জনপ্রিয় হাইকিং
অষ্টম শ্রেণির শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে তোমরা হাইকিং সম্পর্কে জেনেছ। স্কাউটিং কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম হলো হাইকিং। বর্তমানে এটি সাধারণ মানুষের মধ্যেও জনপ্রিয়—

প্রথম নিউজ, অনলাইন: পাহাড়, বন, উপত্যকা কিংবা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের অন্যতম উপায় হলো হাইকিং। হাইকিং শুধু হাঁটা নয়, এটি এমন এক অভিজ্ঞতা, যা শরীর ও মনের জন্য সমানভাবে উপকারী। শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি ও আত্ম-অন্বেষণের জন্যও হাইকিংয়ের জুড়ি নেই। শহুরে জীবনের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই এখন প্রকৃতির কাছে ছুটে যায়।
হাইকিং সেই সুযোগ করে দেয়। দুর্গম পথে হাঁটার সময় দেহের প্রতিটি পেশির ব্যবহার হয়, ফলে বলা চলে এটি এক ধরনের পূর্ণাঙ্গ শরীরচর্চা। নিয়মিত হাইকিং করলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতার ঝুঁকি কমে। সেই সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতা বাড়ায়, পায়ের মাংসপেশি শক্তিশালী করে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
তবে হাইকিংয়ের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে প্রকৃতির সান্নিধ্যে। সবুজ বন, পাহাড়ি ঝরনা, দূরের আকাশ ছোঁয়া পর্বতশৃঙ্গ—এসবের মাঝে হাঁটলে মন প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। গবেষণা বলছে, প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটালে মানসিক চাপ কমে, একাগ্রতা বাড়ে এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। যারা নিয়মিত হাইকিং করেন, তাদের মধ্যে হতাশা ও দুশ্চিন্তার পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে।
হাইকিং করতে হলে কিছু প্রস্তুতি জরুরি। সবার আগে দরকার মানানসই পোশাক ও আরামদায়ক জুতা। ছোট পাহাড়ি পথে চলতে হলে গ্রিপ ভালো এমন জুতা পরা উচিত। সঙ্গে রাখতে হবে পানির বোতল, স্ন্যাকস, ফার্স্ট এইড কিট ও আবহাওয়া অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। বাংলাদেশেও এখন হাইকিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
সিলেটের রাতারগুল, বান্দরবানের কেওক্রাডং ও তাজিংডং, রাঙামাটির সাজেক কিংবা সুন্দরবনের গহিন বন—এই জায়গাগুলো হাইকিংপ্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে।
অনেকে হাইকিং ও ট্রেকিংকে একই ভাবেন। তবে এদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য আছে। মূলত পথের ধরন, সময়কাল এবং শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা এই দুই ক্ষেত্রে আলাদা। হাইকিং সাধারণত কম সময়ের জন্য হয় এবং অপেক্ষাকৃত সমতল বা সহজ পথ ধরে এগিয়ে চলে। এটি সাধারণত এক দিনের জন্য এবং তেমন কোনো বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না।
অন্যদিকে ট্রেকিং হলো দীর্ঘ সময়ের জন্য পাহাড়ি, দুর্গম বা অপ্রশস্ত পথে হাঁটা, যা কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। ট্রেকিংয়ে শারীরিক পরিশ্রম বেশি লাগে এবং উপযুক্ত সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়, যেমন—ব্যাকপ্যাক, ট্রেকিং পোশাক ও জুতা। সাধারণত হাইকিং অবসর সময়ের আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য করা হয় আর ট্রেকিং বেশি চ্যালেঞ্জিং ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত।