গাজীপুরে নানি-নাতনির শরীরে পেট্রোল দিয়ে আগুন
দগ্ধরা হলেন- সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সানজিদা আক্তার আয়েশা (১৩) ও তার নানি বেবি বেগম (৫৫)। বেবি বেগমের বাড়ি ঝালকাঠির নলসিটি উপজেলায়।
প্রথম নিউজ, গাজীপুর: গাজীপুরে এক স্কুলছাত্রী ও তার নানির শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের দুজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধরা হলেন- সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সানজিদা আক্তার আয়েশা (১৩) ও তার নানি বেবি বেগম (৫৫)। বেবি বেগমের বাড়ি ঝালকাঠির নলসিটি উপজেলায়। সপ্তাহখানেক আগে তিনি নাতনি সানজিদাকে দেখতে গাজীপুরে এসেছিলেন।
দগ্ধ সানজিদার বাবা শফিকুল ইসলাম শফিক সাংবাদিকদের জানান, রোববার দুপুরে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার হাজী নুরুল ইসলাম মডেল একাডেমির ছাত্রী সানজিদা তার নানির সঙ্গে হেঁটে স্কুল থেকে শিরিরচালা গ্রামের বাসায় ফিরছিল। বাসার কাছে আসতেই রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে সৎ ভাই বখাটে যুবক শুভ (২১), সাব্বির (২১)সহ তিন যুবক ও দুই নারী মিলে তাদের পথরোধ করে। এক পর্যায়ে তাদের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে সেখান থেকে তারা পালিয়ে যায়।
পালিয়ে যাওয়া শুভ মিয়া নরসিংদীর মনোহরদী থানার আর্জুনচর গ্রামের সুলতান ফকিরের ছেলে আর সাব্বির হোসেন ময়মনসিংহের ভালুকা স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে। দগ্ধদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নিভিয়ে তাদেরকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাতে তাদের ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।
তিনি আরও জানান, দগ্ধ সানজিদার মা ইভা ইসলাম ছিলেন তার প্রথম স্ত্রী। ২০১৩ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর ২০১৫ সালে বিয়ে করেন মনিরা বেগমকে। মনিরার আগের সংসারের ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় বিয়ের পর মনিরার আগের সংসারের দুই ছেলেই খারাপ পথে চলে যায়। সেজন্য দুই ছেলেকে তার বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। পারিবারিক বিরোধের জেরে গতমাসে দ্বিতীয় স্ত্রী মনিরাও সংসার ছেড়ে চলে যান এবং তাকে ডিভোর্স লেটার পাঠান।
তিনি আরো জানান, বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সময় তার দ্বিতীয় স্ত্রী মনিরা প্রায় ৯ লাখ টাকার চারটি চেক চুরি করে নিয়ে যান। চেক চুরির ঘটনায় শফিক মামলা করেন। মামলা করার কারণে মনিরার ছেলে শুভ তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। গত বৃহস্পতিবার সানজিদা স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে শুভসহ তিনজন মিলে সানজিদাকে নানা হুমকি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার শুভ তার সহযোগীদের নিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের স্বজনরা জানান, আশঙ্কাজনক অবস্থায় সানজিদাকে আইসিইউতে আর নানি বেবিকে ফিমেল এইচডিইউতে ভর্তি রাখা হয়েছে।
এবিষয়ে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহতাব উদ্দিন জানান, সানজিদার বাবা ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী সফিকুলের সঙ্গে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এই ঘটনাটি ঘটেছে। ভিকটিমের পরিবারের লোকজন তাদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এখনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম করেছে এবং অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।