একুশে পদকজয়ী সংগীতশিল্পী শবনম মুশতারী শয্যাশায়ী, কেউ রাখে না খোঁজ
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : ‘আমায় নহে গো ভালোবাসো শুধু/ ভালোবাসো মোর গান/ বনের পাখিরে কে চিনে রাখে/ গান হলে অবসান...’ প্রখ্যাত নজরুল সংগীতশিল্পী শবনম মুস্তারীর গাওয়া আহ্লাদি সেই কণ্ঠ এখনো সুরে সুরে কানে বেজে ওঠে।
সাধারণ সাজে তার চেহারা টিভির পর্দায় অন্যরকম এক আকর্ষণ সৃষ্টি করতো! কপালে ছোট্ট টিপ তার চেহারায় অন্যরকম দ্যূতি সৃষ্টি করতো। তার চুলের স্টাইলও ছিল অন্যদের চেয়ে আলাদা। খুব সাধারণের মাঝে যা তাকে অনন্য করে তুলতো। সেই গানের পাখি আজ শয্যাশায়ী।
একুশে পদক প্রাপ্ত এই শিল্পী স্মৃতিবিভ্রমসহ নানা অসুখে ভুগছেন। ভেঙে গেছে শরীর। তিনি বাকশক্তিহীন, চলাচলও করতে পারেন না। কাউকে চিনতেও কষ্ট হয়। কিছুই মনে রাখতে পারেন না।
তার অসুস্থ শরীরের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। যা সংস্কৃতি মহলে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। বিষাদ নামিয়েছে তার অনুরাগীদের অন্তরে।
শবনম মুশতারীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেল, শিল্পী ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন। দুই বছর আগে তার এই রোগ ধরা পড়ে। তবে গেল বছর তার জন্মদিনে স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন থেকেই সব ভুলে যাওয়ার সমস্যাটা প্রকট হয়।
ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিন মাস আগে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয় এই শিল্পীর। আপাতত বাসায় নার্স রেখে তার চিকিৎসা চলছে। তবে খাওয়াদাওয়া স্বাভাবিক আছে।
এই শিল্পীর পরিবার থেকে কিছু আক্ষেপও শোনা গেল। একসময় শিল্পীর সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ রাখতেন। তবে এখন আর কেউ খোঁজ রাখে না। দীর্ঘদিন ধরেই শিল্পী বিছানায় পড়ে আছেন, কেউ খবরও রাখেন না।
শিল্পীর বোন কণ্ঠশিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী গণমাধ্যমে বলেন, ‘আপা যে অসুস্থ এইটাই জানতো না কেউ। একটা মানুষ এতদিন ধরে যে কোনো খবরে নেই তাকে তো কেউ মিস করেনি। দেশের একজন জ্যেষ্ঠ শিল্পী, একুশে পদক পাওয়া। তার খোঁজ কি রাখবে না কেউ?
সিনিয়রদের প্রতি রাষ্ট্রের কোনো আগ্রহ থাকবে না? সম্প্রতি আপার জন্মদিনে তার এক বান্ধবী কিছু ছবি তোলেন যা ফেসবুকে ছড়িয়েছে। সেখান থেকে এখন সবাই জানতে পারছেন তার অসুখের বিষয়টা। কিন্তু তার আগে কি উচিত ছিল না শিল্পীর সম্পর্কে একটু খবর নেওয়া?’
সরকারিভাবে কোনো সাহায্য বা অনুদান প্রয়োজন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওরকম কিছু দরকার আপাতত নেই। আমরা চাই দেশ ও দেশের মানুষ একজন সিনিয়র শিল্পীর প্রতি যত্নশীল হোক। পয়সাপাতি দরকার নেই, হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছি কি না, খবর নিয়ে সেটা নিশ্চিত করতে পারে সরকার। এটুকু কি আশা করতে পারি না?
সবকিছু কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখতে হয়, ভাবতে হয়। তার একার পক্ষে তো সবার খবর রাখা সম্ভব না। সব খবর হয়তো তার কান পর্যন্ত পৌঁছায়ও না। কিন্তু সরকারের তো নির্দিষ্ট দায়িত্বশীল লোকজন আছেন যাদের উচিত একবার হলেও জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের খবর রাখা।
তারা কেমন আছে, তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না সেসবের খোঁজ নেয়া।’
সবার কাছে শবনম মুশতারীর জন্য দোয়া চেয়েছে তার পরিবার।
শবনম মুশতারীর জন্ম নওগাঁয়। তার বাবা নজরুল একাডেমীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব কবি তালিম হোসেন। মা মাফরুহা চৌধুরী ছিলেন দৈনিক বাংলা পত্রিকার মহিলাবিষয়ক পাতার সম্পাদক, কথাসাহিত্যিক। তার ছোট দুই বোন ইয়াসমিন মুশতারী ও পারভীন মুশতারীও নজরুল সংগীতশিল্পী।
বিবাহিত জীবনে শবনম মুশতারীর এক ছেলে, এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে পাইলট ও মেয়ে বিয়ে করে সংসারী। শবনম মুশতারীর দুই ভাই শাহরিয়ার চৌধুরী ডেটা অ্যানালিস্ট ও হাসনাইন চৌধুরী বিমানের ক্যাপ্টেন।
ষাটের দশকে সংগীতজীবন শুরু করেন শবনম। আধুনিক ও নজরুলসংগীতে তার ১০টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘লাইলী তোমার এসেছে ফিরিয়া’, ‘বেস্ট অব শবনম মুশতারী’, ‘প্রিয় কবির প্রিয় গান’, ‘প্রিয় এমন রাত’ প্রভৃতি।
তার কণ্ঠে জনপ্রিয় হওয়া নজরুল গানের মধ্যে উল্লেখ করা যায় ‘পিয়া পিয়া পিয়া’, ‘আমায় নহে গো ভালোবাস’, ‘মনে পড়ে আজ’, ‘তুমি শুনিতে চেয়ো না’, ‘সবার কথা কইলে’ ইত্যাদি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: