জয়ে ফিরলো হারানো বিশ্বাস

প্রথম নিউজ, খেলা ডেস্ক: পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ে হঠাৎ করেই পথ হারায় বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ ছিল দলের জন্য বড় ধাক্কা। এরপর নিজেদের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। সেখান থেকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শারজাহতে ওয়ানডে সিরিজ হার। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে প্রথম টেস্ট হেরে দলের আত্মবিশ্বাস ঠেকে ছিল তলানিতে। হারতে হারতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা। প্রশ্ন উঠছিল সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের ছাড়া নয়া বাংলাদেশের যোগ্যতা নিয়েও। অবশ্য ক্যারিবীয় মাটিতে পরের টেস্ট ম্যাচেই জয় নিয়ে ঘুড়ে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে পায়। ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচে হারলেও ব্যাটিং নিয়ে আক্ষেপ কাটে।
চিন্তা ছিল বোলিং নিয়ে কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুই ম্যাচেই বোলাররা দুর্দান্ত জয় উপহার দিয়ে শঙ্কা দূর করে। প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজে জয়ে সেন্ট ভিনসেন্টে আর্নেস ভ্যাল স্টেডিয়ামে ইতিহাস গড়ে টাইগাররা। এর আগে ক্যারিবীয়দের মাটিতে এককভাবে সিরিজ জয় ছিল না। ২০১৮-তে সিরিজটি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতে। এবারই প্রথম ক্যারিবীয় মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে জয় পায় বাংলাদেশ। এই জয় যেন হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাসটা ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ শিবির। এমন জয়ের পর দারুণ খুশি অধিনায়ক লিটন দাস। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। শুধু আমি নই, বাংলাদেশের সব মানুষই খুশি। এ রকম একটি জয়ের আশায় ছিলাম আমরা।’
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৪৮ টি- টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে। সেখানে জয় পেয়েছে ১৪টিতে আর ৮টি করেছে ড্র। এই ফরম্যাটে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত দেশের বাইরে খেলেছেন ২৫ সিরিজ। সেখানে এটি বাংলাদেশের চতুর্থ জয়। আর ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৮ সিরিজে এটি টাইগারদের দ্বিতীয় জয়। প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে ছিল বেশ বিপদেই। পরের ১০ ওভারে তারা পায় লড়াই করার পুঁজি, শেষটা দারুণ করলেন শামীম হোসেন। লিটন দাসের দারুণ অধিনায়কত্বে বোলাররা পরে ছিলেন দুর্দান্ত। সিরেজের দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৭ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রান করে সফরকারীরাও। ওই রান তাড়া করতে নেমে সব উইকেট হারিয়ে ১০২ রানের বেশি করতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চার ওভারের ভেতরই দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। শুরুটা হয় অধিনায়ক লিটন দাসকে দিয়ে। সাদা বলের ক্রিকেটে আরও একবার ব্যর্থ হন তিনি।
১০ বলে ৩ রান করে আকিল হোসেনের বলে স্টাম্পিং হন তিনি। ১৫ ওভার অবধি মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের রান একশ’ পার করাই মুশকিল হয়ে যাবে। ৮০ রানে তখন ছয় উইকেট নেই বাংলাদেশের। কিন্তু শেষটা দারুণ করেন শামীম হোসেন। ১৭ বলে ২ ছক্কা ও সমান চারে ৩৫ রান করেন। শেষ ওভারে ১৫ ও শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৪৯ রান। তবে স্কোর বোর্ডে রান স্বল্প হবে সেটি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন টাইগার অধিনায়ক। এই পুঁজিও যে জয়ের জন্য যথেষ্ট হতে পারে, সেটা বাংলাদেশ ইনিংস শেষেই মনে হচ্ছিল লিটনের। তিনি বলেন, ‘প্রথম বলটি যখন খেলেছি, তখনই বুঝেছিলাম যে, এই উইকেটে ব্যাট করা কঠিন।’ এরপর শামীম পাটোয়ারীকে তার ৩৫ রানের ইনিংসের জন্য ধন্যবাদ দিতেও ভোলেননি লিটন, ‘শামীমকে ধন্যবাদ, সে খুবই ভালো ব্যাট করেছে।’
অন্যদিকে বোলাররা দারুণ শুরু করে। রান তাড়া করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ধাক্কা দেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দুই উইকেট নেন তিনি। শুরুটা করেন ব্রেন্ডন কিংকে দিয়ে। ৫ বলে ৮ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর চার বলে শূন্য রান করা আন্দ্রে ফ্লেচারকেও ফেরান একইভাবে। পাওয়ার প্লের ভেতরই বাংলাদেশকে আরও দু’টি উইকেট এনে দেন মেহেদী হাসান। পরের ওভারে এসেই অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েলকে ফিরিয়ে দেন হাসান মাহমুদ। ৭ বলে ৬ রান করে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে। রোমারিও শেফার্ডকে তানজিম ফেরালে ৪২ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপরই জুটি গড়েন রস্টন চেজ ও আকিল হোসেন। ৩৪ বলে ৩২ রান করা চেজকে বোল্ড করেন রিশাদ হোসেন, ভাঙেন ৪৯ বলে ৪৭ রানের জুটি। ১৯তম ওভারে শেষ ব্যাটার হিসেবে অকিলকে ফেরান তাসকিন। তবে শুধু বোলারদের নয়, এ জয়কে দলীয় চেষ্টার ফল মানছেন অধিনায়ক লিটন। তিনি বলেন, ‘বোালারদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। আমরা যখনই উইকেট নেই আক্রমণে যে-ই আসুক, উইকেট এনে দিয়েছে। সবটুকুই দলীয় প্রচেষ্টার ফসল।’