কাঁচা চামড়ার দাম কিছুটা বাড়লেও খুশি নন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

কাঁচা চামড়ার দাম কিছুটা বাড়লেও খুশি নন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

প্রথম নিউজ, ঢাকা : বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে দেশে কাঁচা চামড়ার বাজার মন্দা। ২০১৭ সালের পর থেকেই ঈদের সময় পানির দরে বিক্রি হয় কাঁচা চামড়া। গত বছরও ছিল একই দশা। তবে এবার দাম কিছুটা বাড়তি। লবণবিহীন প্রতিটি গরুর চামড়ার দাম মানভেদে বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। ভালো মানের গরুর চামড়া এবার এক হাজার থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সোমবার (১৭ জুন) রাজধানীর লালবাগ, সায়েন্সল্যাবসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে মৌসুমি ব্যবসায়ী, ফড়িয়া, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

১৭টি চামড়া বিক্রি করেছেন লালবাগের মাওলানা শফিউল ইসলাম। প্রতিটি চামড়ার দাম পেয়েছেন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। গরু জবাই করে দেওয়ার বিনিময়ে এসব চামড়া পেয়েছেন তিনি।

তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার দামে খুশি নন। তারা আরও বেশি দাম প্রত্যাশা করেছিল। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বেসরকারি একটি কোম্পানিতে কাজ করেন। পাশাপাশি গত ১০ বছর ধরে কোরবানি ঈদে চামড়া ব্যবসা করেন। রাজধানীর ভূতের গলি এলাকা থেকে গড়ে ৬০০ থেকো ৭৫০ টাকায় চামড়া কিনেছেন তিনি। সেগুলো বিক্রি করছেন ৮০০ টাকা দরে। সারাদিন একটা ভ্যান ও ৫ জন মানুষ খাটিয়ে খুব বেশি লাভ হচ্ছে না বলে দাবি তার।

 কামাল হোসেন বলেন, ‘যে আশা করে দাম দিয়ে মহল্লা থেকে চামড়া কিনছি সেই দাম পাচ্ছি না। এবার চামড়াপ্রতি ৫০ টাকা লাভ হচ্ছে। এটা দিয়ে কী করবো? আমরা ৫ জন কাজ করি, সঙ্গে একটা ভ্যানও আছে। মহল্লায় বেশি দামে কিনে তেমন লাভে বিক্রি করতে পারছি না।’

যদিও ট্যানারি মালিকদের দাবি তারা সঠিক মানের চামড়ায় ভালো দাম দিচ্ছেন। ২৭ স্কয়ার ফুটের চামড়া এক হাজার টাকা দরে কিনছেন। ৫০০ টাকায় কিনছেন ১৪ থেকে ১৮ স্কয়ার ফুটের চামড়া।এস-নুর লেদারের মালিক মোহাম্মদ জহির হোসেন বলেন, ‘আমরা ভালো দামে চামড়া কিনছি। চামড়ার দামও এবার ভালো। গড়ে ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় চামড়া কিনছি, গতবার এটা আশা করাও হয়নি। এবার চামড়ার দাম অনেক ভালো।’

চলতি বছর কোরবানির সময় এক লাখ ৬০ হাজার পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন রাজধানীর পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকার আড়তদারেরা। তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার লবণযুক্ত চামড়ার দাম বেড়েছে। এছাড়া আবহাওয়াও এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে। তাই তারা আশা করছেন— লবণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে লক্ষ্য অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করতে পারবেন।

আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে কাঁচা চামড়া কেনায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের লোকসান হবে না। পোস্তার একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, সরকারের নির্ধারিত দামে লবণযুক্ত চামড়া কিনছেন তারা। তবে ছাগলের চামড়ার কদর নেই। ছাগলের চামড়া ৮ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

পোস্তার আড়তদার জাকির হোসেন বলেন, ‘এবার বাজার গড়ে ঠিক আছে। আমরা ভালো দামে চামড়া কিনছি গত বছরের তুলনায়।’

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘গতবছরের থেকে প্রতিটা কাঁচা চামড়ায় দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বাড়তি। সরকার দুইভাবে দাম নির্ধারণ করেছে। একটা কাঁচা চামড়া পিচ হিসেবে ও শুকনা চামড়া স্কয়ার ফুট হিসেবে। সেভাবেই আমরা চামড়া কিনছি। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের লোকসান হওয়ার কথা নয়। গত বছর গড়ে প্রতিটা লবণ ছাড়া চামড়া ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার তা এবার ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন দাম পাচ্ছেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘তাদের অভিযোগ ঠিক না। ওরা (মৌসুমি ব্যবসায়ী) কম দামে মহল্লা থেকে চামড়া সংগ্রহ করেন। আমরা কিন্তু ঠিকই দাম দিয়ে চামড়া কিনছি।’প্রতিবছরের মতো এবারও পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এ বছর ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, গত বছর যা ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। অপরদিকে ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গত বছর যা ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। অর্থাৎ এ বছর ঢাকায় গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট গত বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ ৫ টাকা, আর ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।