অভিযোগ যৌন হয়রানির : ইন্টার্নদের কর্মবিরতিতে অচল কক্সবাজার হাসপাতাল
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে কর্মবিরতি পালন করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

প্রথম নিউজ, কক্সবাজার: কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে কর্মবিরতি পালন করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। ইন্টার্নদের কর্মবিরতিতে হাসপাতালে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা হাসপাতালের রোগীরা। আজ শুক্রবারেও তাদের এ কর্মবিরতি চলমান রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেছেন তারা। এ নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি সমাধানের জন্য অভিযুক্ত চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। কক্সবাজার ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা: মীর ম ম বিল্লাহ তকী বলেন, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা: মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ অশালীন আচরণের অভিযোগ করেছেন ছয় নারী ইটার্ন চিকিৎসক। এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো অভিযোগকারীদের বেতন-ভাতা কেটে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের এমন একটি চিঠি বুধবার ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয়। এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ শাখার সদস্যরা। ফলে সকাল থেকে কোনো ওয়ার্ডে ইন্টার্নরা কাজে যোগ দেননি। তবে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা: মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ অশালীন আচরণের অভিযোগ করেন ছয় নারী ইন্টার্ন। কিন্তু প্রহসনমূলকভাবে অভিযোগকারীদের এক্সটেনশন ও তিন মাসের বেতন-ভাতা কেটে রাখার আদেশ জারি করেন তত্ত্বাবধায়ক। এর প্রতিবাদে কর্মবিরতি ঘোষণা করেন ইন্টার্নরা। যা এখনও চলমান। কক্সবাজার ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৬ নভেম্বরের অভিযোগ আমলে না নিয়ে উল্টো ইন্টার্নদের ওপর দোষ চাপিয়ে ছয় ইন্টার্নের বিরুদ্ধে আদেশ জারি করে কর্তৃপক্ষ। যা প্রহসনমূলক। শুধু নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক নন, রোগীর স্বজনদের সঙ্গেও এমন আচরণ করেছেন অভিযুক্ত ওই চিকিৎসক। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ছয় ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জারিকৃত আদেশ প্রত্যাহার ও অভিযুক্ত মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এই কর্মবিরতি চলবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মুমিনুর রহমান বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বেশ কিছুদিন ধরে উশৃঙ্খল আচরণ করছেন। কিছুদিন আগে এক আইনজীবীকে রাস্তায় মারধর করেন ইন্টার্নরা। পরে কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে নিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের ডা: মাহফুজুর রহমানকে রাতে রুমের দরজা বন্ধ করে পেটানো হয়। এ নিয়ে ডা: মাহফুজুর রহমান ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলে আমি নিষেধ করি এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন বন্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত হয়। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ডা: মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকরা যৌন হয়রানির অভিযোগে লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানানো হয়। পরে ডা: মাহফুজুর রহমানকে অন্যত্র বদলি করা হয়।
হাসপাতালের চলমান কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তত্ত্বাবধায়ক ডা: মুমিনুর রহমান।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা: মাহফুজুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: