হারিয়ে গেছে রোদে শুকানো মাংসের ঐতিহ্য

প্রথম নিউজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানেই দেখা যেতো রোদে শুকানো মাংসের দৃশ্য। ছোট ছোট মাংসের টুকরো লবণ জলে আধা সিদ্ধ করে চাটাই, কুলা, থালা কিংবা অন্য কোন পাত্রে রেখে ও রিক্সার স্প্রিং, লোহার সরু তার (গুনা) দিয়ে মালার মতো গেঁথে উন্মুক্ত স্থানে রেখে রোদে শুকানো হতো। একে বলা হতো মাংসের শুটকি। পরে শুকনো মাংস পাত্রে রেখে সংরক্ষণ করা হতো। এ শুকনো মাংসের স্বাদ ছিল ভিন্নরকম ও মজাদার। ছিল রান্নার নানান রিপিপিও।
একসময় বৈদ্যুতিক ঘাটতি থাকায় ও ফ্রিজের ব্যবহার না থাকায় অতিরিক্ত মাংস হয় একসাথে রান্না করে খেতে হতো, নয়তো প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও অসহায় মানুষদের দিয়ে দিতো। ফ্রিজকে তখন দেখা হতো বিলাসী পণ্য হিসেবে এছাড়া সার্মথ্য না থাকায় অনেকে কিনতেও পারতেন না। এছাড়া মানব সভ্যতার উষালগ্নে থেকেই মানুষ এই পন্থায় মানুষ মাংস সংরক্ষণ করতো বলে জানা যায়।
এজন্য অনেকেই মাংস ছোট ছোট করে কেটে হলুদ-লবন মিশিয়ে রোদে শুকাতেন। শুকনো মাংস দীর্ঘ দিন পর্যন্ত রেখে দেয়া যেতো। পরে যেকোনো সময় রান্না করে কিংবা শুটকির মতো করে ভর্তা বানিয়ে খাওয়া যেতো। এখনো অনেকেই আছেন শখের বশে মাংস রোদে শুকিয়ে খান। বর্তমানেও বিশ্বের অনেক দেশেই রোদে শুকানো মাংস নিজেদের খাওয়ার পাশাপাশি অন্যদের কাছে বিক্রি করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে চীন, ভারত, পাকিস্তান, ইরান-ইরাক, তুরস্কে।
পাঠক, আপনি রোদে শুকানো মাংস খেতে চাইলে কিংবা তৈরি করতে চাইলে অবশ্যই রোদে শুকানোর প্রক্রিয়া ভালো করে জেনে ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে করবেন। তাতে আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকবে না। কেননা কয়েক দশকে বর্তমান বিশ্বের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষের খাদ্যাভাস ও খাদ্যে ঘটেছে পরিবর্তন। নবীনগর পৌর এলাকার কাজী কামরুল হাসান টুটুল বলেন, ছোট সময় অনেক খেয়েছি। এখন তো আর মাংস কেউ শুকায় না। অন্য রকম এক টেস্ট লাগতো। তরিকুল ইসলাম তারেক বলেন, এখন অনেকে শখের বশে মাংস শুকিয়ে তারপর ভর্তা বানিয়ে খায়। ফ্রিজের সহজলভ্যতার কারণে এখন আর কেউ মাংস শুকায় না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার সাদ্দাম হোসেন বলেন, মাংস শুকানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়ম মেনে শুকাতে হবে। শুকানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে বিষাক্ত পোকামাকড় অথবা মাছি যেন না বসে ও পুরোপুরি শুকিয়ে শক্ত হওয়ার পর সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে। নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে না খেলে মাংস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এতে অসুস্থ হওয়ার শঙ্কা থাকে।