শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়েও নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি, ব্যয় বেড়েছে ১৮৭ শতাংশ
যুদ্ধে ৩০ লাখ বাংলাদেশির সঙ্গে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর অনেক সদস্য শহীদ হন। ভারতের দাপ্তরিক হিসেবে শহীদ ভারতীয় সেনার সংখ্যা ২ হাজারের কম হলেও ২০১১ সালের এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সম্প্রচার মাধ্যম এনডিটিভি ৩ হাজার ৯০০ সেনা নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছিল। তবে বাংলাদেশের কাছে তালিকাভুক্ত রয়েছে ভারতের এক হাজার ৬০০ শহীদ সেনার নাম।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্মুখ সমরে অংশ নেন ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যরা। যুদ্ধে ৩০ লাখ বাংলাদেশির সঙ্গে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর অনেক সদস্য শহীদ হন। ভারতের দাপ্তরিক হিসেবে শহীদ ভারতীয় সেনার সংখ্যা ২ হাজারের কম হলেও ২০১১ সালের এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সম্প্রচার মাধ্যম এনডিটিভি ৩ হাজার ৯০০ সেনা নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছিল। তবে বাংলাদেশের কাছে তালিকাভুক্ত রয়েছে ভারতের এক হাজার ৬০০ শহীদ সেনার নাম। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় এসব সেনাকে সম্মান জানাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। একই সঙ্গে তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব, নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে না পারাসহ নানা জটিলতায় পিছিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন। এমনকি নির্ধারিত দুই মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শুরু হলেও বেড়েছে প্রকল্পের খরচ।
মিত্রবাহিনীর শহীদ সদস্যদের স্মরণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরপুর ও বাসুতারা মৌজায় এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের জুনে। তবে ওই মেয়াদে কাজ শুরুই হয়নি। এরপর দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। তবে বাস্তবে প্রকল্পের কোনো কাজ এখনো দৃশ্যমান হয়নি। যদিও এরই মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১৮৭ শতাংশ এবং মেয়াদ বেড়েছে তিন বছর। প্রকল্পের জন্য বাহাদুরপুর ও বাসুতারা মৌজায় ৩ দশমিক ৬৯ একর ভূমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। অথচ বর্তমানে ওই স্থান পানিতে ডুবে আছে। এ অবস্থায় বর্ষা মৌসুমে নির্মাণকাজ শুরু করাও সম্ভব নয়।
জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০১৯ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন করা হয়। এই মেয়াদে প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি। দ্বিতীয় ধাপে জুন ২০২০ নাগাদ মেয়াদ বাড়ানো হলেও বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়নি। এ অবস্থায় নতুন করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। জানা যায়, ফিজিবিলিটি স্টাডি না করেই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। নিয়মিত প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না পাওয়া, প্রকল্পে কেনাকাটা সঠিকভাবে না হওয়া- এর বাস্তবায়নে অন্যতম সমস্যা। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়েও নির্ধারিত বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
‘মুক্তিযুদ্ধকালে মিত্রবাহিনীর শহীদ সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ’ চলমান প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে সরকারের একমাত্র প্রকল্প তদারকি প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সংস্থাটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তবে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০১৯ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন করা হয়। এই মেয়াদে প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি। দ্বিতীয় ধাপে জুন ২০২০ নাগাদ মেয়াদ বাড়ানো হলেও বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়নি। এ অবস্থায় নতুন করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। ফলে দুই বছরে প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা ঠেকেছে ছয় বছরে। এতে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৬ কোটি ৩০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এরপর প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৪৫ কোটি ২০ লাখ ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর আবারও প্রকল্পটি সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ কোটি ৮০ লাখ ২৩ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ১৮৭ শতাংশ। মেয়াদ বেড়েছে চার বছর।
প্রকল্পটির ভৌত অবকাঠামোর দৃশ্যমান কোনো কাজ শুরু হয়নি। এমনকি জমি হস্তান্তরের ৮ মাস পার হলেও সীমানা প্রাচীর ও মাটি ভরাটের কাজ এখনো শেষ হয়নি। প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত স্থান এখন পানিতে ডুবে আছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হবে না।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা প্রকল্প অনুমোদন করি। এটা দেখভাল করেন প্রকল্প পরিচালক। একজন প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশে ঠিকাদার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। ঠিকাদার ১০ ইটের পরিবর্তে ৮টি দিলে আমাদের ধরতে কষ্ট হয়। আমরা স্বীকার করছি অনেক কিছু এখনো বাস্তবায়ন করতে পারি না। প্রকল্প পরিচালকরা প্রকল্প এলাকায় থাকেন না, একজন পরিচালক একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে আছেন। আমরা এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছি। প্রকল্প পরিচালককে প্রকল্প এলাকায় থাকতে হবে। একজন পরিচালকের অধীনে একটি প্রকল্প থাকতে হবে। এটা বাস্তবায়িত হলে এই প্রকল্পে সমস্যা হতো না।
আইএমইডির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান। ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন) গ্রহণের সময় ২০১৪ সালের শিডিউল অব রেটস অনুযায়ী গণপূর্ত অধিদপ্তর প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করে। পরে জমি অধিগ্রহণরের সময় জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করেন। এরপর আরবিট্রেশন কোর্ট জমির মূল্য ৪ কোটি টাকার সঙ্গে অতিরিক্তি এক কোটি ৬০ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে আদেশ দেন। ফলে বিশেষ সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে ৪৬ কোটি ৮০ লাখ ২৩ হাজার টাকা অনুমোদন করা হয়, যা মূল প্রকল্পের তুলনায় ১৮৭ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, স্থান নির্বাচন ও জমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে যথাসময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া নিয়মিত প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না করায় প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি প্রকল্পের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ২০২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে এ সময়ে কাজের বাস্তব অগ্রগতি এক শতাংশও হয়নি। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, স্থান নির্বাচন ও জমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে যথাসময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া নিয়মিত প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না করায় প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি প্রকল্পের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
প্রকল্পের সবল ও দুর্বল দিক চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান, বরাদ্দ ও ছাড়, যথেষ্ট জনবলের সংস্থান রাখা ও স্মৃতিস্তম্ভের সঙ্গে জাদুঘর রাখা এই প্রকল্পের সবল দিক। আর দুর্বল দিকগুলো হলো- ফিজিবিলিটি স্টাডি না হওয়া, নিয়মিত প্রকল্প পরিচালক না থাকা, ক্রয় কার্যক্রম পরিকল্পনা মাফিক না হওয়া ও প্রকল্প লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নির্মাণকাজ শুরু করতে না পারা। তবে বর্তমানে এই প্রকল্পের অন্যতম ঝুঁকি হলো নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি।
এ বিষয়ে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে আইএমইডি। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্প যথাসময়ে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাসিক সভায় নিয়মিত প্রকল্পের অগ্রগতি মনিটরিং করতে হবে। পরিপত্র অনুযায়ী পিআইসি ও পিএসসি সভা করতে হবে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত-সুপারিশ বাস্তবায়ন আবশ্যক। অতিরিক্ত দায়িত্বের বদলে নিয়মিত প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করে ক্রয় কার্যক্রম শিডিউল পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পন্ন করতে হবে। এ জাতীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন ও জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেই প্রকল্প অনুমোদন করার কথাও বলা হয়েছে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, প্রকল্পের আওতায় ১৮টি প্যাকেজ রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি প্যাকেজে পণ্য ক্রয় বাবদ ৪ কোটি ৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকার প্রাক্কলনের বিপরীতে ২০১৮ সালের ৬ জুন ৯ লাখ ৭১ হাজার টাকায় তিনটি প্যাকেজে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও আসবাবপত্র কেনা হয়। চারটি পূর্ত কার্য প্যাকেজে ৩৪ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা প্রাক্কলনের বিপরীতে একটি প্যাকেজে ৩৪ কোটি ২০ লাখ ৭ হাজার টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। চলতি বছরের ২২ মে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি সম্পাদন হয়েছে। দুটি সেবা প্যাকেজ বাবদ মোট ৮১ লাখ টাকা প্রাক্কলনের বিপরীতে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দুজন কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে। একই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি প্যাকেজে যানবাহন (চুক্তিভিত্তিক) ভাড়া নেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৫৩ লাখ টাকা।
এদিকে সরেজমিন পরিদর্শনে আইএমইডি দেখতে পায়, প্রকল্পটির ভৌত অবকাঠামোর দৃশ্যমান কোনো কাজ শুরু হয়নি। এমনকি জমি হস্তান্তরের ৮ মাস পার হলেও সীমানা প্রাচীর ও মাটি ভরাটের কাজ এখনো শেষ হয়নি। প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত স্থান এখন পানিতে ডুবে আছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হবে না।
পরিপত্র অনুসারে প্রতি তিন মাস অন্তর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা আয়োজনের বিধান রয়েছে। সে হিসেবে ন্যূনতম ২০টি পিআইসি ও পিএসসি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও উভয় ক্ষেত্রে মাত্র দুটি করে সভা হয়েছে। প্রকল্পের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চারজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ পেয়েছেন। তারা সবাই অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এ দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাত্র দুজন কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। এ প্রকল্পে নিয়মিত কোনো প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয়নি। তবে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব অতিরিক্ত হলেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হলে যথাসময়ে নির্মাণকাজ শুরু করা যেত। কিন্তু এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এই প্রকল্পে কিছুদিন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. দুলাল কৃষ্ণ রায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছুদিন প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলাম। এখন আর নেই। তাই প্রকল্পের বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। আমি কিছুদিন এখানে কাজ করেছি। বর্তমানে এ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে আছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। আইএমইডির প্রতিবেদনের বিষয়ে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। পাইলিংসহ আনুষঙ্গিক কাজও শুরু করেছি।
প্রকল্পের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসে সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা। একই সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন একজন বুদ্ধিদীপ্ত পরিচালনাকারী। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এবং তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। যুদ্ধকালীন স্বাধীনতাকামী, নির্যাতিত ও নিপীড়িত শরণার্থীদের ভারত সরকার এবং ভারতীয় জনগণ আশ্রয় দেয়। এছাড়াও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ আমরা ভুলতে পারি না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে ভারত সরকার ও ভারতীয় নাগরিকদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের অবদান উল্লেখ ছাড়া স্বাধীনতার ইতিহাস অসম্পূর্ণ। যুদ্ধের সময়ে ভারত যেভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে তা এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার বিশেষ করে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদান অবিস্মরণীয়। বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য ইন্দিরা গান্ধী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। অন্তত এক কোটি অসহায় নারী-পুরুষ ও শিশু নিজ দেশ ত্যাগ করে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে (পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, বিহার ও উত্তর প্রদেশে) শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। ভারত সরকার ও তাদের জনগণ এসব শরণার্থীকে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করে। শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যই নয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করতে ইন্দিরা গান্ধী বিভিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় শহীদ হন। যাদের বেশিরভাগ শহীদ হন আশুগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন সম্মুখ সমরে। ওই উপজেলার এক স্থানে ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর চার সেনা কর্মকর্তাসহ তিন শতাধিক সেনা শহীদ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর শহীদ সদস্যদের জীবন উৎসর্গের বিষয়টি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে ওই স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত সরকার ও ভারতের নাগরিকদের অবদান প্রতিষ্ঠা এবং স্মরণীয় করে রাখাই এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। ভারতীয় সেনাদের রক্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে। ভারতের অবদান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং লাল সবুজ পতাকা প্রাপ্তির জন্য মিত্রবাহিনীর যেসব সৈন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও চিরস্মরণীয় করে রাখাই এ প্রকল্পে মুখ্য উদ্দেশ্য।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews