দেশ পুরোপুরি লুটেরা-মাফিয়াদের দখলে: মির্জা ফখরুল
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন
প্রথম নিউজ, অনলাইন: বাংলাদেশ পুরোপুরি ‘দুর্বৃত্ত, লুটেরা ও মাফিয়াদের’ কবলে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, একদিকে তারা (সরকার) রাজনৈতিক অধিকার হরণ করছে, অন্যদিকে অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে পরনির্ভরশীল একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
এদিন বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ও পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী পালন করেছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ১০টি স্পটে এবং দক্ষিণ বিএনপি ১৬টি স্পটে দুস্থ মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করেছে। এতে দলটির মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা অংশ নেন।
শেরেবাংলা নগরে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমাদের মহান নেতা স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে নির্বাসিত। একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কলাকৌশল করে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে নিয়েছে। তারা আজ ক্ষমতাকে দখল করে আছে। একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চাচ্ছে ভিন্ন পদ্ধতিতে।’
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা শপথ নিয়েছি। আমরা যুবক-তরুণসহ আমাদের অধিকার রক্ষার জন্য এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যে আন্দোলন চলছে, সেই আন্দোলনকে আরও বেগবান করব। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এ ভয়াবহ সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, হাবিবুর রহমান হাবিব, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্মমহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, ডা. রফিকুল ইসলাম, কাদের গণি চৌধুরী, মীর নেওয়াজ আলী, শামীমুর রহমান শামীম, রফিক শিকদার, আমিরুজ্জামান শিমুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মধ্যে যুবদলের মামুন হাসান, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজিব আহসান, ছাত্রদলের নাছির উদ্দিন নাছির, আমান উল্লাহ আমান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন নেতাকর্মীরা। পরে মাজার প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের উদ্যোগে দোয়া মাহফিলে অংশ নেন তারা। বিএনপি ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, মহিলা দল, তাঁতীদল, মৎস্যজীবী দল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
সকালে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প খোলা হয়েছে।
দুপুরে আগারগাঁও লায়ন চক্ষু হাসপাতাল, হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গণ, সেগুনবাগিচা, শাহজাহানপুর ও নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ একাধিক স্পটে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ।
মিরপুরের পল্লবী শপিং সেন্টারসহ বিভিন্ন স্থানে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। এ সময় ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম ডোনার ও সদস্যসচিব আমিনুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, সদস্য হাজি মো. ইউসুফ, শাহ আলম, এবিএমএ রাজ্জাক, আফতাব উদ্দিন জসিম প্রমুখ।
ভাটারায় খাবার বিতরণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ সেলিম মিয়া, ৪০ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মইনুল হোসেন মনা প্রমুখ। এছাড়াও কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড, গুলশান, বনানী, শাহ আলীর মাজারের সামনে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।
দুপুরে কাফরুল এলাকায় খাবার বিতরণ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি বলেন, আজ যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা নির্বাচনকে নির্বাসনে দিয়েছেন। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন না। সবকিছু বন্দি করেছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে জাদুঘরে পাঠিয়েছেন। এই দমবন্ধ করার মতো পরিস্থিতিতে আমরা বসবাস করছি। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও সততা ধারণ করে কাজ করতে পারলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভালোমতো ফিরে পাব। এ সময় বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিংসহ দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
চকবাজার এলাকায় দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। মালিবাগ ও রামপুরা এলাকায় খাবার বিতরণ করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় দিনব্যাপী কুরআন খতম, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বাদ আসর দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, ভাতিজা অভিক এস্কান্দার, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারসহ পরিবারের সদস্য ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান এবং মেয়ে জাইমা রহমান।