আমাদের রফতানি সম্প্রসারণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে: শিল্পমন্ত্রী
প্রথম নিউজ, ঢাকা : আমাদের পণ্যের রফতানি সম্প্রসারণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। রবিবার (১১ জুন) ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস-২০২৩’ উপলক্ষে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি) এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘ভবিষ্যৎ বিশ্ব বাণিজ্যে অ্যাক্রেডিটেশন’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।
সেমিনারে শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএবি’র মহাপরিচালক মো. মনোয়ারুল ইসলাম।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘আমরা যদি পণ্য ও সেবার মান ধরে রাখতে পারি— তাহলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে আমাদের পণ্য রফতানি সম্প্রসারণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।’ দেশীয় অর্থনীতির সম্প্রসারণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের আস্থা বৃদ্ধিকল্পে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড নিরলসভাবে কাজ করছে বলে তিনি অভহিত করেন। শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং পরিবেশ প্রভৃতি শিল্প খাতের সঙ্গে অ্যাক্রেডিটেশন বেশি মাত্রায় জড়িত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্যের রফতানি বাজার সম্প্রসারণে আমাদেরকে পণ্যের অ্যাক্রেডিটেশন বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে গুণগত মানসম্পন্ন অবকাঠামো নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অ্যাক্রেডিটেশনের কোনও বিকল্প নেই এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উদ্যোক্তাদের পণ্যের মান বাজায়ে রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’ এছাড়া তিনি বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ১২৪টি প্রতিষ্ঠানকে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রদান করা হয়েছে। শিল্প সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় ব্যয় হ্রাস ও সময় বাঁচাতে সহায়তা করবে।’ তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের ২১টি পণ্যের অ্যাক্রেডিটেশন সনদ ভারতের ‘ইন্ডিয়া ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড লিমিটেড (এনএবিএল)’ থেকে গ্রহণ করতে হয়।’ সচিব আরও বলেন, ‘বিএবি সম্প্রতি হালাল পণ্যের অ্যাক্রেডিটেশন প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যেটি এ খাতের পণ্য রফতানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ একটি আমদানি-নির্ভর দেশ থেকে ক্রমেই রফতানিমুখী দেশে পরিণত হচ্ছে। ২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৪১.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’ তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক বাণিজ্যে নিজেদের পণ্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে অ্যাক্রেডিটেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’ ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘২০২৬ পরবর্তী সময়ে আমাদের স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যের কমপ্লাইয়েন্স বজায় রাখার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে এবং এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও জিএসপি প্লাস -সহ অন্যান্য বিষয়ে বাণিজ্য সুবিধা আদায়ে আমাদেরকে অ্যাক্রেডিটেশনের ওপর আরও বেশিহারে জোরারোপ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘শিল্প খাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি টেকসই পরিবেশ তৈরিতে অ্যাক্রেডিটেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) মহাপরিচালক মো. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ব এখন জোর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে এবং এর ফলে নিত্য-নতুন প্রযুক্তির দুয়ার উন্মোচিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে বাণিজ্যের সম্প্রসারণের পাশাপাশি সচেতন ভোক্তাদের মাঝে পণ্য ও সেবাকে টিকিয়ে রাখতে অ্যাক্রেডিটেশনের কোনও বিকল্প নেই।’
তিনি জানান, অ্যাক্রেডিটেশন পণ্য ও সেবা ভুক্ত সব দেশে বিনা বাধায় প্রবেশ করতে পারে, যা বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। বিএবি মহাপরিচালক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অ্যাক্রেডিটেশন ফোরামের সদস্য পদ অর্জনের লক্ষ্যে বিএবি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’