৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিপর্যয় আর্থিক ক্ষতি ২ হাজার কোটি টাকা
ক্ষতির মুখে পড়েন দেশের মার্কেট, বিপণিবিতানসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। বন্দরের কার্যক্রমসহ সব ধরনের সেবামূলক খাতে নেমে আসে বিপর্যয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে আর্থিকভাবে বিভিন্ন খাতে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
প্রথম নিউজ ডেস্ক : ফ্যাশন অ্যান্ড লাইফ স্টাইল ইনফ্লুয়েন্স প্রতিষ্ঠানের সারা দেশে ফলোয়ার (অনুসরণকারী) প্রায় ৮ লাখ। এ প্রতিষ্ঠানের ৭০ শতাংশই অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম। মঙ্গলবার সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুতের বড় ধরনের বিপর্যয়ে অনলাইনভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানসহ দেশব্যাপী আড়াই হাজার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্য অফলাইনে চলে যায়। একই কারণে এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদন ব্যাহত হয় রপ্তানিমুখীসহ সব ধরনের শিল্পে।
পাশাপাশি ক্ষতির মুখে পড়েন দেশের মার্কেট, বিপণিবিতানসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। বন্দরের কার্যক্রমসহ সব ধরনের সেবামূলক খাতে নেমে আসে বিপর্যয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে আর্থিকভাবে বিভিন্ন খাতে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সঞ্চালন লাইনে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় মঙ্গলবার দেশের প্রায় অর্ধেক অংশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। অন্ধকারে ডুবে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রায় সব জেলা। এদিন দুপুর ২টা ৫ মিনিটে জাতীয় গ্রিড ট্রিপ হওয়ায় এই বিপর্যয় ঘটে। তবে রাত ৮টার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ আসা শুরু করে। জানতে চাইলে বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, রপ্তানিমুখী শিল্পের একদিনে যা উৎপাদন হতো, এর এক-তৃতীয়াংশ কম হয়েছে মঙ্গলবার। দুপুরে যখন বিদ্যুৎ চলে যায়, ওই সময় জেনারেটর দিয়ে অনেকে এক থেকে দুই ঘণ্টা উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখেন। কিন্তু বিদ্যুৎ সারা দিনে আসবে না-এমন খবর জানতে পেরে অনেকে বন্ধ করে চলে যান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের হিসাবে অর্থনীতিতে একদিনে সেবা খাতের অবদান ৫ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা, শিল্প খাতের (বড়, মাঝারি ও ছোট) ২ হাজার ৪০১ কোটি টাকা এবং পাইকারি ও খচরা ব্যবসার অবদান ১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতের অবদান ১১০ কোটি টাকা এবং গ্যাসের ২২ কোটি টাকা। মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকায় ৬ ঘণ্টা সব ধরনের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। ফলে ওই হিসাবে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খাতে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাব্য অঙ্ক ২ হাজার ১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সেবা খাতে ১ হাজার ৩৮৫ কোটি এবং শিল্প খাতে ৬০০ কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ খাতে ক্ষতি হয়েছে ২৭ কোটি এবং গ্যাস খাতে প্রায় ৬ কোটি টাকা।
এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় রাজধানীর মার্কেট, বিপণিবিতানসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা-বাণিজ্যে এর প্রভাব পড়ে। দুপুরের পর মার্কেট, বিপণিবিতানের অনেক ক্রেতা ফিরে যান। জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মন্টু বলেন, দুপুরের পর দোকানগুলোয় ক্রেতা কমতে থাকে। অনেক মার্কেটে জেনারেট সিস্টেম নেই। ফলে একধরনের অন্ধকার নেমে আসে। ওই মার্কেটে বিকালে আর কোনো বেচাকেনা হয়নি।
এদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসার অবস্থা একই রকম। সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার তাঁত রয়েছে। আর এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিক মিলে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ জড়িত। হঠাৎ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। বেলকুচি উপজেলার চন্দনগাতি সাহপাড়া গ্রামের তাঁত শ্রমিক মজিদ বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় দিন মিলে দুটি শাড়ি বুনতে পাড়িনি।
ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত আড়াই শতাধিক শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে স্পিনিং মিলগুলোয় বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় বিদ্যুৎভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে নেমে আসে কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা। গাজীপুরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় প্রতিমুহূর্তে অতিরিক্ত অর্থব্যয় করতে হয়েছে। দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জেনারেটর চালিয়ে অনেক কারখানা সচল রাখা হয়। এতে খরচ বেড়েছে, পণ্যের মানও কমে গেছে। পরে এই শিল্প এলাকার প্রায় সব কারখানাই বন্ধ রাখা হয়। তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, অধিকাংশ পোশাক কারখানা বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয়। গ্যাসের চাপ ওঠানামা করায় জেনারেটরও চালানো যায়নি। আর ডিজেল ব্যয়বহুল হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে জেনারেটর চালানোর চিন্তাও এখন করেন না গার্মেন্ট মালিকরা। ফলে উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে।
এখন বাণিজ্যের একটি বড় অংশজুড়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। যার শতভাগ নির্ভর অনলাইনের ওপর। বিদ্যুৎ না থাকায় অধিকাংশ মোবাইল তরঙ্গ কোম্পানির নেটওয়ার্কে বিপর্যয় ঘটে। ফলে দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ই-কমার্সের বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে দেশে প্রায় আড়াই হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে ই-কমার্সের। জানতে চাইলে অনলাইনভিত্তিক ই-কমার্স ফ্যাশন অ্যান্ড লাইফ স্টাইল ইনফ্লুয়েন্সের স্বত্বাধিকারী আশিক খান বলেন, একদিনে প্রায় ৭০ শতাংশ ক্রেতা থেকে বঞ্চিত হয়েছি, যা মুনাফা হতো তার পুরোটাই ক্ষতি। কারণ আমাদের ব্যবসা অনলাইনভিত্তিক।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews