জুলুম-অত্যাচার করে সরকার নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখতে পারেনি : রিজভী
প্রথম নিউজ, ঢাকা (নিজস্ব প্রতিবেদক): সদ্য কারামুক্ত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে দিনভর ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। এসময় রুহুল কবির রিজভী দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা আজ অনেক বেশি উজ্জীবিত। এই সরকার জুলুম অত্যাচার করে নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখতে পারিনি। আজকে যে লড়াই সেটি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই, বাকস্বাধীনতার ফিরিয়ে আনার লড়াই, সংবাদ পত্রের স্বাধীনতার লড়াই, মানুষেঅধিকার ফিরে পাবার লড়াই। তিনি বলেন আমি মুক্তি পাওয়ার পর যেভাবে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে তাতে আজ আমি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে আন্দোলন হচ্ছে, তারই প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, এই লড়াই কোনো ব্যক্তি বা দলের জন্য নয়। এটি দেশ বাঁচানোর লড়াই, একনায়কতন্ত্র থেকে মুক্ত হওয়ার লড়াই।
তিনি আরো বলেন, এই সরকারের হিংস্রতা শুধু রাজপথেই নয়, কারাগারেও। সেখানে রাজবন্দীরা অমানবিক জীবন-যাপন করছেন। আমাকে একা একটি প্রিজন ভ্যানে দাড়িয়ে আদালতে আনা হতো। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। গাড়ী ব্রেক করলে আমি পড়ে যেতাম। এর মাধ্যমে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে কোর্টের নির্দেশে আমার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ঈদের আগে আমি সবকয়টি মামলায় জামিন পেলেও ছটকো অজুহাতে আমাকে মুক্তি দেয়া হয়নি, পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদ করতে দেওয়া হয়নি। এসময় তিনি আটকের সময় তার পরিবারের প্রতি খোঁজ-খবর রাখার জন্য দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এদিকে, তিনি গতকাল বিকেলে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই তার বাসভবনে গিয়ে দলের হাজারো নেতাকর্মী তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আজ বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা, ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তর-দক্ষিণ, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিকদলসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মী তার আদাবরের বাসায় গিয়ে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এসময় রিজভীর স্ত্রী আরজুমান আরা বেগমসহ বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন,এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস,,হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, আব্দুস সালাম আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, আমিনুল হক, মীর সরাফত আলী সপু, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ডা. রফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, আসাদুল করিম শাহীন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং, কাজী সাইদুল আলম বাবুল, মজিবুর রহমান,মাহবুব হোসেন, ঢাকা জেলার সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, তানভীর আহমেদ রবিন, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বিএনপি নেতা মঞ্জুরুল করিম রনি, শাখাওয়াত হোসেন সবুজ, ব্রেকিং নিউজরে সম্পাদক মাইনুল হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা কাদের গনি চৌধুরী, প্রথম.নিউজের নির্বাহী সম্পাদক রাশেদুল হক, বাছির জামাল, পেশাজীবি নেতা ডা. শামীমুর রহমান, ডা. রফিকুল ইসলাম, ডা. আউয়াল, মৎস্যজীবী দলের মো. আবদুর রহিম, ওমর ফারুক পাটোয়ারী, ফজলে কাদের সোহেল, কেএম সোহেল রানা, এম সায়েম উদ্দিন সিয়াম, স্বেচ্ছাসেবক দলের ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, আরিফুর রহমান তুষার, যুবদলের মেহবুব মাসুম শান্ত, সোহেল আহমদ, ছাত্রদলের সাবেক নেতা ওমর ফারুক কাওসার, ঢাবি ছাত্রদলের রাজু আহমেদসহ অসংখ্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রায় চার মাস তথা ১৪০ দিন পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। ঈদের আগেই ৫০ মামলার সবকটিতেই জামিন পেয়েছিলেন রিজভী।
সর্বশেষ মানহানির অভিযোগে গোপালগঞ্জে করা এক মামলায় গত ১৮ এপ্রিল জামিন পেলেও জামিননামার মূল কপি কারাগারে না পৌঁছানোর কারণে ঈদের আগে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।পরে ওই রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে রিজভীসহ চার শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন পল্টন, মতিঝিল, রমনা ও শাহজাহানপুর থানায় পৃথক চারটি মামলা করে পুলিশ।পল্টন ও মতিঝিল থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রুহুল কবির রিজভীকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে আরও ৫০টির অধিক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।