দু:শাসনের যাতাকলে পড়ে স্বভূমির সীমানায় কেউ শান্তিতে নেই: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপিরা সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন ঈদুল-আযহার প্রাক্কালে জনজীবন নাকাল অবস্থা বিরাজ করছে। একদিকে যানজটে অসহনীয় ভোগান্তি অন্যদিকে সকল প্রকার খাদ্য পন্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। ভোটার বিহীন সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দল ও ভিন্নমতের মানুষদের উপর দমনপীড়নে যতোটা দক্ষ ততোটাই ব্যর্থ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামসহ জনজীবনের সকল প্রকার ভোগান্তি কমাতে বিষ্ময়কর মুদ্রাস্ফীতি নিম্ন ও মধ্যভিত্তের স্বল্পআয় গিলে খাচ্ছে। জনম্যান্ডেটহীন আওয়ামী সরকার সিন্ডিকেট-হিতৈষী সরকার বলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দ্রুত বেগে ধাবমানতা আটকাতে পারছেনা। অবৈধ সরকারের দু:শাসনের যাতাকলে পড়ে স্বভূমির সীমানায় কেউ শান্তিতে নেই। আজ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী আহমেদ কলেন, সিন্ডিকেট বান্ধব সরকারের বানিজ্যমন্ত্রী ‘সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সংকট তৈরি হবে’ যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে সিন্ডিকেটে জড়িতরা আরো বেশি স্ফীতকায় ও ক্ষমতাবান হয়ে উঠবে, আরো বেশি প্রনোদিত ও উৎসাহিত হয়েছে। আসলে দেশবাসী সকলেই জানে যে, সিন্ডিকেটের সাথে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাই জড়িত, সেজন্যই বানিজ্যমন্ত্রীকে সিন্ডিকেটের পক্ষে পক্ষাবলম্বন করতে হয়েছে।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, সারা বিশ্বে বর্তমানে খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও দেশে কেন লাগামহীন অবস্থা ? কারণ যে দেশের অর্থনীতি, টাকা পাচার আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হরিলুটের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত সেখানে খাদ্যপণ্যের লাগাম টানা যায় না। মেগাদূর্নীতির ভাবধারা থেকে উৎসারিত তথাকথিত মেগা উন্নয়ন করতে গিয়ে মানুষকে কিনতে হচ্ছে ছোট মুরগী, ছোট ডিম, ছোট সাবান, ছোট রুটি। পাশাপাশি চাল, চিনি, মাংস ও সবজীর ওজন কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ গরীব মানুষের আয় থেকে প্রয়োজনীয় পরিমান খাদ্যপণ্য কিনতে পারছে না। সরকারের বাজেট পূর্বের বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেলেও মধ্যম ও ¯^ল্প আয়ের মানুষদের ব্যক্তিগত বাজেট যথেষ্ট পরিমানে হ্রাস পেয়েছে।
মধ্যম ও স্বল্প আয়ের মানুষ দিশেহারা, ভুক্তভোগী মানুষ বোবা কান্নায় গুমরে মরছে। সরকার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাই দিয়ে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ বলে চেঁচিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ সেই যুদ্ধ যে অঞ্চলে হচ্ছে সেই ইউরোপে জিনিসপত্রের দাম পূর্বের তুলনায় অনেক হ্রাস পেয়েছে। অথচ অনেক দূরে বাংলাদেশে তা আকাশ স্পর্শ করছে। আর ডিম, মাছ, মাংসতো আর ইউক্রেন থেকে আসে না। আসলে লুটপাটের সিন্ডিকেটের দুষ্টচক্রকে আড়াল করতেই যুদ্ধের অজুহাত দেয়া হচ্ছে।
সরকার গরীব ও মেহনতি মানুষকে পিষ্ট করার নীতির কারণেই দেশের শতকরা ১০ ভাগ ধনীর হাতেই দেশের মোট আয়ের ৫০ ভাগের কাছাকাছি আয়।
তিনি বলেন, গত ৬ বছরে শিল্পেখাতে কর্মসংস্থান কমেছে। পাশাপাশি শ্রমিকদের মজুরীও কমেছে। এমন অবস্থায় চরম মুদ্রাস্ফীতিতে অসহায় মধ্যম ও নি¤œ আয়ের মানুষরা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক খাবার কিনতে পারছে। এরা লুট ও টাকা পাচার নীতির কারণে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বানিয়েছে এক শ্রেনীর মানুষকে।
রিজভী বলেন, বিদ্যমান অর্থনীতির এই নৈরাজ্যের মধ্যে এবারের কোরবানীর ঈদ পালিত হতে যাচ্ছে। খাদ্যপণ্যের অসহনীয় দাম, আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি। মানুষের ঈদ আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। গত কয়েক মাসের মধ্যে চাল, চিনি, ডাল, শাক-সবজীর দামের বৃদ্ধি অনেক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। পেঁয়াজ ও কাচা মরিচসহ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম গ্যালাক্সিতে পৌঁছেছে। যার কারণে এবার পশুর হাটে তেমন বেচা-বিক্রি নেই, পশুরহাট জমে ওঠেনি। স্বভূমির সীমানায় কেউ শান্তিতে নেই। বানিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রভূত্বের ও জনগনকে অধীন করে রাখার প্রকাশ পায়। এরা সহযোগীতা ও সামাধানের বৃত্ত বি¯ৃÍত না করে প্রভুর ন্যায় আচরণ করছে বলেই জনগণ এক অবর্ননীয় সংকটের মধ্যে পরেছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, এই ঈদ আনন্দর মধ্যে সরকারী নিপীড়ণের কোন কমতি নেই। অসহিষ্ণুতা, সীমাহীন লোভ আর উদ্ধত রাষ্ট্রশক্তির আশ্রয় করে শুধুই একটি হিংসার বিকৃত রূপ দেখা যায় সরকারের আচরণে। ঈদের প্রাক্কালেও হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্বেও আমাদের কারাবন্দী নেতাদের মুক্তি দেয়া হয়নি। গায়েবী মামলা অব্যহত চলছে। সারাদেশে পুলিশের ছত্রছায়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের চলছে নারকীয় আক্রমন। তিনি কারাগারে আটক সকল নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।