১২ দিন ধরে মহাসড়কে শতাধিক পরিবারের বসবাস, রাত কাটছে ভয়-আতঙ্কে

বিদ্যুৎহীন এসব ঘরে রাত কাটছে ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে।

১২ দিন ধরে মহাসড়কে শতাধিক পরিবারের বসবাস, রাত কাটছে ভয়-আতঙ্কে

প্রথম নিউজ, সুনামগঞ্জ: বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বাড়ি-ঘর। আশ্রয়ের জন্য আশপাশে নেই কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নিরুপায় হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের দুপাশে। বাঁশের সঙ্গে ত্রিপল বেঁধে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে কোনো রকম জীবন-যাপন করছেন। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে শান্তিগঞ্জ উপজেলার কয়েক কিলোমিটার সড়কজুড়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে এসব অস্থায়ী ঘর। বিদ্যুৎহীন এসব ঘরে রাত কাটছে ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে।

জানা গেছে, গত ১৬ জুন (বৃহস্পতিবার) সুনামগঞ্জে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে পানি ঘরের ভেতরে ঢুকে কোমর থেকে গলা পর্যন্ত চলে আসে। ১৭ জুন ভয়াবহ রূপ নেয় বন্যা। বাড়ির চালা ছুঁয়ে যায় বন্যার পানি। কূলকিনারা না পেয়ে মানুষ জীবন বাঁচাতে ছুটে যায় আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্রে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। কোনো কোনো এলাকার আশপাশে আশ্রয়কেন্দ্রও ছিল না। ফলে মানুষ ঠাঁই নেয় সড়কে। 

সড়কের ওপরে বাঁশের সঙ্গে ত্রিপল বেঁধে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে মানুষ ও গবাদিপশু ঘুমাচ্ছেন। সড়কে থাকায় অধিকাংশ ঘরে নেই রান্নার ব্যবস্থা। সড়ক পথে যাওয়ার সময় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের ট্রাক দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। যা শুকনো খাবার পাচ্ছেন সেগুলো দিয়েই জীবনধারণ করছেন। 

তবে রাত হলে শুরু হয় দুর্বিষহ জীবন। বিদ্যুৎহীন ঘরে ভয় আর আতঙ্কে কাটে সারা রাত। সড়ক হওয়ায় ঝুপড়ির পাশ দিয়েই চলে বড় বড় বাস-ট্রাক। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। যেকোনো গাড়ি সড়কের একটু পাশ দিয়ে গেলেই গুড়িয়ে নিয়ে যাবে শত শত পরিবার। তাছাড়া রয়েছে ডাকাতের ভয়। বাসিন্দারা রাত জেগে পাহারা দিয়ে গবাদি পশুকে রক্ষা করছে।

সদর উপজেলার জানিগাঁও গ্রামের বৃদ্ধা জাহেরা খাতুন বলেন, বন্যা আসার পরে ৩-৪ দিন ছিলাম হাই স্কুলে। পরে তারা স্কুলে কাজ করার জন্য আমাদের বের করে দেয়। এখন আইছি রোডে। মা নাই, তিনটা নাতিন লইয়া কষ্টেত আছি। 
একই গ্রামের আনোয়ারা বলেন, আজ ১০-১২ দিন ধরে ঘরের ভেতর পানি। এখন যাও সামান্য পানি কমেছে ঘরে ঢুকতে পারছি না। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে খাইতে পারি না। সরকারে একটু দিলে খাই।

Dhaka post

সোহানা বেগম নামে এক নারী বলেন, রাত ১২ টায় হু হু করে ঘরে পানি ঢুকে যায়। বাচ্চা নিয়া কই যাইতাম। এখন রোডে আইছি। রাস্তা দিয়া বড় বড় বাস যায়, ডর লাগে। বাচ্চা কাচ্চা নিয়া কষ্টত আছি।  গোলাপ হোসেন বলেন, খেয়ে না খেয়ে থাকতেছি। মনের মাঝে বড় ভয়। কোন সময় গাড়ি ওঠে যায়। ১০-১২ দিন রাস্তাত, এখনো বাড়ি যাইতে পারতেছি না। 

হালুয়ারগাঁও গ্রামের জুলেখা বলেন, ডাকাতের লাগি রাত হলে ঘুমাতে পারি না। চারদিকে ইঞ্জিনের নৌকা নিয়ে হাঁটাহাটি করে। বাড়িও নাই ভেঙে গেছে। এর লাগি গরু নিয়া আইছি। গরুকে খাওয়ানোর মতো কিছু নাই। শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, জানমালের নিরাপত্তায় ৫টি নৌকা ও ২টি গাড়ি নিয়ে প্রতিদিন টহল অব্যাহত আছে। যার কারণে এখনো ডাকাতির তেমন খবর পাওয়া যায়নি। আমরা আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখব। 

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, বন্যায় ঘরে পানি ওঠে যাওয়ায় সবাই এসে মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আমি তাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও মানবিক কারণে উচ্ছেদ করতে পারেনি। আমি এটা জেলা প্রশাসনকেও জানিয়েছি। আশা করি ঘরের পানি কমে গেলে তারাও চলে যাবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom