দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার, মানি এক্সচেঞ্জের ৪ জন গ্রেপ্তার
এ তথ্য জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: রাজধানীর চকবাজারে দুইটি মানি এক্সচেঞ্জ হতে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এসময় ১ কোটি টাকা মূল্যের দেশি ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মকবুল হোসেন (৫০), মাসুদ আলম (২৭), এম.এম. জাকারিয়া (৫৬), জামাল উদ্দিন (৫৪)। এ তথ্য জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের একটি টিম ঘটনাস্থলের আশেপাশে অবস্থান নেয়। এসময় মকবুল হোসেন চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জের অফিস কক্ষের ভেতরে ঢুকে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রির জন্য শপিং ব্যাগ হতে টাকা বের করার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেখানো মতে দোকানের ভিতর ১ নম্বর কাউন্টারের সামনে থেকে মোট ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি টাকা, ৫৫ হাজার রিয়াল, ৩০৭০ ইউরো এবং ১৫৫০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত জব্দতালিকামূলে জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় এই মুদ্রা চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জের মালিক আহমেদ নোমানের নিকট বিক্রয় করার জন্য এবং বাংলাদেশি টাকা দিয়ে একই দোকান থেকে ইউ এস ডলার ক্রয়ের উদ্দেশ্যে এসেছে। এরপর চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের অফিস কক্ষে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে ১ নম্বর কাউন্টার থেকে ২০৭৫৫ ইউএস ডলার, ৪৮,৯৩৭ সৌদী রিয়াল, ২১০০ ইউরো, ১১৭০০০ ভারতীয় রুপি, ২০৯০/- মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত এবং ৫ নম্বর কাউন্টার হতে ১৩ লাখ বাংলাদেশি টাকা উদ্ধার করা হয়।
আজাদ রহমান বলেন, এ সময় মাসুদ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ৫ নম্বর কাউন্টারের মালিক শামীমা আক্তার এর ম্যানেজার। একই দোকানের ৮ নম্বর কাউন্টার এর ফাইল ক্যাবিনেট থেকে ২০২০ সৌদি রিয়াল এবং ৬ লাখ বাংলাদেশি টাকা জব্দ করা হয়। একই দোকানের ভিতরে শপিং ব্যাগে রক্ষিত অবস্থায় প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ আরো জানায়, ৮ নম্বর কাউন্টারের মালিক শিহাবউদ্দিন মৃধা।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জ এর মালিক আহমেদ নোমান হলেও তিনি সবসময় দোকানে থাকেন না। তবে আহমেদ নোমান এর হয়ে তার বড় ভাই এম.এম. জাকারিয়া দোকানটি পরিচালনা করেন। এম.এম. জাকারিয়া উক্ত দোকানের মোট ৯ টি কাউন্টারের মধ্যে ৯ নম্বর কাউন্টারের মালিক। পরবর্তীতে ৯ নম্বর কাউন্টার হতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি চেঞ্জার মনিটরিং সিস্টেমে চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জ এর নিকট ইউ এস ডলার ৮০৬, পাউন্ড ২০০, সৌদী রিয়াল ৬২০ এবং ইউরো ৪০ আছে এই তথ্য থাকলেও প্রকৃত পক্ষে তারা গোপনে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে রেখেছে। এছাড়া চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জ এর ব্যবসা করার জন্য একটি কাউন্টার রাখার অনুমোদন রয়েছে কিন্তু তারা মোট ৯টি কাউন্টার খুলে ব্যবসা করছে।
পরবর্তীতে একই বিল্ডিং এর নীচতলার ১১০ নম্বর রুম “বকাউল মানি এক্সচেঞ্জ” এর ভিতরে উত্তর অভিযান পরিচালনা করে ৫৮৭৮ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ১০৩৫ দুবাই দিরহাম, ৫৫০০ ভারতীয় রুপি জব্দ করা হয় এবং জামাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের সহায়তায় মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কোন প্রকার নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রি করছে।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী কোন মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান দৈনিক ২৫ হাজার ডলার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করার জন্য মজুদ রাখতে পারে। আসামিরা যথাযথ নিয়ম ব্যতিরেকে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করে ও বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়ের জন্য বাংলাদেশি টাকা হেফাজতে রেখে ১৯৪৭ সালের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩(১) ধারার অপরাধ করেছেন।
এর প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারকৃত ৪ জন সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩(১) ধারা মোতাবেক পল্টন মডেল থানা ডিএমপিতে নিয়মিত মামলা রুজু করেছে সিআইডি।