গডফাদার ও টাকা পাচারকারীদের জননী শেখ হাসিনা: রিজভী

শনিবার (৫ অক্টোবর) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিউয়ার রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানানো শেষে এসব কথা বলেন তিনি। 

গডফাদার ও টাকা পাচারকারীদের জননী শেখ হাসিনা: রিজভী

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ফ্যাসীবাদী শেখ হাসিনার শাসনামলের মতো যেন আদালত পরিচালিত না হয়; সেই নির্মম আদালত, নির্মম বিচার ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশে সত্যিকার অর্থে একটি আইনের শাসনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক।’ শনিবার (৫ অক্টোবর) বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিউয়ার রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানানো শেষে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান রিজভী। 

রিজভী বলেন, ‘গতকাল একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে; শেখ হাসিনার সঙ্গে গোপালগঞ্জের একজন ছাত্রলীগ নেতার। ছাত্রলীগ নেতা বলছেন; আপা পুলিশ হানা দেয় প্রতিদিন পাঁচ-ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। অথচ আপনি (শেখ হাসিনা) তো ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি সত্যিকার প্রধানমন্ত্রী থাকে সেখানে আইনের শাসন থাকে। যিনি অপরাধ করে অপরাধীদের সাজা হয় সে যে দলেরই হোক। আপনি কী জানতেন না; আপনি পালিয়ে যাওয়ার পর মাত্র এক মাসও হয়নি স্বেচ্ছাসেবক দলের দিদারকে গোপালগঞ্জে প্রকাশ্যে দিবালোকে ছাত্রলীগ যুবলীগ কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এরপরও পুলিশ তাদেরকে পূজা করবে? তাদেরকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানাবে। আপনি (শেখ হাসিনা) গতকাল ছাত্রলীগের এই ছেলের সঙ্গে কথোপকথন করে আপনি যে বর্বর নিষ্টুর, রক্ত পান করা ছাড়া অন্য কোনো বিবেক আপনার নেই, মানবতা নেই সেটা আবার প্রমাণ করলেন। অথচ আপনি বলতে পারতেন; ওইখানে হত্যাকাণ্ড হলো কেন? ওইখানে অন্য একটি রাজনৈতিক দলের নেতা মারা গেল কেন? বলেন নি কারণ আপনি ছিলেন আওয়ামী লীগের জননী, গডফাদারদের জননী, টাকা পাচারকারীদের জননী। 
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন,' এই কারণেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বাইরে যে গণতন্ত্রের জন্য কথা বলেছে তাকে খুন-গুম-হত্যা করতে, তাদেরকে আয়নাঘরে আটকে রাখতে আপনার মনে এতোটুকু বিবেকবোধ কাজ করেনি। এখন আপনি উস্কানি দিচ্ছেন; রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে যেভাবে ছাত্রলীগ যুবলীগকে দিয়েছেন; একই কায়দা উস্কানি দিয়ে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে একটা রক্তাক্ত বাংলাদেশের আবহ তৈরি করে আপনি মনে করেছেন সেই সুযোগে বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন। তা এই দেশের মানুষ হতে দেবে না।’
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অপর্পনের উদ্দেশ্যে এখানে এসেছি। আপনারা জানেন মিথ্যা মামলায় বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল; গ্রেপ্তার করে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে ৭০ বছর। একটা অনাচারমূলক রাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত; শেখ হাসিনা যে মাফিয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন সেখানে হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ৭০ বছরের সাজা দেয়া হয়েছিল। অভিযোগ হাবিবুল ইসলাম হাবিব নাকি শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা করেছিল। আমরা সেদিনের ঘটনা জানি, হাবিবুল ইসলাম হাবীব ঢাকায় অবস্থান করছিল। আমাদের একটি প্রোগ্রাম ছিল ঢাকায় অথচ তার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে পরিকল্পিত মামলা সাজিয়ে এই মামলাটি দেয়া হয়। হাবিবুল ইসলাম হাবিব ৯০ এর গণঅভুত্থানের একজন তেজস্বীনেতা। সে ডাকসুর মিলনায়তন বিষয়ক সম্পাদক ছিলো। এরপর সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সভাপতি এবং নির্বাচিত এমপি; তার মতো একজন অপেক্ষাকৃত সাহসী তারুণ্যেদ্বীপ্ত নেতাকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নেতাকে যদি ধ্বংস করা যায় হাসিনা অত্যন্ত আনন্দ লাভ করেন তার ফ্যাসিবাদী কায়েম হয়।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন আজকে সাতক্ষীরা থেকে ছুটে আসা কত মানুষ শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে অবস্থান করছেন। এতেই প্রমাণিত হয় তার জনপ্রিয়তা ও দক্ষ সাংগঠনিক যোগ্যতা। এটা শেখ হাসিনা পছন্দ করেন নি। তাই মিথ্যা মামলা দিয়ে পর্যুদস্ত করার জন্য সেসহ(হাবিবুল) ৪৯জনকে সাজা দেয়া হয়েছে এবং কারাগারে একজন মারা গেছে। এই নিপীড়ন শেখ হাসিনা চালিয়েছেন। এই নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের রক্ত পান করেছেন তিনি। তারপরও টিকে থাকতে চেয়েছেন; ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছেন। তিনি যে লুটপাটের অভয়ারণ্যে তৈরি করেছিল বাংলাদেশ সেটা অব্যাহত রাখতে এমনভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৈরি করেছিলেন যাদের বিবেক আগেই কেড়ে নিয়ে ছিলেন। তাই নির্বিচারে স্কুলের ছাত্র, রাতুলের মতো বগুড়ার শিক্ষার্থী এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের গুলি করতে দ্বিধা করেন নি, হত্যা করতে দ্বিধা করেন নি। রিক্সাচালকদের হত্যা করতে দ্বিধা করেন নি এবং তার আগে ১৫ বছর গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ তাদের নেতাকর্মীকে গুম খুন বিচার-বর্হিভুত হত্যা করে শেখ হাসিনা মনে করেছিলেন তার এই যে স্বর্গ রাজ্য, লুটপাট ও মাফিয়া রাজ্য চিরজীবনের জন্য বহাল থাকবে। উনার(প্রধানমন্ত্রী) পিয়নের ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতি যেটা তিনি গর্ব করে বলেন। এরকম আরো কত ঘটনা প্রতিদিন।
রিজভী বলেন,'ওবায়দুল কাদেরের সড়ক বিভাগ থেকে ১৫ বছরে কত হাজার কোটি টাকা গেছে, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে এখন প্রতিদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। সুতরাং এই ধরণের লুণ্ঠন ও টাকা পাচারের দেশ তৈরি করার জন্য তিনি কাজ করেছেন।’
এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমসহ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।