ড. মোশাররফসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি
আজ নয়াপল্টনে বিএনপির যৌথসভা শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে দলটি। আজ নয়াপল্টনে বিএনপির যৌথসভা শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে আগামী ১২ মে , বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ১৪ মে শনিবার সারাদেশে জেলা পর্যায়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সোমবার রাত ৮.০০ টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এর জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস,বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী,বেগম সেলিমা রহমান,ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় নিন্ম বর্ণিত সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়।
১। সভায় বিগত ২২ এপ্রিল জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায় আগামী ৩০ মে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪১তম মৃত্যু বার্ষিকী যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন সমূহ এই বিষয়ে কর্মসূচী পালনের জন্য ১০ দিন ব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করবে।
৩। সভায় আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য পর্যালোচনা করা হয় এবং এই বক্তব্য প্রত্যাখান করা হয়। বিএনপি মনে করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সহ সকল রাজনৈতিক কর্মীদের মুক্তি, সকল মামলা প্রত্যাহার, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, নিরপেক্ষ নির্বচন কমিশন গঠন, সকল দলের অংশগ্রহণ ব্যতীত বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য ইভিএম পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হবে না।
৪। সভায় কুমিল্লার দাউদকান্দিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ওপর হামলা ও তার বাসভবনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আক্রমণ এবং পরবর্তীতে বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয। একই সঙ্গে কুমিল্লায় চান্দিনায় এলডিপি’র মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী ড. রেদোওয়ান আহমেদ এর গাড়ীতে হামলা ও তাকে গ্রেফতার, সাতক্ষীরা, নারাণয়গঞ্জ, নরসিংদীর পলাশ এবং ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবেদিনের ওপর হামলা, পটুয়াখালী জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব ¯েœহাংশু সরকার কুট্টির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা মনে করে এই হামলার ঘটনাগুলো থেকেই প্রমাণিত হয় যে, আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল। সন্ত্রাস ও ত্রাস সৃষ্টি, হত্যা ও গুম-খুনের মাধ্যমেই বিরোধী দলকে নির্মূল করার জন্য ধারাবাহিকভাবে এইসব ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী লীগ। পূর্বের মতোই নিজেরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড হতে দূরে রাখার হীন চক্রান্ত করছে। একদিকে এই অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের কথা বলছে অন্যদিকে হামলা, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও কারাগারে নিক্ষেপ করে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় যেতে চায় আওয়ামী লীগ। সভায় আওয়ামী লীগের এই হীন চক্রান্তের বিরুদ্ধে জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তুলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম ও এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান জানানো হয়। অবিলম্বে হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে আগামী ১২ মে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ১৪ মে শনিবার সারাদেশে জেলা পর্যায়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৫। সভায় সরকার কর্তৃক সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধি করার ফলে বাজারে ভোজ্য তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার জন্য সরকারকে দায়ী করা হয়। সভা মনে করে, সরকারের প্রত্যক্ষ মদদপুষ্ট অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের অনৈতিক ভাবে লাভবান করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজারে প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের দূর্নীতি ও ভ্রান্তনীতি সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে। জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। সরকারের সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর সীমাহীন দূর্নীতি ও অযোগ্যতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার দায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবী করা হয়।
৬। সভায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলাফলকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে পরিবর্তনের ন্যাক্কার জনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মতো একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করার এই ঘটনা আবারও প্রমান করেছে যে, আওয়ামী লীগের আইনের প্রতি কোন শ্রদ্ধা নেই এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমেই সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ। নজীরবিহীন সন্ত্রাসের মাধ্যমেই তারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায়। সভায় বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য দল মত নির্বিশেষে সকল আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
৭। সভায়, দূর্নীতির মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যের বিদেশ ভ্রমনে বিষ্ময় প্রকাশ করা হয। এই ঘটনা থেকে প্রমানিত হয় যে, এই রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান গুলোকেই দলীয়করণ করা হচ্ছে। একদিকে আওয়ামী লীগের সদস্য হওয়ার কারনে তাকে ইমিগ্রেশন এর পক্ষ থেকে বিদেশ ভ্রমণে বাধা না দেয়া। অন্যদিকে মিথ্যা মামলায় বেআইনীভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবার কর্তৃক বিদেশ যাওয়ার জন্য আবেদন করার পরেও তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য কোন সুয়োগ দেওয়া হয়নি। হাইকোর্টও, কোর্টের সিদ্ধান্ত অমান্য করে অপরাধীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং এই ঘটনার জন্য দায়ী দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানাচ্ছে।
৮। সভায়, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২২ সালের প্রকাশিত বিশ^ সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে গত বছরের তুলনায় ১০ ধাপ পিছিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশর অবস্থান ১৬২তম হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে, এই সূচকের অবস্থান থেকে প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশে সংবাদপত্রের কোনও স্বাধীনতা নেই। ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টসহ বিভিন্ন আইন প্রণয়ন ও সংবাদ কর্মীদের হত্যা, মিথ্যা মামলা নির্যাতনের মাধ্যমে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকে হরণ করা হচ্ছে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সভা সকল সংবাদ কর্মী, সংবাদ প্রতিষ্ঠান এবং সচেতন গণতন্ত্রকামী জনগণকে সরকারের হীন চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানানো হয়।
৯। সভায়, সম্প্রতি ইউনিসেফ বাংলাদেশ কর্তৃক “বাংলাদেশে সাড়ে ৩ কোটি শিশুর রক্তে উচ্চ মাত্রার সীসার বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হারে বিশে^ চতুর্থ স্থান অবস্থান” এর তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। শিশুদের রক্তে অতি মাত্রায় সীসা থাকার ফলে শিশুদের মস্তিকের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হওয়া ও বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। সরকারের অমনোযোগ, অযোগ্যতা ও সর্বক্ষেত্রে দূর্নীতি আজ শিশুদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। অবিলম্বে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়।
১০। সভায় আগামী ১৫ মে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিদের পবিত্র অনুষ্ঠান বৌদ্ধ পূর্ণীমা উপলক্ষে বৌদ্ধ ধর্মে বিশ^াসীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয় এবং আগামী ১৫ মে তারিখে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য দলের চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
১১। সভা শেষে সভাপতি সদস্যবৃন্দকে ঈদের শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানান।
নয়া পল্টনে বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে যৌথ সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাইদ আহমেদ খান, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, উলামা দলের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম তালুকদার, জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, তাঁতী দলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান, ছাত্র দলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল উপস্থিত ছিলেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews