রিক্রুটিং এজেন্সি ইস্যুতে ঝুলে আছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠাতে গত ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ।

রিক্রুটিং এজেন্সি ইস্যুতে ঝুলে আছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ ডেস্ক: মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ইস্যুতে দুই দেশের মন্ত্রী (বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া) যার যার অবস্থান থেকে অনড় রয়েছেন। দুই দেশের এই অবস্থানের কারণে কবে নাগাদ কর্মী পাঠানোর দ্বার উন্মোচন হবে সে বিষয়ে চিন্তায় রয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ সীমিত সংখ্যক বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্টের (বিআরএ) মাধ্যমে বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়োগ দিতে চায়। তবে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সব বৈধ সংস্থাকে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দিতে চায়। দুই দেশের আলাদা এ নীতির কারণে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও স্থগিত রয়েছে।

মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব দিয়ে ডাম্পিং গ্রাউন্ড করা যাবে না। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমরা সিন্ডিকেটের পক্ষেও না, বিপক্ষেও না, কর্মী পাঠানোর পক্ষে। একই সঙ্গে মালয়েশিয়ায় বিদেশি চাকরিপ্রার্থীদের মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসন নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠাতে গত ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ। এরপর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি এক চিঠির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান জানান, বাংলাদেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করা হবে না। ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আরও ২৫০টি এজেন্সি সহযোগী হিসেবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে।

এই প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে ১৮ জনুয়ারি পাল্টা চিঠি দেন বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এক মাস পর ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদ মন্ত্রীকে। সেই চিঠিতে রিক্রুটিং এজেন্সি সংখ্যা নির্বাচনে স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল পদ্ধতি এবং দু’দেশের অনলাইন পদ্ধতি যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর জন্য একটি যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠক আহ্বান করতে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। যদিও এর কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি মালয়েশিয়া।

উল্টো ১০ মার্চ মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান প্রকাশ্যে জানিয়ে দিলেন, সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করবে না মালয়েশিয়া। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দেশে কয়েক হাজার এজেন্সি আছে। সবাইকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিয়ে মালয়েশিয়ায় ডাম্পিং গ্রাউন্ড করতে চাই না। জোর করে শ্রমে বাধ্য করার অভিযোগের বিষয়ে গত ১০ মার্চ দেশটির বিভিন্ন সংস্থা, বিদেশি প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। এই মতবিনিময়ে নানা বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন এম সারাভানান। তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত করতে চাই যে, আমরা শ্রমিকদের জোর করে অতিরিক্ত কাজে বাধ্য করার বিরুদ্ধে লড়াই করছি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আমার সহকর্মীদের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি যে, এজেন্সি দ্বারা সোর্স কান্ট্রিতে কর্মীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এ কারণেই আমি বিদেশি কর্মী আনতে এজেন্সি সীমিত করেছি।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দেশে কয়েক হাজার এজেন্সি আছে। আমি সবাইকে কর্মী আনতে দিতে পারি না। আমি এখানে ডাম্পিং গ্রাউন্ড করতে চাই না। এম সারাভানান বলেন, আমি যখন এজেন্সিগুলো সীমিত করেছি, তখন কেউ কেউ বলেন কেন সীমিত করতে হবে? অনেকে বলেন, আপনি কেন নিয়ন্ত্রণ করছেন? আপনি যতক্ষণ আমার স্থানে না আসবেন, ততক্ষণ বিষয়টি বুঝবেন না। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী বলেন, আমি সারা বিশ্বে আমার সহকর্মীদের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে আমাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা সঠিক পথেই আছি। আর সোর্স কান্ট্রির কারণে যেন কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং এখানে শিল্প কারখানাতেও যেনো কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা নিশ্চিত করা হবে।

এদিকে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আমরা আমাদের অভিবাসীদের পাঠাতে প্রস্তুত। কিন্তু বাংলাদেশ এমন কোনো সিন্ডিকেটকে অনুমতি দেবে না, যা আবার বাজার কারসাজি করতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। তারা যদি লোক নিয়োগ করতে চায়, আমরা অন্যান্য কর্মী প্রেরণকারী দেশগুলির নীতি অনুসরণ করবো। এ বিষয়ে বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, এমওইউ কার্যকর করার জন্য এসওপি চূড়ান্ত করার পরই বাজার খোলা যাবে। কিন্তু, দুই সরকার এখনও এসওপি চূড়ান্ত করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সিন্ডিকেট বিপুল পরিমাণ অর্থ পকেটস্থ করার জন্য ২৫টি এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়োগের জন্য মালয়েশিয়া সরকারকে প্রভাবিত করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

আলী হায়দার চৌধুরী আরও বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে বাজার পুনরায় চালু করতে আমাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে গতবার মালয়েশিয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ চাকরি পেতে ব্যর্থ হয়। হাজার হাজার মানুষ এখনো তাদের টাকা ফেরত পাননি। এদিকে মালয়েশিয়ায় ‘সি’ ক্যাটাগরির অধীনে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৫০১টি কর্মসংস্থান সংস্থা বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে সেবা প্রদান করতে পারবে। ১৭ মার্চ এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী জানান, মালয়েশিয়ায় উৎপাদন, বৃক্ষরোপন, পরিষেবা, নির্মাণ ও কৃষিতে কর্মী নিয়োগ করা হবে। এখন পর্যন্ত এসব সেক্টরে নিয়োগকারীদের কাছ থেকে তিন লাখ ১৩ হাজার ১৪ জন বিদেশি কর্মীর আবেদন জমা পড়েছে, যা বর্তমানে পর্যায়ক্রমে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এ পর্যন্ত বিদেশি কর্মীদের আবেদন জমা পড়েছে উৎপাদন খাতে এক লাখ ৯৩ হাজার ৩৪৬ জন, পরিষেবা খাতে ৪৮ হাজার ১১৯ জন, বৃক্ষরোপন খাতে ৩৬ হাজার ৯৫০ জন, নির্মাণ খাতে ২৭ হাজার ৩৩১ জন, কৃষি খাতে সাত হাজার ২৪৮ জন এবং খনি ও খনন খাতে ২০ জন। এছাড়া যদি কোনো বেসরকারি কর্মসংস্থান সংস্থা বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদনপত্রের এই নিয়মের অপব্যবহার করে তাহলে ০৩-৮৮৮৬ ৫১৯২ এই নম্বরে দেশটির জনশক্তি বিভাগে জানানোর অনুরোধ করেন এম সারাভানান।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom