আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য ‘চর্বিত-চর্বন: রিজভী

সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য ‘চর্বিত-চর্বন: রিজভী
বক্তব্য রাখছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: জাতীয় নির্বাচন ও ইসি(নির্বাচন  কমিশন) নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য ‘চর্বিত-চর্বন’ বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী।

আজ শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একদিন আগে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। দেশে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলেই কেবল নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এই লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি সবাইকে নিয়ে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কোনো সুযোগ নেই।”

‘‘ ওই একই কথা, একই চর্বিত-চর্বন তারা করছেন। মানে আজকে  গণতন্ত্রকে একেবারে গোরস্তানের মধ্যে কবর দিয়ে তারা যে ডাকাতির মতো ক্ষমতা পরিচালনা করছেন-এটা ভুলে গেছেন। নির্বাচন-ভোট, গণতন্ত্রের যে অন্যতম শর্ত- এটাকে তারা একে্বারে মু্ছে দিয়েছেন বাংলাদেশকে থেকে। আবারো সেই পুরনো কথা, সেই সার্চ কমিটির নির্বাচন কমিশন। আরে ভাই, আপনারাই তো অবৈধ। আপনারা পদত্যাগ করেন।”

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ফ্রেব্রুয়ারিতে শেষ হবে। পরবর্তি কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেবেন বলে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। দীর্ঘ সাড়ে ছয় মাস অসুস্থ থাকার পর গত বুধবার দফতরের দায়িত্বে নেয়ার পর এই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আসলেন রিজভী।

তিনি বলেন, ‘‘ বাংলাদেশের ভোট ডাকাতির জনক হলো আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র হত্যাকারী হলো আওয়ামী লীগ। তাদের অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে সকল নির্বাচন হয়েছে ফেনী স্টাইলে। কেন্দ্র দখল করে জালভোটের উতসব করে আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতে করে করে, বিনা ভোটে নির্বাচন করে তারা।  আপনাদের মনে আছে ১৯৭৩ সালে খন্দকার মোসতাক নির্বাচনে পরাজিত হলে তাকে জেতাতে হেলিকপ্টার দিয়ে ঢাকায় ব্যালট এনে তাকে বিজয়ী করা হয়েছিল। সেই যে জালিয়াতি শুরু করলো আওয়ামী লীগ, তারই ধারাবাহিকতা আজও বহমান।

‘‘ বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আমি পরিস্কার করে বলতে চাই-নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামীতে কোন জাতীয় নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দিবে না। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথে নেমে এ সরকারকে হটিয়ে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেই। সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে আছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।”

‘ই-কর্মাস নামে অর্থ লোপাট’

রিজভী বলেন, ‘‘ দেশের অর্থনীতিকে সরকার ফোকলা করে ফেলেছে। দুর্নীতি লুটপাটে দেশ ও জনগণকে পথে বসিয়ে দিয়েছে তারা। এই করোনা মহামারিতে মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে।”

‘‘ এর মধ্যে ই-কমার্সের নামে ডজন ডজন প্রতিষ্ঠান, নানা নামে, নানা রংয়ে-ঢংয়ে কোন আইনের ভিত্তিতে জনগণের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট করলো। খোদ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘নগদ’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নগদ কেলেঙ্কারির খবর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। সরকারকে বলব, বাঁচতে চাইলে এখনো সময় আছে, ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা চান।”

‘এই দিন দিন নয়, আরো দিন আছে’

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে তথ্য  ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে ‘শিষ্ঠাচারবর্হিভূত’ বক্তব্য প্রদানের নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘‘ তার এহেন বক্তব্য মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পক্ষেই সম্ভব। এই বক্তব্য যারা শুনেছেন তারা হতবাক হয়ে গেছেন। এটা কি কোন সভ্য দেশের মন্ত্রীর মুখের ভাষা হতে পারে? মনে হয়েছে গলির সন্ত্রাসী মাস্তানের হুংকার। বস্তির অশিক্ষিত বোহেমিয়ান গালিবাজদের খিস্তি।”

‘‘ সেই ব্যক্তি যখন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে বেয়াদবের মতো উক্তি করে তখন বাংলা প্রবাদটি মনে পড়ে-পাগলে কিনা বলে তারপরের কথাটা আর আামি বললাম না। শুধু বলতে চাই, ক্ষমতা কারো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। এই দিন দিন নয়, আরো দিন আছে। সরকারকে বলবো, এইসব গালাগালি মিথ্যাচার খিস্তি খেউর হুমকি ধমকী রেখে আগামী দিনের কথা চিন্তা করুন। আজ হোক আর কাল হোক জনগণের মুখোমুখী হতেই হবে।”

কারাবন্দি ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসান ও বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের মুক্তি দাবিও জানান রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুল করিম শাহিন, আমিনুল ইসলাম, মতস্যজীবী দলের আবদুস রহিম, ছাত্র দলের আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom