খালের ভাঙনে বিলীন সড়ক, বিপাকে হাজারো মানুষ

খালের ভাঙনে বিলীন সড়ক, বিপাকে হাজারো মানুষ

প্রথম নিউজ, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার তস্তিপুর গ্রামে খালের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে পুরো সড়ক। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই গ্রামের হাজারো মানুষ। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার তস্তিপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে পাশের সিলিমপুর গ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত সড়কটির বেশ কিছু অংশ পাশের খালে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ওই গ্রামের হাজারো মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।
  
এছাড়া মুন্সীগঞ্জের ঐতিহাসিক তালতল- গৌরগঞ্জ খালের ভাঙনে বিলীনের পথে তস্তিপুর গ্রামটি। একই খালের ভাঙনে শিলিমপুর, ভোরন্ডা গ্রামের বাড়িঘর খালের গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বর্ষার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলছে। এ বছরের ভাঙনে শুধু তস্তিপুর গ্রামের কমপক্ষে ১০টি  বসত ভিটি বিলীন হয়ে গেছে। শতাধিক ভিটা ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে ওই  গ্রামের মানুষদের। ভিটেমাটি হারানোর ভয়ে খালের ভাঙন হতে রক্ষার জন্য গত ২৪ জুন  সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। তারপরেও ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আতঙ্ক বাড়ছে ভাঙন কবলিত মানুষদের।

স্থানীয়রা বলেন, ৫ বছরে এই খালের ভাঙনে কয়েকশ বাড়িঘর খালের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। এ বছর বর্ষার শুরুতেই তস্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে তস্তিপুর মন্দির পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ বছর ভাঙনে শহিদ খান, আক্তার শেখ, মুক্তার শেখ, আল-আমিন শেখ, বাদশা শেখ, আখলেছ ভুইয়া ,দেলোয়ার শেখ, মুজিবুর, আফজাল মালেকসহ ১০টি পরিবারের ঘরের ভিটি খালের পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। বর্ষার শুরুতে যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে এতে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এ বছরই আমাদের তস্তিপুর গ্রামটি খালে বিলীন হয়ে যাবে।

স্থানীয় সবুজ ভুঁইয়া বলেন, বিগত ৫ বছর যাবৎ এ খালটি ভাঙ্গছে।  ২ বছর আগে ভাঙন রোধে খালের পারে কয়েকস্থানে বালু  ভর্তি জিএ ব্যাগ ফেলানো হয়েছিল। কিন্তু ব্যাগ ফেলাইছে ঠিকই। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ব্যাগগুলো পানির স্রোতে ভেসে ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

শহিদ খান বলেন, খালের পাশে আমাদের বিশাল বাড়িটি আজ ৫ বছর ধরে ভাঙছে। ভাঙতে ভাঙতে এখন শুধু আমার ঘরের ভিটাটুকু আছে। গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সড়কটি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। সড়কটি দিয়ে স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ মসজিদে মানুষের যাতায়াত করতো। আমাদের গ্রামের ভিতর দিয়ে এমন কোনো জায়গা নেই যেখান দিয়ে মানুষ এখন যাতায়াত করতে পারবে। আমরা খুব চিন্তায় আছি।


মোখলেছ ভুঁইয়া বলেন, কয়েকদিন যাবৎ বৃষ্টির হচ্ছে। বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাঙনও বাড়ছে। কয়েকদিন আগে আমরা মানববন্ধন করলাম। সরকার কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।

মো. জামাল হাওলাদার বলেন, একদিকে বর্ষার স্রোত বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে এ খাল দিয়ে পদ্মা নদী হতে বালু নিয়ে অবৈধ বাল্কহেড চলাচল করছে । স্রোত আর বাল্কহেডের ঢেউয়ে আমাদের বাড়িঘরগুলো দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে।

তস্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আম্বিয়া বেগম বলেন, যেভাবে খালটি ভাঙছে তাতে এ রোধে ব্যবস্থা না নিলে  আমাদের স্কুলটি খালের ভাঙনে বিলীন হয়ে যাবে। ২০১৮ সালে আমি এই স্কুলে যোগদান করি তখন হালকা বিলীন ছিল। কিন্তু এখন দিন দিন ভাঙন তীব্র হচ্ছে। সরকার যদি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে মনে হয় এ বছরই আমার স্কুলটা খালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে ভাঙন উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রকিবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর আমরা ওই খালের ভাঙন রোধে কাজ করেছি। আমরা সাধারণত যে সমস্ত স্থানে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকে সে সমস্ত স্থানে আগে কাজ করে থাকি। ওই এলাকায় ভাঙন সর্ম্পকে আমাদের কেউ অবহিত করেনি। স্থানীয়দের জনপ্রতিনিধি কিংবা নির্বাহী কর্মকর্তা ডিও লেটার দিয়ে আমাদের দ্রুত কাজ করতে বললে আমরা দ্রুত কাজ করি। তারপরেও খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
 
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোডেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী  সুব্রত দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তো প্রতিবছরই ভাঙন রোধে কাজ করি। এ বছর ওই এলাকায় ভাঙন চলছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি কিংবা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের এখনো অবহিত করেনি। তারা ডিও লেটার দিয়ে এ ব্যাপারে অবহিত করলে আমরা অবশ্যই কাজ করব।