প্রথম নিউজ, অনলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফ্যাসিবাদ সরকারকে মদদ দেওয়া ব্যক্তিদের আমরা প্রশাসনে দেখতে পাচ্ছি। তারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের চেহারা আর দেখতে চাই না। দয়া করে অতি দ্রুত এদের অপসারণ করুন। যারা দেশ প্রেমিক তাদেরকে সুযোগ দিন। সৎ, পদ বঞ্জিতদের দায়িত্বে নিয়ে আসতে হবে। নাহলে জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।
সোমবার (২৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান কাজী জাফরের ৯ম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৫-১৬ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন হয়েছে। তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তার এই চলে যাওয়াটা আমাদের কাছে নিঃসন্দেহে বড় বিজয়।
চলমান ভয়াবহ বন্যার প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, এবারের বন্যা ক্রিমিনাল অপরাধ। ভারত যে বাঁধ খুলে দিবে, তা ভাটির মানুষদের অবহিত করা হয়নি। যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অপ্রস্তুত অবস্থায় পানির ঢলে ভেসে গেছে বহু মানুষ। মৃত্যুবরণ করেছে বেশ কয়েকজন। তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমি তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছি।
দেশের ক্রান্তিকাল চলছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সফল ছাত্র জনতার বিপ্লবের পরে একটি অন্তবর্তী সরকার এসেছে। আমাদের এই সরকারের প্রতি আস্থা আছে। এই সরকারের প্রধান সারাবিশ্বের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। ভয়াবহ ফ্যাসিবাদের পরে এমন একটা নির্বাচন দিবেন যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। এরমধ্যে যত জঞ্জাল আছে সেগুলো ছাপ করবে। এতদিন চিন্তিত ছিলাম প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে কোন শুনতে পাচ্ছি না। কালকে উনি কথা বলেছেন জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দিয়েছেন। এই সরকারের কাছে দেশের জনগণের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি বলেছেন, কবে নির্বাচন হবে সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে। আমি আশা করব প্রধান উপদেষ্টা সে প্রক্রিয়ায় যাবেন। তিনি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলবেন। আমরা আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা একটি সংলাপের রোডম্যাপ দেবেন।
পুলিশ স্টেটে থাকতে চাই না জানিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা কোন পুলিশ স্টেটে পরিণত হতে চাই না। পুলিশ আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে, প্রতিনিয়ত বলে দিবে এটা করা যাবে এটা করা যাবে না। প্রতি মুহূর্তে মিথ্যা মামলা দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে টাকা নিয়ে গিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করে আমাদের সর্বনাশ করবে, আমাদের ছেলে-মেয়েদের গুলি করে হত্যা করবে। আমরা চাই পুলিশকে জনগণের পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলা হোক।
প্রধান উপদেষ্টার মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়ে সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। পত্রিকায় দেখলাম প্রধান উপদেষ্টার মামলা ওঠানো হয়েছে। আরেকজন উপদেষ্টার মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই আমাদের এক লাখ ৪৫ হাজার মামলা অবিলম্বে তুলে নিতে হবে।
আনসার সদস্যদের আন্দোলন নিয়ে তিনি আরও বলেন, সচিবালয়ে ঘেরা করে আনসার সদস্যদের পোশাক ব্যবহার একটা গোলযোগ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। ছাত্ররা সেটা নস্যাৎ করে দিয়েছে। এটা কিন্তু অংশনি সংকেত। অর্থ্যাৎ পরাজিত শক্তিরা চায় বিভিন্নভাবে এই বিজয়কে নস্যাৎ করতে। এই বিষয়গুলোকে প্রশ্রয় না দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।
দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, যখন ফ্যাসিবাদ ছিল তখন দাঁড়ানোর চিন্তাও করতে পারতেন না। এখন সুযোগ এসেছে, নতুন সরকারকে সময় দিন। তারা নিশ্চিয় এই বিষয়গুলো দেখবে, সেভাবে কাজ করবে। কিন্তু এভাবে ঘেরাও করে বাধ্য করে কোন কিছু আদায় করা জনগণ সেটা ভালোভাবে দেখবে না। এই সরকার অবশ্যই কাজ করার জন্য এসেছে। তাদেরকে সেই সুযোগ দিতে হবে। নির্বাচনের জন্য আমরা তাদের যৌক্তিক সময় দিতে চাই। সবাইকে ধৈর্য ধারণ ধরার আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান কাজী জাফরের স্মতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি আমার ছাত্রজীবনে কাজী জাফর আহম্মেদের নাম শুনেছি। আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন জাফর ভাই জেলে। জেল থেকে বের হলে তার এক বক্তৃতা শুনে আমরা অবাক হয়ে গেছি। তার বক্তৃতা শুনে অনেকে ছাত্ররাজনীতিতে যোগ দিয়েছি।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।