সিইসির সঙ্গে বৈঠকে রানা দাশগুপ্ত : সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় মামলা নেয় কিন্তু বিচার হয় না

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে রানা দাশগুপ্ত : সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় মামলা নেয় কিন্তু বিচার হয় না

প্রথম নিউজ, ঢাকা : হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার পর অতীতে মামলা নেওয়া হতো, তদন্তও হতো। কিন্তু এখন মামলা নেয় কিন্তু বিচার হয় না। সরকারি দলের সঙ্গে যারা যুক্ত থাকে, তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয় না। এজন্য আমরা পূজা ও আগামী সংসদ নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ওপর সংঘাতের আশঙ্কা করছি।

বুধবার (১১ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে সংগঠনটির পক্ষ থেকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা সহিংসতার আশঙ্কা করে সিইসির কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায় পরিষদ।  

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ প্রকাশ করছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, নির্বাচনে আমরা সবাই মিলে ভোট দিতে চাই। কিন্তু নির্বাচনের যেই পরিবেশ, সেই হিসেবে আমরা সহিংসতামূলক নির্বাচন চাই না। নির্বাচনি প্রচারণায় যেই সাম্প্রদায়িকতা ব্যবহার করা হয়, আমরা তার অবসান চাই। এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক গুজব ছড়নো হয় এবং ভোটের পরিবেশ নষ্ট করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, এই অপচেষ্টা আমাদের কারো জন্য শুভকর কিছু বয়ে আনবে না। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই। অতীতে নির্বাচনের আগে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি কিন্তু এই আশ্বাস সবসময়ই আমাদের আসের মধ্যেই থাকতো। আমরা কখনও আশ্বস্ত হতে পারি নাই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের  আশ্বস্ত করেছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন। অতীতের যেই অভিজ্ঞতা সেটা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে সিইসি বলেছেন, এগুলো আমাদের নীতিমালাতে আছে। কিন্তু আমরা বলেছি, আইন আছে কেতাবে। আইনের প্রয়োগটা একটু কম হয়। আমরা আইনের প্রয়োগটা চাই। আমরা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। যেখানে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ইস্যু নয়। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব, আমরা সেই শ্লোগানে বিশ্বাস করি।’

সহিংসতার আলামত পাচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে ইতোমধ্যেই বিগ্রহ ভাংচুর, মন্দিরে হামলার মধ্য দিয়েই আমরা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শুরু হতে দেখেছি। যেহেতু নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের হাতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হবে, সেহেতু আপাদেরকেই সাম্প্রদায়িক বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কমিশনকে আইনের যা কিছু আছে, সেগুলো আক্ষরিক অর্থে ব্যবহার করার জন্য বলেছি।’

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা অতীতে আশা করেছিলাম আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি হবে না। কিন্তু ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যখন দেলোয়ার হোসেন সাঈদির বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলো, তারপর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আমরা নির্বিচারে গোটা বাংলাদেশে আবারও সেইসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। এখানে তফাতটা হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রের সঙ্গে সহিংসতার সম্পর্ক নাই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির যৌথ মেলবন্ধনে ২০১১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ঘটনাগুলো ঘটেছে।’

তিনি বলেন, ‘অতীতে এসব হামলার মামলা নেওয়া হতো, তদন্ত হতো। কিন্তু এখন মামলা নেয় কিন্তু বিচার হয় না। সরকারি দলের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয় না। আমরা সংঘাতের আশঙ্কা করেছি বলে আজ এখানে এসেছি। আমরা রাজনৈতিক নেতাদের উপর আস্থা রাখতে পারছি না। আপনারা লক্ষ্য করবেন ওই কুমিল্লার বাহার তিনি সেখানে দুর্গাপূজা সামনে রেখে বললেন, এটা নাকি মদভক্তি পূজা এবং তিনি এটাও বলেছেন, মদ যদি দেওয়া বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পূজা পড়ে যাবে। এর আগে মুন্সিগঞ্জের মেয়র আওয়ামী লীগ দলের প্রার্থী ছিলেন। তিনি এমপি মৃণাল দাশকে গালি দিয়েছেন। অতএব আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে কম-বেশি ক্রিয়াশীল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে যদি রাজনৈতিক দলগুলো একটা সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করতো, যেটা অতীতে হয়েছে। আজ পর্যন্ত দলগুলোর মধ্যে কোনরকম সমঝোতার আলামত দেখতে পাচ্ছি না। যদি সমঝোতা হতো তাহলে আমরা তাদেরকে বলতে পারতাম নির্বাচনি সহিংসতা বন্ধে আপনারা রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে আপনাদের ভূমিকা পালন করুন। দলগুলো আমাদেরকে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করে। তারা মনে করে, এরা ভোট দিতে এলেই বিপদ, আবার কেউ মনে করে এরা ভোট না দিয়ে যাবে কোথায়।’ 

অন্যান্যবারের চেয়ে এবার নির্বাচনি সহিংসতা বেশি হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।