নগদ টাকা নেই একরামুলের, ব্যাংকে জমা ২ কোটি ১৮ লাখ
প্রথম নিউজ, নোয়াখালী: গত ১৫ বছরে নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি) একরামুল করিম চৌধুরীর সম্পদ না বাড়লেও বার্ষিক আয় বেড়েছে দ্বিগুণ। ব্যাংকে জমা রয়েছে ২ কোটি ১৮ লাখ ৪ হাজার ৬৮৮ টাকা। তবে নেই কোনো নগদ টাকা। একইসঙ্গে তার স্ত্রী ও নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলির নামেও নেই স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কিংবা কোনো টাকা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে গিয়ে মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে দাখিল করা একরামুল করিম চৌধুরীর হলফনামা এবং নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় একরামুল করিম চৌধুরী বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৮৮ লাখ ১১ হাজার ৯৩২ টাকা। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন এক কোটি ৬৭ লাখ ৮ হাজার ৫৮৭ টাকা। অর্থাৎ গেল ১৫ বছরে (তিন সংসদ মেয়াদে) তার আয় বেড়েছে দ্বিগুণ।
অপরদিকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি অস্থাবর সম্পদের হিসেব দিয়েছিলেন ৯ কোটি ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৬৮ টাকা। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি দেখিয়েছেন ৭ কোটি ৪৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৭৮ টাকা। অর্থাৎ তার বর্তমান অস্থাবর সম্পদ কমেছে প্রায় ২ কোটি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় একরামুল করিম উল্লেখ করেন, তার আয়ের প্রধান উৎস ব্যবসা। বছরে কৃষিখাত থেকে আয় দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান ও অন্যান্য ভাড়া বাবদ পান ২০ লাখ ৩১ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে আয় এক কোটি ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৭ টাকা এবং সংসদ সদস্য হিসেবে ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা বেতন-ভাতা পান।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে দুই কোটি ১৮ লাখ ৩৪ হাজার ৬৮৮ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৮৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেল রয়েছে এক কোটি ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার ২০২ টাকার। এছাড়া ৯৩ হাজার ৬০০ টাকার স্বর্ণালঙ্কার, তিন লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী, চার লাখ ১৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র ও তিন কোটি এক লাখ ৪৮ হাজার ৬৮৮ টাকার অন্যান্য সম্পদ রয়েছে তার।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে এক কোটি ৩০ লাখ ৫৬ হাজার ২৮০ টাকার কৃষিজমি, ১১ লাখ ২৯ হাজার টাকার অকৃষি জমি, ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৩ হাজার ৩১০ টাকার দালান, ১৩ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ৮৩৫ টাকার বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ রয়েছে ১১ হাজার টাকার।
তবে হলফনামায় তিনি তার ওপর নির্ভরশীল ও স্ত্রীর নামে কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ করেননি। তার স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলী বর্তমানে কবিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় একরামুল করিম উল্লেখ করেন, তার আয়ের প্রধান উৎস ব্যবসা। বছরে কৃষিখাত থেকে আয় দুই লাখ ১৩ হাজার ৯২০ টাকা, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান ও অন্যান্য ভাড়া বাবদ পান ১৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে আয় দুই কোটি ৪৯ হাজার ৭৫০ টাকা এবং সংসদ সদস্য হিসেবে ২২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ টাকা বেতন-ভাতা পান। অন্যান্য থেকে আয় ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ২২১ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ/এফডিআর চার কোটি ২০ লাখ ৯৫ হাজার ২৪২ টাকা। বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ছিল দুই কোটি ৮৫ লাখ ৬২ হাজার ২৮২ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ চার কোটি ৬১ লাখ ৮৯ হাজার ৯২৩ টাকা। বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেল ছিল এক কোটি ৬০ লাখ ৯০ হাজার টাকার। এছাড়া ৯৩ হাজার ৬০০ টাকার স্বর্ণালঙ্কার, তিন লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী, চার লাখ ১৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র ছিল তার।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ১১ লাখ ২৯ হাজার টাকার কৃষিজমি, ৫টি দালান, যার আর্থিক মূল্য ১০ কোটি ২০ লাখ ৩৩ হাজার ৩১০ টাকা ও অন্যান্য সম্পদ ১০ কোটি ৭১ লাখ ৬৯ হাজার ৫১৭ টাকার।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় একরামুল করিম উল্লেখ করেন, বছরে কৃষিখাত থেকে আয় এক লাখ ২৮ হাজার ৩৫২ টাকা, শেয়ার ও বাংক আমানত থেকে পান ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৯ টাকা এবং চাকরি থেকে পান ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ছিল ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৮৪ হাজার ৯৩৬ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৩৪ লাখ ৩৮ হাজার ২৮ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানি শেয়ার ছিল এক কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেল রয়েছে এক কোটি ৬০ লাখ ৯০ হাজার টাকার। এছাড়া ৯৩ হাজার ৬০০ টাকার স্বর্ণালঙ্কার, তিন লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী, চার লাখ ১৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র ছিল তার।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ১১ লাখ ২৯ হাজার টাকার কৃষিজমি। অকৃষি জমি থেকে আয় এক কোটি টাকা। ৩টি দালান, যার আর্থিক মূল্য পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ ২৩ হাজার ৩১০ টাকা ও অন্যান্য সম্পদ রয়েছে এক কোটি ৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকার।
নবম দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় একরামুল করিম উল্লেখ করেন, বছরে কৃষিখাত থেকে আয় ৬৫ হাজার ৯৫০ টাকা ও ব্যবসা থেকে পান ৮৭ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮২ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ছিল ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩০৯ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৮১৯ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেল ছিল পাঁচ কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ৫৪০ টাকার। এছাড়া ৯৩ হাজার ৬০০ টাকার স্বর্ণালঙ্কার, ৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র ছিল তার।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে ১১ লাখ ৯৭ হাজার টাকার কৃষিজমি। অকৃষি জমি থেকে আয় ১৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। দালানের আর্থিক মূল্য ১ কোটি ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অন্যান্য সম্পদ ছিল ১৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকার।
জানা যায়, এবার নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনে একরামুল করিম চৌধুরীর পাশাপাশি আরও নয়জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম দাখিল করেছেন। ঋণ খেলাপির অভিযোগে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানসহ চারজনের মনোনয়ন বাতিল হয়।
বৈধ প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন, জাতীয় পার্টির মোবারক হোসেন আজাদ, জাকের পার্টির মো. সোহরাব উদ্দিন ও ইসলামি ফ্রন্টের মো. আবদুল আলীম।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালী-৪ আসনে ৯ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন এবং ৫ জন বৈধ প্রার্থী হন। ঋণ খেলাপির অভিযোগে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানসহ চারজনের মনোনয়ন বাতিল হয়। নোয়াখালীর মোট ৬ আসনে ৫৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৮ জনের মনোনয়ন বাতিল হয় এবং ৩৭ জনের মনোনয়ন বৈধ হয়।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর। মনোনয়ন ফরম বাছাই হয় ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করতে হয়। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে।