ঢাকা বারে এজলাসের ভেতরে আইনজীবীদের মারামারি
এ ঘটনায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা সংগঠিত হয়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদেরকে ধাওয়া দিয়ে এজলাস থেকে বের করে দেয়।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের সাক্ষ্য গ্রহণকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাসের ভেতরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা সংগঠিত হয়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদেরকে ধাওয়া দিয়ে এজলাস থেকে বের করে দেয়। এতে বিএনপিপন্থি ৫০ জন আইনজীবী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী। এদের মধ্যে তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। গুরুতর আহতরা হলেন- এডভোকেট আব্দুল খালেক মিলন, এডভোকেট জহিরুল ইসলাম মিলন ও এডভোকেট আনোয়ার হোসেন। আহতদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ।
আদালত সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুর ২টার পর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালত কক্ষে অবস্থান নেন। এতে করে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এ সময় বিচারক এজলাস ছেড়ে চলে যান। এ বিষয়ে তারেক রহমানের আইনজীবী এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, সোমবার এই মামলায় তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে আদালত। তখন আমরা আদালতকে জানাই, অন্য মামলা যেভাবে শুনানির তারিখ দিয়ে থাকেন, এই মামলাতেও সেভাবে দেয়া উচিত। তা নাহলে মানুষের কাছে এই বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তখন আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পরে জানানো হবে বলে জানান। কিন্তু মঙ্গলবার ফের আরও একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। আমরা আদালতকে বিষয়টি অবহিত করি। এরই মধ্যে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ও দুদকের পিপি আমাদের ওপরে তেড়ে ওঠেন।
তার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা আমাদের ওপরে এজলাসের ভিতরেই হামলা করে। পুলিশ আমাদেরকে এজলাস থেকে জোর করে বের করে দেয় এবং মারধরও করে- যা ন্যক্কারজনক। তবে দুদকের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল তেড়ে ওঠার বিষয়টি অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা মামলা ডিলে করার জন্য সাক্ষ্যগ্রহণে বাধা দেন। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। আদালত আরও দু’জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। বুধবার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত। দুদকের সরকারি কৌঁসুলি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন আজ ঠিক ছিল। দুদকের পক্ষে একজন আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন। তখন বিএনপিপন্থি একদল আইনজীবী আদালত কক্ষে প্রবেশ করে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। এতে আদালতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এরপর বিচারক এজলাস ছেড়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন আইনজীবী জানান, সাক্ষ্যগ্রহণের সময় এজলাসের ভেতরে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের কয়েকজন বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন। আদালতের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অন্যদিকে আদালতের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা এজলাসে ঢুকে ধাওয়া দিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বের করে দেন। এ সময় কয়েকজন আইনজীবী আহত হয়েছেন। এজলাস থেকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা চলে গেলে সন্ধ্যা ৬টায় এজলাসে বসেন বিচারক। এরপর ৬টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত এমএ মতিন নামের ওই ব্যক্তির সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
গত ২১শে মে মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক জহিরুল হুদার সাক্ষ্যের মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। গত ১৩ই এপ্রিল তারেক ও জোবায়দার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন একই আদালত। এ মামলায় তাদেরকে পলাতক দেখানো হয়েছে। গত বছরের ১লা নভেম্বর তারেক ও জোবায়দার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন একই আদালত। গত বছরের ২৬শে জুন তারেক ও জোবায়দাকে পলাতক ঘোষণা করে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার দুর্নীতি মামলা দায়ের ও তার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে করা পৃথক রিট আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তার মা ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। তারেক রহমানের শাশুড়ি মারা যাওয়ায় এই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।