আড়পাড়া খাদ্যগুদাম ইনচার্জ গ্রেফতার
পার পাওয়ার চেষ্টা ডিসি ফুড মনোতোষের
প্রথম নিউজ, যশোর: যশোর-সংলগ্ন মাগুরার আড়পাড়া সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ১২০ টনের বেশি চাল আত্মসাতের ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুর রহমান শফিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তবে মাগুরার ভারপ্রাপ্ত ডিসি ফুড মনোতোষ কুমার মজুমদার অপরাধ থেকে পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার আড়পাড়া সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খাদ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি স্টক পরিদর্শনের পর ডিসি ফুড রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর করেন। এতে করে গুদামের চাল-ধানসহ অন্যান্য মালামাল ঠিক থাকে। অথচ আড়পাড়া গুদাম থেকে ১২০ টনের বেশি চাল বাইরে বিক্রি করা হলেও ডিসি ফুড মনোতোষ কিছুই জানেন না, যা অগ্রহণযোগ্য।
এ ঘটনায় খাদ্য অধিদফতরের নির্দেশে শালিখা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা চৌধুরী গুদাম ইনচার্জ শফিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বিপুল অঙ্কের টাকার চাল আত্মসাতের ঘটনা তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জানা গেছে, নভেম্বর মাসের শেষ দিকে খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা (আরসি ফুড) আব্দুস সালাম আড়পাড়া সরকারি খাদ্যগুদাম পরিদর্শন করেন। ওই সময় তার কাছে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। তখন তিনি মাগুরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোতোষ মজুমদারকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তদন্তের কাজ শুরু করে।
অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত চলাকালে মনোতোষ মজুমদার গুদাম কর্মকর্তা শফিককে দিয়ে বাইরে থেকে চাল এনে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করেন। এমনকি তিনি তাকে মাগুরা, যশোর ও ঝিনাইদহের কয়েকটি রাইস মিলে চাল আনতে পাঠান বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন। টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকায় ওইসব মিলাররা শফিককে চাল দেননি বলে সূত্রের দাবি। এমনকি শফিক একজন মিলারকে তার বাড়ি লিখে দেয়ারও প্রস্তাব করেন বলে সূত্র জানায়।
এ ঘটনায় খাদ্য অধিদফতরের নির্দেশে শালিখা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা চৌধুরী মামলা করেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আড়পাড়া খাদ্য গুদাম সিল করেছেন শালিখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিসি ফুড। এছাড়া পুরো ঘটনা তদন্তে মাগুরা জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাজউদ্দিন আহমেদ ও খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কেমিস্ট একরামুল কবিরকে দিয়ে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছেন, আড়পাড়া খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা শফিকুর রহমান শফিক দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি চাল বাইরের একটি সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করে আসছিলেন। একপর্যায়ে ডিসি ফুড মনোতোষ মজুমদার বিষয়টি টের পান। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা নেননি, এমনকি সরেজমিন পরিদর্শন করারও প্রয়োজনবোধ করেননি বলে সূত্র জানিয়েছেন। এই ঘটনার সাথে শালিখা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা চৌধুরীরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন।
গুদাম সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতি ১৫ দিন পরপর গুদাম পরিদর্শন করার নিয়ম থাকলেও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গুদাম পরিদর্শন না করেই স্টক রেজিস্ট্রারে সই করে দিতেন। এমনকি, গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত খাদ্যের মজুত ঠিক আছে বলেও সই করে দেন তিনি। একই কাজ করেন ডিসি ফুড মনোতোষ মজুমদারও।
এদিকে, আড়পাড়া খাদ্যগুদামের বিপুল পরিমাণ চাল আত্মসাতের ঘটনা নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর তোলপাড় শুরু হয় খাদ্য বিভাগে। ভেস্তে যায় গোপনে মিটমাটের উদ্দেশ্য।
সংবাদ প্রকাশের পর ডিসি ফুড মনোতোষ মজুমদার ২৯ ডিসেম্বর একটি পত্রিকায় প্রতিবাদ বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে সেখানে সংবাদটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তিনি ওই প্রতিবাদে উল্লেখ করেন,‘আদতে আড়পাড়া খাদ্য গুদামে কখনোই চাল গায়েবের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত। আমি কখনই কোনো অনিয়ম করি নাই এবং কাউকে করার সুযোগ দেয় নাই।’ প্রতিবাদ প্রকাশের মাত্র এক দিনের মাথায় শুক্রবার গুদাম কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাও হয়েছে এ ঘটনায়। সিল করা হয়েছে গুদাম।
মাগুরাসহ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এমন বিজ্ঞাপনে মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে শফিককে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন মনোতোষ মজুমদার। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হওয়ার পরও বার বার ভারপ্রাপ্ত ডিসি ফুড হওয়া মনোতোষ মজুমদারের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন এসব কর্মকর্তা। এসব বিষয়ে জানতে মাগুরার ভারপ্রাপ্ত ডিসি ফুড মনোতোষ মজুমদারকে ফোন করলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে লাইন কেটে দেন।
বিপুল পরিমাণ চাল আত্মসাতের ঘটনায় মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ সরাসরি তদন্ত করতে পারে না। ঘটনাটি নিয়ে দুদক কাজ করছে। দুদক কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ভালো বরতে পারবেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews