১৯ বছর দেখিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি মামলা

কোনো শর্ত ছাড়াই নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামল তাকে জামিন মঞ্জুর করেন।

১৯ বছর দেখিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি মামলা

প্রথম নিউজ, নারায়ণগঞ্জ: আদালতের বারান্দায় দেখা ১২ বছরের শিশু এহসানের সঙ্গে। প্রতিপক্ষের দায়ের করা হামলা দাঙ্গা, চুরি ও শ্লীলতাহানি মামলার আসামি সে। যদিও মামলায় তার বয়স ১৯ দেখানো হয়েছে। বুধবার (১৯ জুলাই) জামিনের জন্য আদালতের উপস্থিত হয়েছে সে। বিচারক তাকে দেখে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে সরাসরি কাছে নিয়ে কথা বলেন। কোনো শর্ত ছাড়াই নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামল তাকে জামিন মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত ১৩ জুলাই নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকার মো. আলী আকবরের স্ত্রী তাছলিমা বেগম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত শুনানি শেষে মামলাটি সরাসরি আমলে নেওয়ার জন্য আদেশ দেন। এহসান ছাড়া মামলায় অভিযুক্তরা হলেন সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকার গোলজার (৪৫), তার ছেলে সিয়াম (২২), এহসান (১৯), তাদের মা হাজেরা বেগম (৩৮) ও চাচা বিল্লাল (৩২)।

অভিযোগে বলা হয়, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযুক্তরা ধারালো চাকু, দা, লাঠি, বাঁশের কঞ্চি, লোহার রড নিয়ে তাছলিমা বেগমের ছেলে সানজিদ ও সানির ওপর হামলা করে। তাদের বাঁচাতে তাছলিমা বেগম তার মেয়ে মারিয়া ও স্বামী আলী আকবরসহ অন্যরা এগিয়ে এলে তাদের মারধর করাসহ শ্লীলতাহানি করা হয়।

এহসানের পরিবারের অভিযোগ, কোরবানির পশুরহাট দেখতে আসার সময় কয়েকজন কিশোরকে গোলজারের দোকানের সামনে আটকে ছিনতাই করছিল তাছলিমা বেগমের ছেলেরা। এ ঘটনা দেখে ফেলেন গোলজারের ১২ বছরের শিশু ছেলে এহসান। পরে ছিনতাইয়ে অভিযুক্তদের বাড়ি দেখিয়ে দেওয়ায় এহসানকে মারধর করা হয়। তাকে বাঁচাতে তার বাবা গোলজার, ভাই সিয়াম, মা হাজেরা বেগম ও চাচা বিল্লাল এগিয়ে এলে তাছলিমা বেগমসহ তার পরিবারের সদস্যরা তাদের মারধর করে।

উল্টো এহসানের পরিবারের সদস্যদের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আর এ মামলায় ১২ বছরের শিশু এহসানকে ১৯ বছর দেখিয়ে মামলার আসামি করা হয়। এ বিষয়ে এহসান বলেন, আমি কিছুই জানি না। রাতে বাসায় শুয়ে থাকার সময়ে আমার বাবা ও ভাইকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সঙ্গে সঙ্গে আমাকেও গ্রেফতার করতে যায়। আমি নাকি মামলার আসামি। মামলার কারণে আমি স্কুলে যেতে পারি না। আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। আমি ন্যায় বিচার চাই।

আদালতের বারান্দায় কান্না করতে করতে মামলার আসামি হাজেরা বেগম বলেন, যে সময়ে আমার ছেলেটা স্কুলে থাকার কথা সে সময়ে সেই সময়ে মামলার আসামি হয়ে জামিনের জন্য আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। আমার এ শিশু ছেলেটা কিছুই বুঝে না। তাকে ১৯ বছর দেখিয়ে আদালতে মামলা করেছে। মা এহসানের বাবা গোলজার বলেন, আমার আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চাই। আমার ১২ বছরে শিশু ছেলে কিভাবে মারামারি মামলার আসামি হলো। আমার ছেলে কিছুই বুঝে না। সে কিভাবে মারধর করবে। স্কুলে না গিয়ে তাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হয়ে আদালতের বারান্দায় দিন পার করতে হচ্ছে।

মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু বলেন, এ মামলায় ১২ বছরের শিশু এহসানকে যখন আমরা কোর্টে উপস্থাপন বিজ্ঞ আদালত এবং উপস্থিত আইনজীবীরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। মামলার এজাহারে এহসানের বয়স ১৯ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বাস্তবে দেখলাম এহসান ষষ্ঠ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী। তার বয়স ১২। এ কারণে আদালত তাকে জামিন দেয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুব নুর রশিদ বলেন, আসামি হিসেবে এ শিশুকে আমি নিজেও বিব্রত হয়েছি। যখন আমার কাছে এ মামলাটি তখন মামলার আসামিদের ব্যাপারে আমার জানা ছিল না। যার কারণে এমনটি ঘটেছে।