১২ বছরেও পাকা হয়নি ইটের রাস্তা, ভোগান্তিতে জনজীবন
বর্ষা মৌসুমে এই ভোগান্তি বেড়ে যায় আরও দ্বিগুণ। ইটের সলিং রাস্তা নির্মাণের পর ১২ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সড়কটিতে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া।
প্রথম নিউজ, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি ও ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলাকে একত্রিত করেছে একটি সড়ক। বর্তমানে সড়কটিতে ইটের সলিং (এইচবিবি) নষ্ট হয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে দুই উপজেলার প্রায় দশ হাজার মানুষ। বর্ষা মৌসুমে এই ভোগান্তি বেড়ে যায় আরও দ্বিগুণ। ইটের সলিং রাস্তা নির্মাণের পর ১২ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সড়কটিতে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া।
হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ইটের রাস্তা থেকে পিচ ঢালাই (কার্পেটিং) রাস্তায় উন্নতিকরণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, জুন অথবা জুলাইয়ে বাজেট এলেই সড়কটি ইটের সলিং (এইচবিবি) থেকে পিচ ঢালাইয়ের রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
জানা গেছে, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের দস্তন গ্রাম, আর অন্য প্রান্তে রয়েছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কদমি গ্রাম। এই দুই উপজেলাকে একত্রিত করেছে ৫ কিলোমিটারের এই দস্তন-কদমি সড়কটি। প্রায় ১২ বছর আগে দুই উপজেলার সাধারণ মানুষের চলাচলে সুবিধার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কতৃক নির্মাণ করা হয় ১৬ ফুট প্রশস্তের ইটের সলিং সড়কটি। কিন্তু দীর্ঘদিন সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় বিভিন্নস্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে সেই সড়ক দিয়েই চলাচল করছে শত শত ভ্যান, ইজিবাইক, মাল বোঝাই পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহন। অতিরিক্ত সময় লাগছে যাতায়াতে, যেকোনো মুহূর্তে থাকে গাড়ি উল্টে যাওয়ার ভয়। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দুই উপজেলার কয়েক হাজার মানুষের। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ গর্ভবতী নারী ও রোগীদের।
এছাড়া এসব এলাকার উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে আনা, নেওয়ায় বেগ পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকার কৃষকদের। সড়কের কারণে পরিবহন খরচ বেশিসহ ঠিক সময় মতো বাজার ধরতে পারছেন না কৃষকেরা। তাই দ্রুতই সড়কটি ইটের সলিং থেকে পিচ ঢালাই সড়কে উন্নতিকরণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ভ্যানচালক সোহাগ মোল্যা বলেন, এই সড়কের বিভিন্নস্থানে ইট ইঠে গিয়ে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম খান বলেন, সড়কের অধিকাংশ জায়গাই ভাঙা। বিগত কয়েক বছরে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে এভাবেই পড়ে আছে। এ সড়ক দিয়ে কোন যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ফলে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা চাই এই সড়কটি মেরামত করা হোক। যাত্রী জুয়েল শেখ বলেন, এটি পিচের সড়ক করা উচিত। একটু উঁচু করে নির্মাণ করলে আরও ভালো হয়। তা না হলে বৃষ্টি বর্ষায় কাদা জমে যায়। এতে চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ সড়ক দিয়ে ফরিদপুর জেলা ও গোপালগঞ্জ জেলার মানুষ চলাচল করে। বড় কোনো যানবাহন চলাচল করতে না পাড়ায় পণ্য আনা নেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
ইজিবাইক চালক সজীব বলেন, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার দস্তন গ্রাম ও ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার কদমি গ্রামের মানুষ নিয়ে আমাকে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু সড়কটির বেহাল অবস্থা থাকায় মাঝে মধ্যে যাত্রী নিয়ে আসতে পারি না। এই সড়কে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। এতে লোকসান দিতে হয় আমাদের। স্থানীয় কৃষক রাজামিয়া বলেন, সড়কটিতে ইটের সলিং দিয়েছিল প্রায় একযুগ আগে। কিন্তু বর্তমানে সড়কের বিভিন্নস্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলে অনেক সমস্যা হচ্ছে আমাদের। নিজেদের খেতের উৎপাদিত সবজি বাজারে নিতে বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে। না হলে ভ্যান চালকেরা যেতে চায় না। দ্রুতই সড়কটি পিচ ঢালাইয়ের দাবি আমাদের।
কাশিয়ানি উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান লুথুমিয়া বলেন, এলাকাবাসীর দাবির সঙ্গে আমিও একমত। সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই সবার সুবিধার কথা মাথায় রেখে দ্রুতই সরকটি নতুন করে নির্মাণ করার দাবি জানাই। কাশিয়ানি উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোরশেদুল হাসান বলেন, আমাদের জুন অথবা জুলাইয়ে একটা বাজেট পাস হওয়ার কথা রয়েছে। বাজেটটি পাস হলে এই সড়কটিসহ উপজেলার সব কয়টি সড়ক পিচ ঢালাই (কার্পেটিং) করা হবে।
গোপালগঞ্জের স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, দস্তন-কদমি সড়কটি ইটের সলিং (এইচবিবি) সড়ক। সড়কটির উন্নতিকরণের আগে ওই সড়কের একটি ছোট ব্রিজ প্রস্থকরণের কাজ শেষ হয়েছে। ফলে কিছু স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এইচবিবি সড়কটি আগামী ২৩-২৪ অর্থ বছরে সম্প্রসারণসহ কার্পেটিং করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।