কুষ্টিয়ায় সান লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানীর বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ 

অফিসে মেয়েদের বেডরুমের ব্যবস্থা

কুষ্টিয়ায় সান লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানীর বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ 

প্রথম নিউজ, হাসানুল কবির নাজির কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় সান লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বীমার মেয়াদ পূর্তির ৫-৬ বছর হয়ে গেলেও তাঁদের টাকা ফেরৎ দিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গ্রাহকদের বই জমা নিয়ে নিয়েছেন ঠিকই।এছাড়াও গ্রাহকরা পাওনা টাকা চাইতে আসলে আওয়ামী সরকারের নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়। 

রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর)  কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস মোড় এলাকায় ঢাকা সড়ক সংলগ্ন সান লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের কুষ্টিয়া এরিয়া অফিসে বীমার টাকা চাইতে আসা গ্রাহকরা এসব অভিযোগ করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুষ্টিয়া শহরের ঢাকা সড়ক সংলগ্ন চৌড়হাস মোড় এলাকায় একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায়  অবস্থিত সান লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের এরিয়া অফিসে রবিবার   দুপুর ১ টার দিকে বেশ কয়েকজন গ্রাহক তাঁদের পাওয়া টাকা চাইতে এসেছেন। এসব গ্রাহকদের সকলেরই বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে ৫-৬ বছর আগে। তারপরও তাঁদের বীমার টাকা ফেরৎ দেওয়া হচ্ছে না।টাকা চাইতে আসলে অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বিভিন্ন টালবাহানা করেন এবং টাকার জন্য নিত্য নতুন দিন-তারিখে যোগাযোগ করার কথা বলেন। কিন্তু টাকা দেন না। গ্রাহকদের বীমার বই জমা নিয়ে ৫-৬ বছর ধরে এরকম হয়রানি করে আসছেন তারা। অনেক গ্রাহক বীমার টাকা পেতে গরু-ছাগল বিক্রি করে ১০-১২ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও টাকা পাচ্ছেন না।তাছাড়া অফিসটা প্রথমে শহরের মধ্যে ছিলো। সবাই জায়গাটা চিনতো। কিন্তু অনেকটা নীরবেই অফিসটাকে স্থানান্তরিত করে শহরের বাইরে আনা হয়েছে। তাই অনেকেই এখন অফিসটা চেনেন না বলে জানান বেশ কয়েকজন গ্রাহক।

গ্রাহকরা কুষ্টিয়া এরিয়া অফিসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি) আব্দুল হালিমের (৫৩) কাছে টাকার জন্য যান এবং টাকা দিবেন কি-না জানতে চান।তিনি কোম্পানির ফান্ড ঘাটতির কারণে তাঁদের টাকা দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান।কোম্পানির ফান্ড ঘাটতির দায় গ্রাহকরা কেন নিবে তা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সরকারের নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেকের বোন। আপনারা তাঁর কাছে যান।এছাড়াও এই অফিস শত শত গ্রাহকদের লক্ষ লক্ষ বীমার টাকা এভাবে আটকে রেখেছেন বলে একটি সূত্র জানায়।এভাবেই শত শত অসহায়, দরিদ্র ও অস্বচ্ছল গ্রাহকদের হয়রানি করা হচ্ছে।

গ্রাহক হয়রানি ছাড়াও এই অফিসের ভেতরে একটি শোবার ঘর (বেড রুম) এর সন্ধান মিলেছে। ঘরে একটি খাট পাতা রয়েছে। সেখানে ৪ জন যুবতী মেয়ে থাকে বলে জানা গেছে। কোনো অফিসে বেড রুম রাখা বৈধ কি-না বা সেখানে কোনো অনৈতিক কর্মকান্ড চলে কি-না এব্যাপারে বেশকিছু গ্রাহক এবং উপস্থিত লোকজন প্রশ্ন তুলেছেন। কুষ্টিয়া এরিয়া অফিসের ইভিপি আব্দুল হালিমের গ্রাহক হয়রানির এ কর্মকান্ড  একপর্যায়ে গ্রাহকদের প্রচেষ্টায় থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়।পুলিশ এসে ইভিপি আব্দুল হালিম এবং গ্রাহকদের থানায় নিয়ে যান।

উপস্থিত গ্রাহকরা বলেন,আমাদের বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে ৫-৬ বছর আগে।কারো ২০১৭ সালে,কারো ২০১৯ সালে।অফিসে ঘুরে ঘুরে চটি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু টাকা পাচ্ছি না।তাদের চমকদার কথায় ভবিষ্যতের চিন্তা করে বীমা করে এখন চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।এছাড়া কেউ কেউ ছাগল,মুরগী, বিক্রি বীমার টাকা পেতে ১০-১২ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েও বীমার টাকা পাচ্ছেন না বলে জানান।

এ ব্যাপারে সান লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের কুষ্টিয়া এরিয়া অফিসের ইভিপি আব্দুল হালিম জানান,কোম্পানির ফান্ড ঘাটতির কারণে গ্রাহকদের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। তবে যেসকল গ্রাহক কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাঁদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ফান্ড ঘাটতির দায় গ্রাহকদের কেন এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।তবে গ্রাহকদের টাকা কোম্পানিতে আছে কিন্তু কোম্পানির ফান্ড ঘাটতি বলে জানান তিনি। 

কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)  সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, সন্ধ্যার পরে উভয়পক্ষ আসবে। শুনানি হবে। তারপর একটা ব্যবস্থা হবে। তবে বেডরুমটা যদি অনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হয় তবে সেটা অপরাধ হবে বলেও জানান তিনি।