রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: মিয়ানমারের সাথে আলোচনা বন্ধ, জাতিসংঘে বিষয়টি আবার তুলবে বাংলাদেশ

সোমবার রমনার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যেকার বৈঠক থেকে ওই সফর স্থগিত করা হয় বলে দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: মিয়ানমারের সাথে আলোচনা বন্ধ, জাতিসংঘে বিষয়টি আবার তুলবে বাংলাদেশ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ফের ঝুলে গেল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন! আপাতত স্থগিত করা হয়েছে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের প্রস্তাবিত কক্সবাজার সফর। সোমবার রমনার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যেকার বৈঠক থেকে ওই সফর স্থগিত করা হয় বলে দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি দূর করতে আগামী ১৫ই মে বা তার কাছাকাছি সময়ে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের কক্সবাজার সফরের কথা ছিল। কূটনৈতিক সূত্রে ভিন্ন খবর চাউর হলেও সেগুনবাগিচার তরফে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাত হানার আশঙ্কায় আপাতত সফরটি হচ্ছে না। সফর স্থগিত করার কারণে চীনের মধ্যস্থতায় কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার ত্রিদেশীয় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তমতে চলতি মাসে ফিজিক্যালি প্রত্যাবাসন শুরুর যে পরিকল্পনা ছিল, সেটিও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। সূত্র মতে, প্রত্যাবাসন নিয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কূটনৈতিক জোনে সিরিজ বৈঠক হয়েছে। 

এ নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের অবস্থান জানাতে সরকারের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে রোববার মধ্যাহ্নে বৈঠক করেন জাতিসংঘে শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ জোহানেস ভ্যান ডের ক্লাউ। সেখানে তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকারের বাস্তবায়ন চান। সেই সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার আরও ঘনিষ্ঠতা চান তিনি। সেগুনবাগিচায় সেই বৈঠক থেকে ফিরে পূর্ব ও পশ্চিমের ৬ রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী এবং ইউএসএআইডি’র মিশন প্রধানকে নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন ইউএনএইচসিআর এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ। তার গুলশান অফিসে অনুষ্ঠিত হাই-টি কাম পর্যালোচনা বৈঠকে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনরি, ভারপ্রাপ্ত বৃটিশ হাইকমিশনার ম্যাট কার্নেল, তুরস্কের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত রামিস সেন, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার আমন্ত্রিত ছিলেন। 

একটি সূত্র জানিয়েছে, সেখানে ফ্রান্সের ডেপুটি চিফ অব মিশনও অংশ নিয়েছিলেন। কূটনৈতিক পল্লীর সেই বৈঠকে নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার অধিকার বাস্তবায়নসহ রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। প্রত্যাবাসন প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাওয়া, রাখাইন সরজমিন ঘুরে আসার পর রোহিঙ্গাদের আচমকা বেঁকে বসা এবং কক্সবাজারে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের প্রস্তাবিত সফরের সুবিধাজনক সময়ক্ষণ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে সোমবার ঢাকাস্থ চীন ও মিয়ানমার দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের মধ্যে এক রুদ্ধদার বৈঠক হয়। সেখানে গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা এবং বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয় বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। যার অনেক কিছু তাৎক্ষণিক জানা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, চীনের মধ্যস্থতায় নীরবে এগিয়ে চলছিলো এবারের প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা।

তৃতীয় দফায় গৃহীত ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত শুক্রবার ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল রাখাইনের বিভিন্ন এলাকা সরজমিন ঘুরে দেখেছে। পরিকল্পনা মতে, চলতি বছরের মধ্যে ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরানোর বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ষা শুরুর আগেই ফেরত পাঠানোর টার্গেট নেয়া হয়েছে ১১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে। রোহিঙ্গাদের আস্থায় রেখেই প্রত্যাবাসন কর্ম এগিয়ে নিতে চায় দুই দেশ।