ধ্বংসের মুখে পড়েছে কীটপতঙ্গ, খাদ্য সংকটে পড়বে ৭.৫ বিলিয়ন মানুষ

খাদ্য সংকটে পড়বে ৭.৫ বিলিয়ন মানুষ, পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে পোকামাকড়

ধ্বংসের মুখে পড়েছে কীটপতঙ্গ,  খাদ্য সংকটে পড়বে ৭.৫ বিলিয়ন মানুষ
ধ্বংসের মুখে পড়েছে কীটপতঙ্গ, খাদ্য সংকটে পড়বে ৭.৫ বিলিয়ন মানুষ

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর কিছু অংশে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে পোকামাকড়। ফলে ধ্বংসের মুখে পড়েছে কীটপতঙ্গের বাস্তুতন্ত্র। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই পৃথিবী থেকে চূড়ান্ত বিদায় নেবে পোকামাকড়। আর তখনই খাদ্য সংকটে পড়বে পৃথিবীর ৭.৫ বিলিয়ন মানুষ। বুধবার প্রকাশিত ব্রিটেনভিত্তিক গবেষণাপত্র নেচার জার্নালের এক প্রতিবেদনে এমনই আশঙ্কা করেছেন প্রকৃতিবিজ্ঞানীরা। সিএনএন।

গবেষকরা ছয় হাজারের বেশি অবস্থানের জন্য ২০ বছরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন। প্রজাপতি মথ, ড্রাগনফ্লাই, ফড়িং ও মৌমাছিসহ প্রায় ১৮ হাজার কীটপতঙ্গের প্রজাতি অধ্যয়ন করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু সংকটের তীব্রতা পৃথিবীর কৃষি খাতের ওপর এক উদ্বেগজনক যোগসূত্র তৈরি করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেসব অঞ্চলে উষ্ণায়ন বেশি সেসব অঞ্চলে পোকামাকড় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে-যেখানে বিলীন হয়েছে ২৭ শতাংশ প্রজাতি।

সমীক্ষার প্রধান লেখক ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষক শার্লট আউথওয়েটের মতে, স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র, পরাগায়ণ এবং খাদ্য উৎপাদনে পোকামাকড়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে এই ফলাফলগুলো ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, পোকামাকড়ের এই নিশ্চিহ্ন হওয়ার প্রবণতা মানব স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।

ব্রিটেনের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভ গলসন সিএনএনকে বলেন, ‘আমাদের ফসলের তিন চতুর্থাংশ পোকামাকড়ের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে এই প্রবণতায় ফসল উৎপাদন মারাত্মক আকারে ব্যাহত হবে। তিনি বলেন, ‘পোকামাকড়ের ভূমিকা ছাড়া ৭.৫ বিলিয়ন খাদ্য উৎপাদন হয় না।’

ইউনিভার্সিটি অব রিডিং-এর ফলিত বাস্তুবিদ্যার অধ্যাপক টম অলিভার (এই গবেষণায় জড়িত নন) এক বিবৃতিতে বলেন, বিজ্ঞানীরা এখনো জানেন না যে, কখন বা কোন সময়ে পোকামাকড়ের সংখ্যা একটি বিন্দুতে পৌঁছতে পারে। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যি যে, পোকামাকড়ের ক্ষতির ফলে পুরো বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে এবং এ থেকে উত্তরণের পথ আমার জানা নেই। এটাও জানি, প্রজাতি হারানোর মানেই হলো একটি বিপর্যকর পরিণতির অপেক্ষায় থাকা।’

গবেষকরা বলেছেন, আধুনিক কৃষিব্যবস্থাও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। অতিমাত্রায় কীটনাশক এবং ফসলের উচ্চফলনের আকাক্সক্ষায় রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে পোকামাকড়ের একটা অংশের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। স্থানীয় জলবায়ু পরিবর্তন আর তাপমাত্রার চরমভাব পোকামাকড়ের বৈচিত্র্যকে উদ্বেগজনকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

এর আগে ২০১৯ সালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিদায় নিচ্ছে কীটপতঙ্গ। মানুষের বিপদঘণ্টা বাজিয়ে দুনিয়াজুড়ে নাটকীয় হারে কমে যাচ্ছে পোকামাকড়। ‘বায়োলজিক্যাল কানজারভেশন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত নিবন্ধে আশঙ্কা করা হয় পরবর্তী দশকে ৪০ শতাংশ হারে কমে যাচ্ছে ক্ষুদে প্রজাতিরা। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী মৌমাছি, পিঁপড়া, গুবরেপোকারা অন্যান্য স্তন্যপায়ী, পাখি ও সরীসৃপের তুলনায় আট গুণ হারে কমে যাচ্ছে।

কী হবে পোকামাকড় বিদায় নিলে খাদ্য শৃঙ্খল বিপর্যয় : অধিকাংশ অ-সামুদ্রিক খাদ্য শৃঙ্খল নির্ভর করে পোকামাকড়ের ওপর। প্রায় সব পাখিই পোকামাকড় খায়। এমনকি যারা প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে বীজ খায় তারা এখনো তাদের বাচ্চাদের পোকা খাওয়ায়। একটি হাড়গিলে ছানাকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত কমপক্ষে দুই লাখ পোকা খাওয়াতে হয়। পোকামাকড় উদ্ভিদের পদার্থ ভেঙে ফেলে এবং মাটিতে পুষ্টির পুনর্ব্যবহার করতে সাহায্য করে। কোনো পোকামাকড় ছাড়াই অধিকাংশ পাখি এবং উভচর প্রজাতি দুই মাসের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

পরাগায়ণে বিপত্তি : বিশ্বের খাদ্যশস্যের মধ্যে ৭৫ শতাংশই পোকামাকড়ের মাধ্যমে পরাগায়িত হয়। পোকামাকড় ছাড়া আমরা এখনো অনেক খাবার জন্মাতে পারতাম- কিন্তু পেঁয়াজ, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, মরিচ, টমেটো, কফি, কোকো এবং অধিকাংশ ফলই আমাদের খাবারের মেনু থেকে বিলীন হবে। সূর্যমুখী এবং রেপসিড তেল বলে কিছু থাকবে না। সিন্থেটিক ফাইবারের চাহিদাও বাড়বে, লিনেন-এর জন্য তুলা এবং শন উভয়েরই পরাগায়ণের জন্য মৌমাছির ওপর নির্ভর করতে হয়।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom