কম যায় না রূপসী বাংলাও, ভ্যাট ফাঁকি ১৮.৮৩ কোটি: আদায়ে দফায় দফায় চিঠি

আদালতের আদেশে ২০০৫ সালের জুলাই থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্কসহ মুসক বাবদ ওই টাকা নিরঙ্কুশ বকেয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

কম যায় না রূপসী বাংলাও, ভ্যাট ফাঁকি ১৮.৮৩ কোটি: আদায়ে দফায় দফায় চিঠি
ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল

প্রথম নিউজ, ঢাকা: অভিজাত হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের পর এবার দেশের স্বনামধন্য পাঁচ তারকামানের হোটেল রূপসী বাংলা, বর্তমানে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল, ঢাকার ১৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সম্পূরক শুল্কসহ মুসক বা ভ্যাট ফাঁকির চূড়ান্ত প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৃহৎ করদাতা ইউনিট বা ভ্যাট বিভাগ।
 
আদালতের আদেশে ২০০৫ সালের জুলাই থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্কসহ মুসক বাবদ ওই টাকা নিরঙ্কুশ বকেয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পানশালা (মদের বার) ও ড্যান্স ফ্লোরের বিভিন্ন সেবায় প্রযোজ্য ওই শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধে পাঁচ তারকা হোটেল কর্তৃপক্ষকে দফায় দফায় চিঠি ও নোটিশ দিয়ে যাচ্ছে ভ্যাট বিভাগ।

সর্বশেষ গত ৭ জুন বৃহৎ করদাতা ইউনিট থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে বকেয়া ভ্যাট সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য প্রথম দফায় মূল্য সংযোজন কর বিধিমালা ১৯৯১ এর ৪৩ বিধি অনুযায়ী নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আদায় না হলে দ্বিতীয় দফায় নোটিশ দেওয়া হবে। এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে ১৮ মে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) ভ্যাট বিভাগের কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর সই করা চিঠিতে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে শুল্কসহ ভ্যাটের ১৮ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৪ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হোটেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়। তবে ফাঁকি দেওয়া টাকা এখনও জমা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে এলটিইউ-এর ভ্যাট বিভাগের কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

অন্যদিকে, ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকার জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা ফারিকা ফারিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই।’ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।


এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, রাজধানীর অভিজাত শ্রেণির মাস্তি ও বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বিলাসবহুল হোটেলগুলো। এর মধ্যে অন্যতম পাঁচ তারকামানের হোটেল রূপসী বাংলা, বর্তমানে যা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হিসেবে পরিচিত। অভিজাত হোটেলটির পানশালা ও ড্যান্স ফ্লোরের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কসহ ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল। গত ২০০৫ সালের জুলাই থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত শুল্ক বাবদ ভ্যাট পরিশোধ করেনি হোটেল কর্তৃপক্ষ। বৃহৎ করদাতা ইউনিটের ভ্যাট বিভাগ রাজস্ব ফাঁকির এ তথ্য উদঘাটন করে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পানশালা ও ড্যান্স ফ্লোরে মদসহ বিভিন্ন সেবাবাবদ রূপসী বাংলা হোটেল (বর্তমানে ইন্টারকন্টিনেন্টাল) ১৮ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৪ টাকা শুল্কসহ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আদায়ে দাবিনামা জারি করলেও দিতে অস্বীকৃতি জানায় হোটেল কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বকেয়া রাজস্ব আদায়ে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে সরকারের পক্ষে মামলা করে এলটিইউ ভ্যাট বিভাগ। মামলার রায় সরকারের পক্ষে আসায় হোটেল কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে রিট করে। ২০১৭ সালের ১২ জুলাই আপিল বিভাগ একই রায় দেন। রায়ে শুল্কসহ ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত হয়। কিন্তু মামলার চূড়ান্ত রায়ের পরও হোটেলটি রাজস্ব পরিশোধ না করে আপিল করে। সেখানেও তারা হেরে যায়। পরে অপরিশোধিত রাজস্ব আদায়ে চিঠি দেওয়া হয়।

গত ১৮ মে রূপসী বাংলা হোটেল ও সাবেক বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, রূপসী বাংলা হোটেলের (সাবেক বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড) সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন ও সিভিল রিভিউ পিটিশন (রিট পিটিশন নং- ৩৮৮৮/২০০৯, সিপি নং- ১৪২৫/২০১৭, সিভিল রিভিউ পিটিশন নং- ৫৪৪/২০১৭) মামলার রায় সরকারের পক্ষে জারি হয়েছে। অর্থাৎ আপনাদের প্রতিষ্ঠান থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ডিভিশনে দায়েরকৃত সিভিল রিভিউ পিটিশন মামলাটি ডিসমিশড হয়েছে। সুতরাং আদালতের প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী ২০০৫ সালের জুলাই থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কালের অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্কসহ মুসক বাবদ ১৮ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৪ টাকা বর্তমানে নিরঙ্কুশ বকেয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অতএব উক্ত সরকারি বকেয়া পাওনা আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দানপূর্বক ট্রেজারি চালানের মূল কপি এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের মূল্য সংযোজন কর বিভাগে দাখিলের জন্য অনুরোধ করা হলো।

প্রথম দফায় দেওয়া নোটিশে অর্থ আদায় না হলে দ্বিতীয় দফায় নোটিশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে এনবিআর
ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকা একটি বিলাসবহুল হোটেল। ঢাকার রমনায় এর অবস্থান। এটি ঢাকার প্রথম পাঁচ তারকামানের হোটেল। হোটেলটি চালু হয় ১৯৬৬ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকা নামে। এর স্থপতি ছিলেন উইলিয়াম বি. ট্যাবলার। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আন্তর্জাতিক রেড ক্রস এটিকে নিরপেক্ষ স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৮৩-এর আগ পর্যন্ত ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপ এটি পরিচালনা করতো, এরপর এটি শেরাটন নিয়ে নেয়। তখন এর নাম হয় শেরাটন, ঢাকা। ২০১১ সালে শেরাটন বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শেষ করবে বলে ঘোষণা দেয় এবং বাংলাদেশ সরকারকে এটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। এরপর এটির নাম হয় রূপসী বাংলা হোটেল। ২০১৩ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপ (ICHG) আবারও ফিরে আসবে বলে ঘোষণা দেয়। এরপর হোটেলটির সংস্কার কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকা নামে এর কার্যক্রম চালু করার কথা থাকলেও সংস্কারকাজ শেষ না হওয়ায় এটি উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি। ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করা হয়।

একই ধরনের ভ্যাট বকেয়া রয়েছে রাজধানীর অভিজাত হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের। বিলাসবহুল হোটেলটির কাছে ভ্যাট বিভাগের পাওনা ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা। প্রায় ছয় বছরে পানশালা (মদের বার) ও ড্যান্স ফ্লোরের বিভিন্ন সেবায় প্রযোজ্য ওই শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধে পাঁচ তারকা হোটেল কর্তৃপক্ষকেও দুই দফায় চিঠি দিয়েছে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বিভাগ। তবে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট এখনও আদায় হয়নি বলে জানা গেছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom