সরকারের দু:শাসনের করাল গ্রাসে দেশবাসী আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে: রিজভী
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: দুর্বিনীত দু:শাসনের করাল গ্রাসে দেশবাসী অজানা আশঙ্কায় আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, অবৈধ দখলদার সরকার তাদের দখলদারিত্ব ধরে রাখার জন্য পুরো দেশকে নরকপুরিতে পরিনত করেছে। ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। সরকারের প্রতিপক্ষদের জীবন রাস্ট্রীয় নজরদারী-বন্দুকের নলের নীচে বন্দী। দুর্বিনীত দু:শাসনের করাল গ্রাসে দেশবাসী অজানা আশঙ্কায় আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে। বাইরের মতো কারাগারগুলোও পরিনত হয়েছে মৃত্যু উপত্যাকায়। কারাগারগুলোকে হিটলারের গ্যাস চেম্বারের মতো শেখ হাসিনার গ্যাস চেম্বারের পরিনত করা হয়েছে।দেশের ৬৮ টি কারাগার একেকটি টর্চার সেল। যেখানে প্রতি মূহুর্তে মৃত্যু আতংকে থাকেন রাজনৈতিক বন্দীরা। সেখানে গায়েবী মিথ্যা মামলায় সুস্থ সবল নেতাকর্মীদের ধরে নির্যাতন করে কারাগারে নিক্ষেপের পর লাশ বানিয়ে বের করা হচ্ছে। কারাগার থেকে বেরুচ্ছে লাশের সারি।আজ নিউএজ পত্রিকায় এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা-কর্মীসহ চলতি বছরে জেল হেফাজতে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে জেল হেফাজতে ৯৩ জন বন্দির মৃত্যু হয়েছে । যা - সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সর্বোচ্চ। গত বছর জেল হেফাজতে মৃত্যু হয় ৬৫ জনের।যাঁদের বেশীরভাগই বিএনপি নেতাকর্মীর।সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিরোধীদের বিরুদ্ধে চলমান ক্র্যাকডাউনের মধ্যে চলতি ডিসেম্বরে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।যাদের বেশিরভাগই বিএনপি নেতা-কর্মী। সম্প্রতি বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়,শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী সাম্প্রতিককালে ধরপাকড় চালিয়ে হাজার হাজার বিরোধী নেতা, কর্মী, সমর্থক দিয়ে বাংলাদেশের কারাগারগুলো ভরে ফেলেছে। কারাগারে তাঁরা অসুস্থ হচ্ছেন এবং ধুঁকে ধুঁকে সেখানে মরছেন। গত ৭ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রতিবেদনে কারা কর্তৃপক্ষের বয়ানে জানিয়েছে,সারাদেশের কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ। কারা অধিদপ্তরের ৫ নভেম্বরের হিসাবে, দেশে ৬৮টি কারাগারের বন্দী ধারণক্ষমতা ৪৩ হাজারের কম। তাতে রয়েছেন প্রায় ৮৮ হাজার বন্দী।
তবে এই হিসাবের পরে আরো হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে নিক্ষেপ করে লাখো বন্দীতে বিপর্যয়ের পরিস্থিতি সৃস্টি করা হয়েছে।এছাড়াও আয়নাঘরে কত শত সহস্র বন্দী আছে তার হিসাব নেই। জাতিসংঘ আটকে রাখার ‘গোপন স্থানের’ তালিকা চাইলেও দেয়নি! সত্যকে মিথ্যায় এবং মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শেখানো বুলি বলানোর জন্য বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে রিমান্ডে নিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হচ্ছে। পাশবিক নিপীড়ণ-নির্যাতনে কারাগারে বন্দী অসুস্থ বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়। হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের জীবন বাঁচানোর কোন চেষ্টা করা হয় না। নিষ্ঠুর দমনের বিভিষিকায় বাংলাদেশে বিরোধী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার অভিযান চালানোর অংশ হিসেবে কারাগারে বন্দী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। কেউ যাতে টু শব্দ করতে না পারে সেজন্য কারাগারের ভিতরে বাহিরে চলছে বিরোধী দলের সক্রিয় নেতাদের জীবন হরণে নানাবিধ অমানবিক আচরণ। কারাবন্দীদের নির্যাতন করা হচ্ছে অবর্ণনীয় পৈশাচিক কায়দায়।চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।অসুস্থ বন্দিকে হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে কারা হাসপাতালের ফেলে রাখা হচ্ছে। কারাগারের দম বন্ধ করা সেলে দিনরাত লকআপে রেখে গরু—ছাগলের খাবারের জন্য প্রযোজ্য অতি নিম্নমানের খাবার দিয়ে অসুস্থ বানিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। মৃত্যুর পর সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায় এড়ানোর জন্য গল্প সাজিয়ে মিথ্যাচার করছে।তবে জেল হেফাজতে মৃত্যু ও হত্যার দায় এড়াতে পারবে না শেখ হাসিনা এবং তার মাফিয়াচক্রের কারা কর্মকর্তারা। প্রতিটি মৃত্যু ও হত্যার জন্য তাদেরকে একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি বলেন, একতরফা পাতানো নির্বাচনী খরচ জোগাতে শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রী -এমপি-নেতারা সিন্ডিকেটের হাতে ছেড়ে দিয়েছে নিত্যপন্যের বাজার। বাজারে চলছে আওয়ামী অলিগার্কদের ডাকাতি। দুইদিন আগে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধের ঘোষনা দেয়ার পর ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়ছে পেয়াজের দাম। ১০০ টাকার পেঁয়াজ দুই দিনে প্রায় ৩০০ টাকায় তুলেছে।পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। সরকার সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের হাতে সব ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনী ক্যারিক্যাচার নিয়ে উন্মাদের মতো আচরন করছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা। তাদের সব শরিকরা চায় নৌকা। মুখে বলে অংশ গ্রহনমুলক নির্বাচন । কিন্তু সবইতো নৌকা। মাঝি একজনই। যত খুদ কুঁড়ো পার্টি এবং স্বতন্ত্র নির্বাচনের মুলো খেতে গেছে সব এক ছাতার নীচের বাসিন্দা। নামেই আলাদা।দেশে পেঁয়াজ রসুন ডাল চালের দাম নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। সেদিকে বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছে, সরকারের কোনো বিধিবিধানের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সরকার যদি নির্বাচিত হতো বা জনগনের ভোটের প্রয়োজন পড়তো তাহলে দলীয় ব্যবসায়ীদের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রন ছেড়ে দিতো না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ভারতের বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে দেশটির সরকার বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতেই পেঁয়াজ রফতানী বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।তারা ভোটারদের মনতুস্টির জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে। আর শেখ হাসিনা ভোট ডাকাতির নতুন ফন্দি আটা নিয়ে ব্যস্ত।শেখ হাসিনা মনে করছেন ভোটাররা গোল্লায় যাক আমার সোনার হরিন চাই। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সকল সাধারণ মানুষকে জিম্মি বানিয়ে রাখছে এনিয়ে তার কিছু আসে যায় না। আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ীদের কর্মকান্ডে এক নিরব দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিনাতিপাত করছে দেশের কোটি কোটি মানুষ। আর তাদের এহেন ডাকাতি কর্মকান্ডে নতুন করে দারিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে প্রায় ২ কোটি মানুষ।