থমথমে পঞ্চগড়ে বাড়তি নিরাপত্তা
নতুন করে গোলযোগের আশঙ্কায় শহরের বিভিন্ন স্থান ও জলসা স্থানসহ আহমদনগর ও ঝালশিরি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রথম নিউজ, পঞ্চগড়: আহমদিয়া জামাতের জলসাকে কেন্দ্র করে ত্রিমুখী সংঘর্ষের পর গতকাল দিনভর পঞ্চগড় ছিল থমথমে। নতুন করে গোলযোগের আশঙ্কায় শহরের বিভিন্ন স্থান ও জলসা স্থানসহ আহমদনগর ও ঝালশিরি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। দিনভর সংঘর্ষের পর শুক্রবার রাত ৯টার পর সালানা জলসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন মাইকিং করে সবাইকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। শনিবার সকাল থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সালানা জলসায় আসা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন জলসাস্থল থেকে পঞ্চগড় ছাড়তে শুরু করে। এদিকে সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা-পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় নিহত পঞ্চগড় পৌরসভাধীন মসজিদপাড়া এলাকার ফরমান আলীর ছেলে আরিফুজ্জামান আরিফের (২৭) নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সাবেক জনপ্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ ও আওয়ামী লীগ নেতা নাঈমুজ্জামান মুক্তা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত স¤্রাট, স্থানীয় কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান ইরান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নিহত আরেক যুবকের নাম জাহিদ হাসান (২৩)। তিনি নাটোরের বনপাড়া পৌরসভার চিরোইল মহল্লার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে। তার লাশও নিজ এলাকায় নিয়ে দাফন করা হয়েছে।
এসব নিয়ে শনিবার বিকালে আহমদনগরে জলসাস্থলে সংবাদ সম্মেলন করেছে আহমদিয়া মুসলিম জামাত। ৯৮তম জলসা সালানার আহ্বায়ক আহমদ তবশির চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, শুক্রবারের ঘটনায় তাদের একজন নিহত ও ৭০ জন আহত হয়েছেন। নিহত ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হোসেন (২৩)-এর বাড়ি নাটোরের বনপাড়ায়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রথমে পঞ্চগড় এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। গুরুতর আহতদের এখন রংপুর থেকে ঢাকায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে শুক্রবার আহমদনগর ও ঝালশিরি গ্রামের দেড় শতাধিক বাড়িতে আক্রমণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা বলে তিনি দাবি করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের দুই গ্রামের আক্রমণের তিন ঘণ্টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সহায়তা পাইনি। অত্র এলাকায় তাদের উপস্থিতি থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তারা নিষ্ক্রিয় ছিল। এ ঘটনায় আমরা পঞ্চগড় সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
তবে পঞ্চগড় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ মিঞা জানান, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনাটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উল্লেখ্য, পঞ্চগড়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে শুক্রবার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, আহমদিয়াদের বাড়িঘর ও দোকানে ভাঙচুর করে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ তৌহিদী জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় ২ জন নিহত ও পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: