সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ আশ্রয়ণের ঘর, কষ্টে আছেন তারা

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ফাতেমার ঘরের মতো একই চিত্র প্রায় ২১০ টি ঘরের। উপকারভোগীরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি ঘরগুলো সংস্কার করে দেয়, তাহলে কোনোমতে ভালোভাবে কাটবে তাদের জীবন।

সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ আশ্রয়ণের ঘর, কষ্টে আছেন তারা

প্রথম নিউজ, ফেনী: ৮০ বছরের বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম। গত ৩০ বছর যাবৎ ফেনীতে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলছে তার জীবন। ২২ বছর আগে ভাসমান অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ এ একটি ঘর পেয়ে মাথা গোঁজার ঠাই মেলে তার। তবে দীর্ঘ এ সময়ে ঘরের সংস্কার না হওয়ায় কষ্টে জীবনযাপন করছেন ফাতেমা। তিনি বলেন, 'মরার সময় অন্তত এ ঘরে মরতে চাই। এখন ঘর ঠিক করে দিলে আর কোনো চাওয়া থাকবে না।'

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ফাতেমার ঘরের মতো একই চিত্র প্রায় ২১০ টি ঘরের। উপকারভোগীরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি ঘরগুলো সংস্কার করে দেয়, তাহলে কোনোমতে ভালোভাবে কাটবে তাদের জীবন। আশ্রয়ণের ২০ নম্বর ব্যারাকের জরিনা নামে এক উপকারভোগী বলেন, সরকার এখন নতুন নতুন ঘর দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের এ পুরাতন ঘরগুলো যদি সংস্কার করে দেয় একটু সুন্দরভাবে থাকতে পারি। সাহেনা আক্তার নামে আরেকজন বলেন, বিভিন্ন সময়ে কয়েকবারই সংস্কার হবে বলে লিখে নেওয়ার পর আর সংস্কার করেনি। অন্যান্য সময় কোনোমতে দিনযাপন করলেও বৃষ্টির দিনে পরিবার নিয়ে কষ্টের সীমা থাকে না।

শফিকুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, একদম শুরু থেকেই পরিবার নিয়ে এখানে বসবাস করছি। অনেকগুলো ঘর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এসবের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি এগুলোকে মাদকসহ নানা অপকর্মে ব্যবহার করছে। এতো বছরে এসব ঘর আর সংস্কার হয়নি। বৃষ্টির দিনে উপরের অংশে পলিথিন দিয়ে থাকতে কষ্ট হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্প সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ রহিমুল্লাহ বলেন, পরিত্যক্ত ঘরগুলো চিহ্নিত করে তালিকা করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।

উপকারভোগীদের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে আশ্রয়ণ প্রকল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মমিন বলেন, আশ্রয়ণে বর্তমানে ৫০টির বেশি ঘর খালি পড়ে আছে। এছাড়াও উপকারভোগীদের জন্য নিরাপদ পানি, টয়লেট ও কমিউনিটি সেন্টারের সংকট প্রকট। এগুলোর ব্যবস্থা করা গেলে মানুষ জন স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারবেন।

আশ্রয়ণের কিছু ঘর ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে উল্লেখ করে ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, ২০০১ সালে সরকারিভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ধর্মপুরে ২১০ টি গৃহহীন পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে সেখানের অধিকাংশ ঘর খালি পড়ে আছে এমন খবর শুনে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়। সেখানে নির্মাণের পর থেকে ঘরগুলোর কোন সংস্কার না হওয়ায় অধিকাংশ ঘর ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে জানতে পেরেছি।

সংস্কার প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, ঘরগুলো ব্যবহার উপযোগী করে তোলার বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই সংস্কারের মাধ্যমে ঘরগুলো ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হবে। উল্লেখ্য, প্রায় ২৩ বছর আগে ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নে গৃহহীন ২১০ পরিবারের মানুষের বসবাসের জন্য সরকার বরাদ্দ দেয় আশ্রয়ণ প্রকল্প-১।