তারেক রহমানের ১৭তম কারাবন্দি দিবস আজ

২০০৭ সালের বিভীষিকাময় সেই কালো রাতে কোনো ওয়ারেন্ট, মামলা, জিডি এমনকি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই সেনা সমর্থিত সরকারের জরুরি বিধিমামলায় গ্রেফতার করা হয় সমকালীন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক তারেক রহমানকে।

তারেক রহমানের ১৭তম কারাবন্দি দিবস আজ
তারেক রহমানের ১৭তম কারাবন্দি দিবস আজ

রাশেদুল হক, প্রথম নিউজ  : আজ ৭ মার্চ,বাংলাদেশের তৃণমূল রাজনীতির প্রবক্তা, মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র পূণরুদ্ধার আন্দোলনের নেতা, ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনায়ক এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের ১৭তম কারাবন্দি দিবস আজ। ২০০৭ সালের বিভীষিকাময় সেই কালো রাতে কোনো ওয়ারেন্ট, মামলা, জিডি এমনকি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই সেনা সমর্থিত বিতর্কিত সরকারের জরুরি বিধিমামলায় গ্রেফতার করা হয় সমকালীন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই রাজনীতিককে। তাঁর কারাবন্দি দিবসকে স্মরণে বিএনপি ও অন্যান্য অংগ সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের আয়োজনে গতকাল  ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা আলোচনা সভায় অংশ নেন। 

বস্তুত ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ের পর তারেক রহমান দেশি-বিদেশি যড়যন্ত্রকারীদের টার্গেট হন। ১/১১’র জরুরি অবস্থাকালীন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের সে টার্গেট বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করে। তাঁকে শুধু রাজনৈতিক ময়দান থেকে নয় দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলে। অন্য দিকে তাঁর চরিত্র হরনের জন্য চলে গোয়েবলসীয় কায়দার মিথ্যাচার। অথচ সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ও বর্তমান সরকারের ১৪ বছরে রাষ্ট্রীয় সর্বশক্তি দিয়ে টাস্কফোর্স, এনবিআর, দুদকসহ সরকারের সব সংস্থাই দেশে-বিদেশে তন্ন তন্ন অনুসন্ধান করেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদা দাবি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাকে দন্ড দিতে জরুরি অবস্থাকালীন দ্রুত বিচার আইনে দফায় দফায় সংশোধনীও আনা হয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন আমলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা সাজানো মামলায় ফরমায়েশি রায়ে দন্ড দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর আগে নিন্ম আদালতের এক বিচারক তাঁকে সাজা না দেয়ায় দেশান্তরিত হতে হয়েছে।    

১/১১ সরকারের হাতে গ্রেফতারের পর পুলিশ রিমান্ড ও কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে নিষ্ঠুর নির্যাতনের কারণে আজও অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করছেন এই রাজনীতিক। কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে নির্মম নির্যাতনের পর একটানা ৫৫৪ দিন বা ১৮ মাস কারাবাস করতে হয় তাঁকে। এরপর ১২টি মামলায় জামিন পেয়ে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি পিজি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি পান। ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহিংসায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হেফাজতে নিষ্ঠুর নির্যাতনে জননেতা তারেক রহমানের মেরুদন্ড ভেঙে দেয়ার কারণে মুক্তির পর হাসপাতালের বিছানা থেকে উঠতে পারছিলেন না। এই অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় এ তরুণ নেতার জীবন এখনও বিপন্ন। এখনও তাকেঁ বিদেশে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ১/১১ সরকারের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারও রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সারাদেশে শতাধিক মামলা দায়ের করেছে। একাধিক মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা ও ওয়ারেন্ট জারি করেছে। 

১/১১তে গ্রেফতারের পর থেকে তারেক রহমানের প্রতি সরকারের আচরণ ও মামলাগুলো পর্যালোচনা করলেই দেখা যায় কত নিষ্ঠুরভাবে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একজন নেতাকে মিথ্যা কালিমা লেপন করে রাজনীতি থেকে বিদায় করতে চেয়েছিল। গ্রেফতারের পরদিন ৮ মার্চ কাফরুল থানার ওসি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এক জিডিতে উল্লেখ করেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসাবে নিজে ও দলীয় নেতাকর্মী, বন্ধুবান্ধবদের দিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিদেশি টেন্ডার ক্রয়, বিমান মন্ত্রণালয়ের কমিশন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনে দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন। তার নিজ ও আত্মীয়স্বজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিপুল অঙ্কের অর্থ জমার প্রাথমিক প্রমাণাদি আছে। কিন্তু জরুরি অবস্থাকালীন  সরকারের সকল সংস্থার সহায়তায় তদন্ত শেষে দুদক ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদন দেয়। এতে ব্যাংক স্থিতি হিসাবে ঢাকা ব্যাংকের একাউন্টে ২৮১৬২ টাকা ও এবি ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৬ হাজার ২৯০ টাকার সন্ধান পায়। স্থাবর সম্পত্তি হিসাবে ১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকার থেকে পাওয়া ঢাকা ও বগুড়ায় কিছু জমি পায়। এর বাইরে আজ পর্যন্ত কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি।

অবশ্য ২০০৯ সালের ১৪ এপ্রিল কাফরুল থানায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা জিডির বিষয়ে ওসির ক্ষমা প্রার্থনা ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদনের প্রেক্ষিতে তারেক রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে জিডিটি নথিভুক্ত করা হয়। অব্যাহতি দেয়া হয় দৈনিক দিনকাল সংক্রান্ত মামলা থেকেও। গ্রেফতারের ১৬ ঘণ্টা পর গুলশান থানায় এক কোটি টাকা চাঁদাদাবির অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী আমিন উদ্দিন চৌধুরী মামলা দায়ের করে। এই মামলায় ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পর তারেক রহমানকে পুলিশের হেফাজতে না দিয়ে অজ্ঞাত স্থানে অজ্ঞাত লোকদের হেফাজতে নিয়ে চোখ বেঁধে বর্বরোচিত কায়দায় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে পরে তিনি আদালতকে অবহিত করেন। জরুরি অবস্থাকালীনই মামলার বাদী আমিন উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলন এবং স্ট্যাম্পে হলফনামায় দাবি করেন এক বিভীষিকাময় মুহূর্তে যৌথ বাহিনী তাকে আটকিয়ে রেখে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। তারেক রহমান তার নিকট কোনো সময়ে চাঁদা দাবি করেননি বা তিনি কোথাও এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ করেননি। এভাবে সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে  ৭টি চাঁদাদাবি ও দুদক বাদী হয়ে চারটি মামলা করে। চাঁদাদাবির কোনো মামলাতেই সামান্যতম প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রতিটি মামলাতেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বাদীদের কোনো অভিযোগ নেই। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি চাকুরি থেকে অবসর পাওয়া এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তাকে একটি স্পর্শকাতর মামলারতদন্তু কর্মকর্তা নিয়োগ নিয়ে একটি রাজনৈতিক মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো হয়। এমনকি এক আসামিকে মাসের পর মাস রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে মিথ্যা স্বাীকারোক্তি আদায় করে একটি মামলাটিতে আসামি করে তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়। যদিও যিনি নিপীড়নের শিকার হয়ে মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছিলেন তিনিই  আদালতে হাজির হয়ে  তার জবানবন্দি প্রত্যাহার করে করেছিলেন । শুধৃমাত্র রাজৈনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ আনা হয়। 
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১/১১ সরকারের চেয়ে আরো প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে দেশে-বিদেশে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির তল্লাশি করে। দুদক, এনবিআর ছাড়াও সারাদেশের দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ এনে নতুন করে শতাধিক মামলা দায়ের করে। কিন্তু একটি অভিযোগও প্রমাণ করতে পারেনি। তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, জননেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিটি মিথ্যা মামলাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েই দায়ের করায় কথিত অভিযোগের একটিও প্রমাণ করতে পারেনি। কারণ কথিত অভিযোগের কোনটিরই সাথে তারেক রহমানের সম্পৃক্ততা ছিল না। সরকারের চেষ্টার পাশাপাশি দুদকের কিছু কর্মকর্তা পদোন্নতির জন্য তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক সাজানো অভিযাগপত্র দিচেছ। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করায় অনেককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। 

মূলত ১৯৯১ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে প্রায় নেপথ্যে থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তারেক রহমান। তারই দূরদর্শিতা, অক্লান্ত পরিশ্রম, প্রজ্ঞা ও ক্যারিশমার কারণে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় ২০০১ সালের নির্বাচনে। দীর্ঘদিন দলের রাজনীততে গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেপথ্যচারীর ভূমিকা পালন করলে ২০০২ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পান। দলের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে নিয়োগ লাভের পরপরই তারেক রহমান দেশব্যাপী দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সাথে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। তারেক রহমান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে গভীর সেতুবন্ধন নির্মাণ করতে তৃণমূল সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। এসব সম্মেলনে কর্মীরা দলীয় রাজনীতি ও সংগঠন সম্পর্কে মন খুলে কথা বলেছেন। এর মধ্য দিয়ে একটি সুসংঘবদ্ধ বিএনপি গড়ে ওঠে। তৃণমূল পর্যায়ের এই সভা ও জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীদের তরুণ অংশটির মনোবল অসামান্য বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে তারেক রহমান শুধুমাত্র দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের পরিচিতি থেকে বেরিয়ে এসে দলের একজন দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তিনি ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে যেভাবে তৃণমূলে দলের শেকড় প্রোথিত করেন তাতে অশুভ রাজনৈতিক শক্তির পায়ের তলা থেকে মাটি সরতে থাকে। ফলে তাতে ষড়যন্ত্রকারীদের গায়ে জ্বালা ওঠে। বিএনপি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের দলা পাকানো হয় এবং এই চেষ্টা আজও অব্যাহত আছে। বর্তমান ভোটারবিহীন নিশিরাতের সরকার দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করতে গিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণের পর থেকে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তাঁর পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও মাতা বেগম খালেদা জিয়ার মতোই দলকে শক্তিশালী করতে দিনরাত কাজ করে চলছেন। বর্তমানে তাঁর নেতৃত্বে সারাদেশে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল, মহিলা দল, তাঁতী দল, মৎসজীবী দলসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। যার প্রতিফলন দেখা গেল দেশব্যাপী বিএনপির জনসভাগুলোতে। বাংলাদেশের মানুষ ও জাতীয়তাবাদী শক্তি বিশ্বাস করে তারেক রহমানের নেতৃত্বেই হারানো গণতন্ত্র পনূরুদ্ধার হবে ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে। মানুষ ফিরে পাবে তাদের অধিকার।