মেহেরপুরে অগভীর নলকূপে পানি সংকট 

ভুগর্ভস্থ থেকে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক অগভীর নলকূপ প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। পরিবারের পানির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই।

মেহেরপুরে অগভীর নলকূপে পানি সংকট 

প্রথম নিউজ, মেহেরপুর: ভরা বর্ষা মৌসুমেও দেখা মিলছে না পর্যাপ্ত বৃষ্টির। দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টি, তীব্র তাপ প্রবাহের ফলে পানি স্বল্পতা দেখা দিয়েছে মেহেরপুরের বেশ কয়েকটি গ্রামে। ভুগর্ভস্থ থেকে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক অগভীর নলকূপ প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। পরিবারের পানির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই।

বিভিন্ন পাড়া মহল্লার মসজিদে গভীর নলকূপে পানি নেওয়ার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন গৃহিণীরা। কৃষকরাও মাঠের ফসলে সেচ দিতে গিয়ে ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না সেচ পাম্পগুলোতে। ফলে জ্বালানি খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ। পানি স্বল্পতার কারণে দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে হতাশা। তবে ৫০০ থেকে ৬০০ ফুট গভীরে পাইপ বসানোর পরামর্শ দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিভাগ।  

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার জয়পুর, রাজাপুর, তারানগর, আমদাহ, বিশ্বনাথপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাড়িতে বসানো টিউবওয়েলে ও মাঠের সেচ পাম্পে দেখা দিয়েছে পানির স্বল্পতা। অনেক টিউবওয়েল চেপেও পানি উঠছে না। পরিবারের পানির চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে স্থানীয় মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গভীর নলকূপ থেকে। সকাল ও সন্ধ্যা হলেই ওই সব গণজমায়েত স্থানগুলোতে গৃহিণী ও গৃহবধূদের ভিড় জমতে দেখা গেছে। শুধু মুজিবনগর নয়, এমন পানির সংকট দেখা দিয়েছে গাংনী উপজেলার আমতৈল, মানিকদিয়া ও জুগিরগোফা গ্রামেও। বিভিন্ন মাঠে ফসলে সেচ দিতে গিয়েও ডিজেলচালিত স্যালো ইঞ্জিনগুলোতেও পানি উঠছে না। ফলে কৃষকদের জ্বালানি খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ।

জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে ৯ হাজার ৯১৩টি। তার মধ্যে বিভিন্ন কারণে ২ হাজার ২৩৯টি অকেজো রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী আরও ৫০০টি গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে জনস্বাস্থ্য বিভাগের। জুগিরগোফা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী বলেন, আমার বাড়ির টিউবয়েলে এক মাস যাবত পানি উঠছে না। অনেক চাপাচাপি করে সামান্য পরিমাণে পানি পাওয়া যায়। পাম্পেও অনেক সময় পানি পাচ্ছি না। ভোর হলে কিছুটা পানি পাওয়া যায়। পানির চাহিদা পূরণের জন্য বাড়ির মহিলারা পানি সংরক্ষণ করে রাখা শুরু করেছে।

শহড়াবাড়িয়া গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, আমি একটি টিউবওয়েলে স্থাপনের চেষ্টা করেছিলাম। ৩০০ ফুট পাইপ বসানোর পরেও পানি পাওয়া যায়নি। পরে ৫০০ ফুট দেওয়ার পর কিছুটা পানি পেয়েছি। অমতৈল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় দুই মাস যাবত আমাদের বাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। সূর্য ওঠার আগে সামান্য পানি পাওয়া গেলেও দুপুরের দিকে পানি থাকছে না টিউবওয়েলে। বৈদ্যতিক লোডশেডিংয়ের ফলে ডিজেলচালিত স্যালোইঞ্জিন দিয়ে ফসলে সেচ দেওয়ার জন্যও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। যে পরিমাণ পানি উঠছে তাতে দ্বিগুণ ডিজেল ও দ্বিগুণ সময় লাগছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগের কাছে গেলেও এর সুরাহা হচ্ছে না।

জয়পুর গ্রামের গৃহিণী জরিনা খাতুন বলেন, বাড়িতে যে টিউবওয়েলে বসানো আছে সেই টিউবওয়েলে পানি না পাওয়ায় গ্রামের মসজিদ থেকে পাইপ নিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। মসজিদের পানির জন্য লাইন নিতে হয় অনেক সময়। আবার অতিরিক্ত বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ না থাকলে মসজিদেরে ট্যাপেও পানি থাকছে না। কয়েকমাস ধরেই এ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।

রাজাপুর গ্রামের গৃহবধূ জোসনা খাতুন বলেন, পানি স্বল্পতার কষ্ট কি বলব। কোথায় বলব? আপনারা লিখেই বা আমাদের লাভ কি? বাড়ির টিউবওয়েল প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। পরিবারের লোকজনের পানির চাহিদা মেটাতে মধ্যরাতে পানি নিয়ে রাখি। কালিগাংনী ভিটাপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের গ্রামে একমাস যাবত টিউবওয়েল চেপে পানি না পাওয়ায় গ্রামের মাঝে স্থাপিত বিশুদ্ধ আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহ করার জন্য বিএটি একটি পানির প্লান্ট স্থাপন করে দিয়েছে। গ্রামের সকলেই সেখান থেকে পানি সরবরাহ করছেন। তবে আগের তুলনায় এখন পানি অনেক কম উঠছে।

ভাটপাড়া গ্রামের কৃষক শাওন বলেন, আমার স্যালো মেশিনে এক লিাটার ডিজেলে প্রায় দেড় ঘণ্টা পানি তোলা যেত। এখন পানি উঠছে খুবই অল্প। এক লিটার ডিজেলে এক ঘণ্টারও কম সময় মেশিন চলছে। এতে সময় ও খরচ পড়ছে প্রায় দ্বিগুণ। মেহেরপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মসলেহ উদ্দীন বলেন, মেহেরপুর জেলায় এবছর অনাবৃষ্টি। দীর্ঘদিন পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া এবং তীব্র তাপপ্রহাবে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নীচে নেমেছে তাই অনেক টিউবওয়েলে পানির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। তবে অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট গভীরে টিউবওয়েলে পাইপ স্থাপন করা হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। তাছাড়া পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলেও এ সমস্যা নিরসন হবে বলে জানান তিনি।