের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অবৈধ জাল ও অসাধু জেলেদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও তা খুব বেশি কাজে আসছে না।

সম্প্রতি সময় কুয়াকাটার এক জেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চর বিজয় নিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করেন। যে ভিডিওতে দেখা যায়, নিষিদ্ধ চরগড়া জাল ব্যবহার করে মাছ শিকারের চিত্র। এতে স্পষ্ট করা হয়, অবৈধ ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহারের কারণে লাখ লাখ মাছের পোনা মারা পরছে। বড় মাছগুলো অসাধু জেলেরা ধরে নিয়ে গেলেও ছোট ছোট মাছগুলো চরেই পড়ে থাকছে।

ওই ভিডিওটি ফেসবুকে প্রকাশের পর পরই আলোচনায় আসে চরে অবৈধভাবে মাছ শিকারের বিষয়টি। যার ধারাবাহিকতায় বেশ কয়েকটি অভিযান চালায় মৎস্য বিভাগ, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যরা। তবে এর পরও বন্ধ হয়নি মাছ শিকার। প্রতিনিয়ত চলছে অবৈধ পন্থায় মাছ শিকারের এই প্রক্রিয়া।

গত কয়েক বছর আগে কুয়াকাটা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোনে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠে বিশাল এক চর। যার নামকরণ করা হয় ‘চর বিজয়’। ১০ হাজার একরের বেশি এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা এই চরে এখন কোনো গাছপালা কিংবা বসতি গড়ে ওঠেনি। ফলে অসাধু কিছু জেলেরা নিষিদ্ধ চরগড়া জালসহ ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে চরে মাছ শিকারের মহাউৎসবে মেতে উঠেছেন। এসব জালের কারণে চরে ঘুরে বেড়ানো লাখ লাখ লাল কাঁকড়া, আর পরিযায়ী পাখির অবাধ বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সরেজমিনে চর বিজয় ঘুরে দেখা যায়, সুন্দরবন থেকে ছোট ছোট গাছ কেটে তা দিয়ে খুঁটি তৈরি করে পুরো চরের পাশে পুঁতে রাখা হয়েছে। ভাটার সময় জালগুলো মাটির সঙ্গে মিশে থাকলেও পূর্ণ জোয়ারে জালগুলো খুঁটির মাথায় তুলে রাখা হয়। এতে করে জোয়ারের সময় চরে আসা মাছ এবং মাছের পোনাসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী এই জালে আটকা পড়ে। প্রতিবছর চরে এভাবে মাছ শিকারের প্রবণতা বাড়ছে। তবে, অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক নেতারা এসব জেলেদের বিভিন্ন সময় আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে অবৈধভাবে সুবিধা নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেলে জানান, এবারও তিন লাখ টাকা দিয়ে এই চরে মাছ শিকার করতে হচ্ছে। তবে কে বা কারা এই টাকা নিচ্ছেন তাদের নাম প্রকাশ করেননি তারা। এদিকে, অসাধু এই জেলেদের বিরুদ্ধে এরইমধ্যে পটুয়াখালী মৎস্য বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় বেশকিছু অভিযান চালিয়েছে বলে জানান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম ইসলাম। তিনি বলেন, এরইমধ্যে ১১ জন জেলেকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি চরে পুঁতে রাখা গাছের খুঁটি কেটে দেওয়া এবং অবৈধ জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

তবে জনবল ও সাগরে অভিযানের জন্য নিজস্ব নৌযান না থাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা কিংবা সমুদ্র এলাকায় অভিযানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না বলেও স্বীকার করেন এই মৎস্য কর্মকর্তা। নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধ করার পাশপাশি অবৈধ পন্থায় নতুন এই চরে মাছ শিকার বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের স্বদিচ্ছার কথাও বলছেন মৎস্যখাত সংশ্লিষ্টরা।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom