চ্যানেল ওয়ানের সম্প্রচারে বাধা নেই

প্রথম নিউজ, ঢাকা : বন্ধ থাকা বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল ওয়ান’-এর সম্প্রচারে ফিরতে বাধা নেই। এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা আপিল আবেদনের ওপর সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ চ্যানেল ওয়ানের মালিক গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট পলাশ চন্দ্র রায় ও ব্যারিস্টার মারুফ।
চ্যানেল ওয়ানের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, চ্যানেল ওয়ানের বিষয়ে আপিল আবেদন পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি হয়েছে। শুনানি নিয়ে চ্যানেলের পক্ষে করা আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ‘চ্যানেল ওয়ান’ পুরো উদ্যমে সম্প্রচারে কোন বাধা নেই।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৭ এপ্রিল চ্যানেল ওয়ানের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) চ্যানেল ওয়ানের ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ বন্ধ করার পর টিভি চ্যানেলটির কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে। কিন্তু আবেদনটি খারিজ হয়ে যায়। সেসময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অনুমতি না নিয়ে চ্যানেল ওয়ান কর্তৃপক্ষ আমদানি করা সম্প্রচার যন্ত্রপাতি বিক্রি করেছে। আর সেজন্য চ্যানেলটি বন্ধ করা হয়েছে।
চ্যানেল ওয়ান ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের মালিকানাধীন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলায় কারাগারে ছিলেন। সরকার পতনের পর দীর্ঘ কারাভোগ শেষে সম্প্রতি জেল থেকে মুক্তি পান তিনি।
গিয়াসউদ্দিন আল মামুন মুক্তি পেয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিল শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
‘প্রিয় দর্শক সম্ভাবনার কথা বলে’— এ স্লোগানে আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে ২০০৬ সালের ২৪ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ওয়ান। দীর্ঘপথ পরিক্রমায় দেশ-বিদেশে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে চ্যানেলটি।
কিন্তু ২০১০ সালের ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা ৪১ মিনিটে বিটিআরসি কর্মকর্তারা চ্যানেলটির গুলশান অফিসে গিয়ে সম্প্রচার বন্ধ করে দেন। এতে সেখানে কর্মরত ৪০০ সাংবাদিক, কর্মচারী ও কলাকুশলী বেকার হয়ে পড়েন।
বন্ধের কারণ হিসেবে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু বলেন, টেলিযোগাযোগ আইন লঙ্ঘন করে চ্যানেল ওয়ান তাদের সম্প্রচার যন্ত্রপাতি ব্যাংকে বন্ধক রেখে পরবর্তীকালে সেগুলো নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে চ্যানেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, ভিন্নমত দমন ও কণ্ঠরোধের অংশ হিসেবে চ্যানেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধের আগে চ্যানেল ওয়ানের সংবাদ ও টকশোর ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সরকারের রোষানলে পড়ে টিভি পর্দা থেকে হারিয়ে যায় চ্যানেলটি।
চ্যানেলের অন্যতম পরিচালক মাজেদুল ইসলাম বলেছিলেন, তারা আইনের আশ্রয় নেবেন।