প্রথম নিউজ, অনলাইন: ২৪-এর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পটভূমি রচনার প্রধান নায়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, 'জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পটভূমি রচনার প্রধান নায়ক হচ্ছেন তারেক রহমান। আমরা দেখেছি, যখন ছাত্র-জনতা বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তখন তিনি দলের সকল নেতাকর্মীকে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয় থাকার জন্য। কখনো লন্ডন থেকে বক্তব্যের মাধ্যমে, কখনো আমাদের মাধ্যমে তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এই আন্দোলনে আমাদের ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী এবং বিএনপির বহু সমর্থক আত্মত্যাগ করেছেন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য।'
বুধবার (২৫ জুন) নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে 'আমরা বিএনপি পরিবার'-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা সহায়তা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিডিআর হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, 'আমরা বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যেসব তথ্য জানতে পারছি, তাতে দেখা যাচ্ছে তদন্তকারীরা নানা কারণে গোপনীয়তা রক্ষা করছেন। যদিও তারা বলেছেন, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। হয়তো বিশেষ কারণে নামগুলো এখনও প্রকাশ করছেন না। তবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যে ছিল, সেটা তারা স্বীকার করেছেন। অর্থাৎ, পরিকল্পিতভাবেই পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। হয়তো কারও স্বার্থে, প্রভুদের স্বার্থে কিংবা অন্য কোনো স্বার্থে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল তৎকালীন যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল তাদের মাধ্যমে।'
তিনি বলেন, 'এমন দেশ তো এই দেশের মানুষ চায়নি। যে দেশ যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হতে গিয়ে এত প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করেছে, সেই দেশে নিজের দেশের সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে নানা ধরনের প্রলাপ তৈরি করেছিল। তারা যে বয়ান তৈরি করত, সেগুলোর মধ্যেও ছিল পরিকল্পনা। যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ — এসব নানা ধরনের কথা বলে গোটা দেশটাকে প্রতিনিয়ত বিভাজন করে রেখেছিল।'
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, 'আজকে একটি সংবাদ পড়ে একদিকে যেমন বেদনাহত হয়েছি, অন্যদিকে আশাবাদীও হয়েছি। অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে গুম করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই তা অস্বীকার করেছেন। যারা অস্বীকার করেছেন, তাদের নামসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এ ধরনের নথিও পাওয়া গেছে। আর যারা রাজি হয়েছিলেন, তারা তো গুম-খুন করেছেন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে, তার নৈকট্য পাওয়ার আশায়। এই অবস্থার মধ্যেও যারা অন্যায় আদেশ মানেননি, তাদের পুরস্কৃত করা উচিত। কারণ তারা শেখ হাসিনার হিংস্রতার মধ্যেও গুম করতে অস্বীকার করেছেন। যতটুকু আমরা জানি, তাতেই তো আমাদের রক্ত হিম হয়ে যায়।'
রিজভী বলেন, 'পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত। আর যারা শেখ হাসিনার হিংস্রতার মধ্যেও অন্যায় কাজ করেনি, তাদের পুরস্কৃত করা উচিত। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করব।'
তিনি আরও বলেন, '৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত নানাভাবে ও নানা কারণে ১৭৭ জন মানুষের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যারা এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তারা যে দলেরই হোক বা যে মতেরই হোক, সরকারের উচিত আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার করা। সরকার আইন-শৃঙ্খলা দেখবে, কোনো দলের রং নয়, কে ক্ষমতাশালী বা ধনী — তা নয়; বরং অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিত।'
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, 'মানুষ এই সরকারের কাছে আইনের শাসন প্রত্যাশা করে। আপনারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, যাতে নির্বাচিত সরকার এলে সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করে। কেন এই সময়ে এসে এত খুন-জখম, ডাকাতি, চুরি, হত্যাকাণ্ড হবে — এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। বলা হচ্ছে, পুলিশের মধ্যে এখনো আস্থা ফিরে আসেনি। কেন ফিরবে না?'
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট — প্রথমেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। একটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে যদি স্থানীয় নির্বাচন হয়, তাহলে সে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে। যারা নির্বাচিত হবেন, তারা প্রমাণ করতে পারবেন নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে। ১৬-১৭ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সেই কারণে জাতীয় নির্বাচন আগে হওয়াই বাঞ্ছনীয় — এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান অত্যন্ত সুস্পষ্ট।'
আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্যসচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুনের সভাপতিত্বে, সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম রনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফউদ্দিন বকুল, প্রমুখ।