ইরানের বিক্ষোভ নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচিত প্রিয়াংকা চোপড়া

প্রথম নিউজ, বিনোদন ডেস্ক: ইরানে পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুতে নিন্দা জানিয়ে কড়া সমালোচনার শিকার হয়েছেন ভারতের অভিনেত্রী ও জাতিসংঘের শুভেচ্ছদূত প্রিয়াংকা চোপড়া। দেশে নারী ইস্যুতে তিনি নীরবতা পালন করে, ইরান ইস্যুতে সরব হওয়ার কারণে এই সমালোচনা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। বলিউডের ৪০ বছর বয়সী এই নায়িকা এখন অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। গত সপ্তাহে তিনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানে মাহসা আমিনি হত্যার প্রতিবাদ বিক্ষোভে সমর্থন দিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। এতে বলেছেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারের বিরুদ্ধে যেসব নারী ইরানে বিক্ষোভ করছেন, তাদের নিয়ে তার ভয় হচ্ছে। প্রিয়াংকা চোপড়া তার ইনস্টাগ্রামে আরও লিখেছেন, জোরপূর্বক যুগের পর যুগ ধরে যে কণ্ঠকে স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে, তা যথার্থই একটি আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়বে। তারা থামবে না এবং তাদেরকে থামিয়ে দেয়া উচিত হবে না। উল্লেখ্য ইনস্টাগ্রামে প্রিয়াংকার অনুসারীর সংখ্যা কমপক্ষে ৮ কোটি ২০ লাখ। তিনি বিক্ষোভকারী নারীদের সাহস ও উদ্দেশ্যের প্রশংসা করেছেন। লিখেছেন, আক্ষরিক অর্থেই আপনাদের জীবন ঝুঁকিতে রাখা সহজ কাজ নয়। পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা এবং আপনাদের অধিকার আদায়ের লড়াই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু আপনাদের জীবনের মূল্য কি সেদিকে না তাকিয়ে প্রতিদিনই আপনারা, নারীরা সাহসী হচ্ছেন।
কিন্তু প্রিয়াংকা চোপড়ার এই পোস্টের সমালোচনা করেছেন সমালোচকরা। তারা বলেছেন, তিনি নির্বাচিত খাত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছেন। কারণ, ভারতে মুসলিম নারী ইস্যুতে তিনি কোনো কথা বলেন না। সম্প্রতি হিজাব পরা নিয়ে মুসলিম নারীরা যে আক্রমণের শিকার হয়েছেন তা নিয়ে প্রিয়াংকা কথা বলেননি। এ ইস্যুতে নয়া দিল্লিতে অবস্থানরত কবি ও অধিকারকর্মী নাবিয়া খান বলেছেন, তিনি আশা করেন ভারতীয় একজন সেলিব্রেটি কথা বলবেন তার নিজের দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে। তিনি বলেন, তাদের দায়দায়িত্ব আছে। কথা বলার মতো অবস্থান আছে। কিন্তু তারা এসব ক্ষেত্রে দেখে যাওয়ার নীতি অবলম্বন করেন। দেশের বাইরে যা ঘটে তা নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে মন্তব্য করেন ভারতের সেলিব্রেটিরা। এটা যথার্থ। কিন্তু ভারতে যেসব ঘটনা ঘটছে সে বিষয়ে তাদের চোখ বন্ধ করে রাখা কি ঠিক। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণে দক্ষিণের কর্ণাটক রাজ্যের মুসলিম হাজার হাজার মেয়ে স্কুল কলেজে যোগ দিতে পারছে না। এই নির্দেশ এসব শিক্ষার্থীর ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরোধী। নাবিয়া খান আরও বলেন, প্রিয়াংকা চোপড়া কথিত নারী ক্ষমতায়নের চ্যাম্পিয়ন। তার চোখে এসব ধরা পড়ে না। ওদিকে ইরানের প্রতিবাদ বিক্ষোভের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার জন্য পশ্চিমা কিছু প্রথম সারির নারী তাদের চুল কেটে ফেলেছেন। ভারতে একটি নেটওয়ার্কের উপস্থাপিকা একই কাজ করেছেন সপ্তাহান্তে। একটি নিউজ চ্যানেলের এই কর্মকাণ্ড দেখে খুশি হননি ভারতের মুসলিম অধিকারকর্মীরা। তারা বলেছেন, এর মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। টুইটারে মির্জা আরিফ বেগ লিখেছেন, প্রিয়াংকা চোপড়াকে ভুলে যান, টিভি উপস্থাপিকার চুল কেটে সংহতি জানিয়েছেন, যা হাস্যকর।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার পর ব্লাক লাইভস ম্যাটার প্রতিবাদ নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছিলেন প্রিয়াংকা চোপড়া। নারীবাদী এবং অধিকারকর্মী কবিতা কৃষ্ণা বলেন, প্রিয়াংকা ব্লাক লাইভস ম্যাটার বা ইরানে নারীদের বিক্ষোভ নিয়ে কথা বলেন, এটা ভাল। কিন্তু ভারতীয় একজন অভিনেত্রী হয়ে ভারতে যখন দাঙ্গাবাজরা পিটিয়ে মেরে ফেলে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে অপরাধ হয়, ইসলামভীতি দেখা দেয়, কৃষকদের আন্দোলনে সমর্থনের বিষয় আসে, তখন তিনি নীরব থাকেন। এসব ইস্যুতে তার নীরবতাই জোরালোভাবে তার দ্বিমুখী নীতিকে ফুটিয়ে তোলে। কবিতা কৃষ্ণা মনে করেন ইরানের বিক্ষোভ নিয়ে কথা বলে প্রিয়াংকা চোপড়া হলিউডে তার উদার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে চান।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews