ইরানে বিস্ফোরণের শব্দ মার্কিন গণমাধ্যমে

দালিরিয়ান সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ বলেছেন, 'আপাতত কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর নেই'।

ইরানে বিস্ফোরণের শব্দ মার্কিন গণমাধ্যমে

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: মার্কিন মিডিয়ায় ইসরাইলের হামলার খবরে বলা হয়, তারা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের উপর নাকি প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া সে খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছে শুক্রবার মধ্য প্রদেশের ইসফাহানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসফাহান শহরের কাছে বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর ইরানের বেশ কয়েকটি শহরে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। সপ্তাহান্তে ইরান ইসরাইলে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করার পর ইসরাইল আগেই সতর্ক করেছিল যে, তারা পাল্টা আঘাত করবে। ইরানের ফারস বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ইসফাহান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমে শেখারি সেনা বিমান ঘাঁটির কাছে তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের মহাকাশ সংস্থার মুখপাত্র হোসেইন দালিরিয়ান বলেছেন, ‘বেশ কিছু’ ড্রোন সফলভাবে ভূপাতিত করা হয়েছে। দালিরিয়ান সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ বলেছেন, 'আপাতত কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর নেই'।

ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সি ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রের’ বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনা সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে বলে জানা গেছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এবিসি এবং সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, ইসরাইল হামলা চালিয়েছে। হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলার লক্ষ্যবস্তু পারমাণবিক স্থাপনা নয়। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এএফপিকে তাৎক্ষণিক কোনো  মন্তব্য করতে চায়নি।

সপ্তাহান্তে, আঞ্চলিক শত্রু ইসরাইলকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করতে ইরান প্রথম হামলা চালায়। ইরানের উৎক্ষেপণ করা ৩০০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের বেশিরভাগই ভূপাতিত করে ইসরাইল এবং কোনও  মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। দামেস্কে তার কনস্যুলেটে ১ এপ্রিলের একটি স্ট্রাইকের প্রতিশোধ হিসাবে ইসরাইলকে দায়ী করে হামলা চালায় ইরান। ইরান ফিলিস্তিনি যোদ্ধা গোষ্ঠী হামাস এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর প্রধান সমর্থক। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যিনি ৭ অক্টোবরের হামলার পর  গাজায় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে হামাসকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি  ইরানের বিরুদ্ধে  নিজের দেশকে  রক্ষা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইলের প্রধান মিত্র এবং সামরিক সরবরাহকারী, স্পষ্ট করেছে যে তারা ইরানের উপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণে যোগ দেবে না, তবে ইরানের আক্রমণে ব্যবহৃত ড্রোন তৈরির সাথে জড়িত ব্যক্তি এবং সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার বলেছিলেন,'ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের ড্রোন প্রোগ্রামকে অনুমোদন দেবার পর আমরা ইরানকে দায়বদ্ধ করছি।' ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন- ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের উপর যে কোনও আক্রমণ হলে ইসরাইলকে তার ফল ভোগ করতে হবে।

বিমান বাতিল

শুক্রবার ইরানের বিভিন্ন অংশে ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। তেহরানের সরকারী বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, ‘দেশের বিভিন্ন অংশের আকাশে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে।’ মেহর বার্তা সংস্থা জানিয়েছে যে, ‘তেহরান, ইসফাহান এবং শিরাজের ফ্লাইট এবং পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের বিমানবন্দরগুলির কার্যক্রম  স্থগিত করা হয়েছে।’ দুবাইয়ের এমিরেটস এয়ারলাইন থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

বৃহস্পতিবার, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।  সতর্ক করেছেন যে গাজায় যুদ্ধ এবং ইসরাইলের উপর ইরানের হামলা নিয়ে পূর্ণ মাত্রার আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হতে পারে।নিরাপত্তা পরিষদে গুতেরেস বলেছেন, 'মধ্যপ্রাচ্য একটি ক্রান্তিলগ্নে রয়েছে। সামনের  দিনগুলো বিপজ্জনক। একটি ভুল পদক্ষেপ পূর্ণ মাত্রার আঞ্চলিক সংঘাতের  রূপ নিতে পারে যা সকলের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে  পারে।  এমন অবস্থায় উভয় পক্ষকেই সংযম বজায় রাখতে হবে।'

এদিকে বিস্ফোরণের প্রতিবেদনের পর শুক্রবার এশিয়ার  বাণিজ্যে তেলের দাম তিন শতাংশের বেশি বেড়েছে। সূত্র : খালিজ টাইমস