সবজির সঙ্গে বেড়েছে ডিমের দামও

এই মূল্যবৃদ্ধি অতি দ্রুত ও উচ্চহারে ঘটে বলে তা সাধারণ মানুষকে বিচলিত করে। 

সবজির সঙ্গে বেড়েছে ডিমের দামও

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: টাস্কফোর্স কিংবা শিক্ষার্থীদের নজর ভেদ করে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে হইচই শুরু হলেও প্রতিকার মেলেনি সাধারণ মানুষের। বছর বছর একই ঘটনা। দেশে শীতের সময়ও সবজির দাম সাধ্যের বাইরে চলে যায়। আবার শীত পেরোলে গ্রীষ্মকালে আরও বাড়ে সবজির দাম। বর্ষায়ও বাজারে আগুন থাকে। এখন সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধি অতি দ্রুত ও উচ্চহারে ঘটে বলে তা সাধারণ মানুষকে বিচলিত করে। 

বাজারে সমান্তরালভাবে চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, মসলাসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বছরভর বেড়ে চলে। একটু একটু করে এমনভাবে তা বাড়ানো হয় যে নজরে আসে না। বিক্রেতারা কৌশলে দাম বাড়াতে থাকে। ফলে এক বছরেই ভোজ্যসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি।

সাধারণ মানুষ বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো সফলতা নেই। হোক রাজনৈতিক সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অতিরিক্ত খরচে নাভিশ্বাস উঠলেও মানুষ এই জুলুম মেনে নিতে বাধ্য হয়। মূল্যবৃদ্ধির এ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে দেশে সংঘবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার ঐতিহ্য বহুকাল আগেই বিলীন। মূল্যবৃদ্ধি রোধে কখনো কখনো অভিযান-জরিমানা হলেও কাজের কাজ কিছু হয় না।

শুক্রবারও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণ দেখানো হচ্ছে বৃষ্টি, বন্যা, যানবাহন খরচ প্রভৃতি। অপরদিকে সরবরাহ সংকটের দোহাই দিয়ে ডজনে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। অজুহাত, অনেক জায়গায় মুরগির খামার পানিতে তলিয়ে গেছে, মরে গেছে মুরগি। 

শুক্রবার সকালে মতিঝিল কলোনি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়েই বেশি দামে কেনাকাটা করছেন। শাহজাহানপুর থেকে আসা কামরুন নাহার হীরা নামের এক ক্রেতা বলেন, সবজির দাম কী করে এত বাড়ে। বাজার নিয়ন্ত্রণে কেউ সফল হয় না। সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট কেউই বুঝে না। কলার হালি ৫০ টাকা কী করে হয়। ডিমের ডজন ১৫০ টাকা বিক্রি হলেও শুক্রবার তা বিক্রি হয়েছে ১৫৫ টাকার ওপরে। 

বিক্রেতাদের ভাষ্য, তাদের বেশি দামে সবজিসহ খাদ্যদ্রব্য কিনতে হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০, করলা ৮০, বেগুন ১০০-১২০, ঢ্যাঁড়শ ৬০ থেকে ৬৫, কাকরোল ৮০ থেকে ৯০, শসা ৪০, পটোল ৫০, গাজর ও টমেটো ১৫০ থেকে ১৬০ এবং লাউ প্রকারভেদে ৮০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। শাকের দাম আঁটি ৩০ টাকার নিচে নেই। 

এদিকে ডিমের ডজন মাসখানেক আগে ১৪৫ টাকায় স্থির থাকলেও বন্যার অজুহাতে শুক্রবার বেড়ে হয়েছে ১৫৫ টাকার বেশি। তাছাড়া এখনো স্বস্তি আসেনি চালের বাজারে। সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, আগের সরকারের আমলে তৈরি হওয়া সিন্ডিকেট আর কারসাজি বন্ধ না করতে পারলে দাম বাড়বেই। 

রাজধানীর মধ্য রামপুরা বাজারে কথা হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আনিসুল মিয়ার সঙ্গে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বললেন, যাদের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আছে, তাদের জন্য মূল্যবৃদ্ধি কিছুই না। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য মূল্যবৃদ্ধি মানেই খাবার কমিয়ে দেওয়া। পুষ্টিহীনতায় থাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিক্রেতা বলেন, অনেকেই নিজে গ্রামাঞ্চলের হাটবাজার থেকে তরিতরকারি রাজধানীতে সরবরাহ করেন। সবজি কেনার সময় একাধিক সমিতি বা কমিটিকে চাঁদা দিতে হয়। রাস্তা ঘেঁষে কিংবা ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করলেও চাঁদা দিতে হয়। বিক্রেতারা বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে শুরু করে আইনরক্ষক- সবাইকে খুশি না করে রাস্তায় কিংবা মহল্লায় সবজি বিক্রি করা সম্ভব নয়।