আইএমএফ’র ডিএমডি ঢাকায় পণ্যমূল্য কমাবে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত এম সায়েহ শনিবার দুপুরে ৫ দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন
প্রথম নিউজ, ঢাকা : আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত এম সায়েহ শনিবার দুপুরে ৫ দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে আইএমএফ’র কাছ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে।
শনিবার রাতে আইএমএফ’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। ডিএমডির বাংলাদেশ সফর উপলক্ষ্যে এই প্রথম আইএমএফ অফিসিয়ালি কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিল। এতে বলা হয়, আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে তাতে দেশটির পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমাতে সহায়ক হবে। এছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে বক্তৃতাও দেবেন। মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু দেখার কথা রয়েছে তার।
সফর সূচি অনুযায়ী, আইএমএফ’র ডিএমডি আজ বাংলাদেশ বাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকে রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ, খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ, মুদ্রানীতিতে সংস্কার ও ব্যাংকিং খাত সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে। ওই সভায় অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াছমিন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এসএম সলীমুল্লাহ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান ও সংশ্লিষ্টদের থাকার কথা রয়েছে।
আইএমএফ’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। এ হার সহনশীল মাত্রায় কমাতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতাকে সমর্থন করে আইএমএফ। এ জন্য ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ঢাকা সফর করছেন সায়েহ।
সংস্থাটি বলেছে, বিশ্ববাজারে এখন উপ্তপ্ত। ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে ডলার, যা আঘাত করছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ভারসাম্যে। বাংলাদেশও এর মধ্যে রয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশের চাওয়া অনুযায়ী আইএমএফ ঋণ সহায়তা দেওয়ার পদক্ষেপ দিয়েছে।
তারা আরও বলেছে, করোনা পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়। এর আগে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের মধ্যে দ্রুত বাড়ছিল। বাণিজ্য ঘাটতি, জ্বালানি আমদানিতে বাড়তি খরচ, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সংকট ঘনীভূত হয়। এসব কারণে ভোক্তা পর্যায়ের ব্যয়ের সক্ষমতা কমে গেছে। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও মন্থর গতি দেখা দেয়।
আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ যে ঋণ পাচ্ছে তা দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে বলে আশা করছে সংস্থাটি। তারা মনে করছে, এ ঋণ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্ধিত মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বহুলাংশে সহায়ক হবে। আইএমএফ’র ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ স্বল্প মেয়াদে হলেও বিনিময় হারে চাপ কমাবে। এতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল হবে। ফলে আমদানি ব্যয়ে বাড়তি চাপ কমবে। এতে দ্রব্যমূল্য বাড়ার গতি কমবে। একইসঙ্গে তাদের পরামর্শ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে দেবে। যেমন জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, মধ্যমেয়াদি স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে মূল্যস্ফীতি কমানোর মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। পণ্য রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাল সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। ১৮ জানুয়ারি পদ্মা সেতু ভ্রমণ করবেন। ওই দিনই তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র ঋণ পাওয়ার আগে তার বোর্ডে অনুমোদন নিতে হয়। তারপর অর্থ ছাড়ের বিষয়ে চুক্তি সই করতে হয়। এসব করতে সময় লাগে। আবার কিছু নীতিগত শর্ত পূরণ করতে হয়।