জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের পূনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন: মির্জা ফখরুল
সর্বশক্তি দিয়ে ‘গণতন্ত্রের মা’ গৃহবন্দী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পূনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন বলে দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর । ১৯ জানুয়ারী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পূণ:প্রবর্তক, মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক, আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
তিনি বলেন, জাতির এক ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমান এক ঐতিহাসিক যুগান্তকারি দায়িত্ব পালন করেন। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য নেতৃত্বহীন জাতির দিশারী হয়ে শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয় এবং তিনি যুদ্ধে অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। তিনি হন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় মহান নেতা। স্বাধীনতাত্তোর দূ:সহ স্বৈরাচারী দূঃশাসনে চরম হতাশায় দেশ যখন নিপতিত, জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে যাওয়া যখন বাধাগ্রস্ত ঠিক সেই সংকটকালে সিপাহী-জনতার মহাবিপ্লবের তরঙ্গ¯্রােতে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন। মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অপরাজনীতি দ্বারা জনগণকে প্রতারিত করে স্বাধীনতাত্তোর ক্ষমতাসীন মহল যখন মানুষের বাক-ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে হরণ করে গণতন্ত্রকে মাটিচাপা দিয়েছিল, দেশকে ঠেলে দিয়েছিলো দূর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে, বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির আন্তর্জাতিক খেতাবপ্রাপ্তির মতো জাতির এরকম এক চরম দু:সময়ে ৭ই নভেম্বর সৈনিক জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে শহীদ জিয়া ক্ষমতার হাল ধরেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই তিনি বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পূনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। উৎপাদনমূখী রাজনীতি প্রবর্তন করে তিনি দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে কৃষি বিপ্লব, গণশিক্ষা বিপ্লব ও শিল্প বিপ্লব, সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রম ও সরকারি সহায়তার সমন্বয় ঘটিয়ে ১৪০০ খাল খনন ও পূণর্খনন করেন। গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তনের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে ৪০ লক্ষ মানুষকে অক্ষর জ্ঞান দান করেন। এছাড়া গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ঠউচ) গঠন করে গ্রামাঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যবস্থা করেন। তিনি পল্লী চিকিৎসক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, ফলে তাঁর আমলে ২৭৫০০ পল্লী চিকিৎসক নিয়োগপ্রাপ্ত হয় এবং তাতে গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। শহীদ জিয়া ছিলেন বিশ^ব্যাপী আধিপত্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক আপোষহীন দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রনায়ক। তাই সকল ধরনের আধিপত্যকামী বৈদেশিক চাপ ও অশুভ প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টাকে অগ্রাহ্য করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ শহীদ জিয়ার এক অবিস্মরণীয় অবদান। এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে সমতা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে সার্ক গঠন করেন।
তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশের সার্বভৌমত্ব শক্তিশালী হয় এবং স্বাধীন জাতি হিসাবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মর্যাদার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। তাই দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা নিজেদের নীলনক্শা বাস্তবায়নের কাঁটা ভেবে জিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কিন্তু তাঁর এই আত্মত্যাগে জনগণের মধ্যে গড়ে উঠেছে দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে এক ইস্পাতকঠিন গণঐক্য। শহীদ জিয়ার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শণেই আমাদের জাতিসত্ত্বার সঠিক স্বরূপটি ফুটে ওঠে-যা আমাদের ভৌগলিক জাতিসত্ত্বার সুনির্দিষ্ট পরিচয় সুষ্পষ্ট হয়। বিশ্ব মানচিত্রে আমাদের আত্মপরিচয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। শহীদ জিয়া প্রবর্তিত ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখারও অবিনাশী দর্শন। শহীদ জিয়ার জন্মদিনে তাঁর প্রদর্শিত পথেই আমরা স্বৈরাচারী অগণতান্ত্রিক শক্তির থাবা থেকে মুক্ত হবো ও গণতন্ত্র ফিরে পাবো। আর এর জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ‘গণতন্ত্রের মা’ গৃহবন্দী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আমরা দেশনেত্রীর বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি দুরদর্শী, দেশপ্রেম, সাহস, বীরত্ব, সততা, কর্মতৎপর, জনঘনিষ্ঠ, ঔদার্য ও আড়ম্বরহীন এক কিংবদন্তি মহান রাষ্ট্রনায়কের জন্মবার্ষিকীতে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা; গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার, ন্যায়-বিচার ফিরিয়ে আনা এবং মানুষের হারানো মৌলিক ও মানবাধিকার পূণ:রুদ্ধার করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাই।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: